ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পরকীয়া প্রেমের ভয়াল দশা; জুড়ীতে প্রেমিক ও দুলাভাইয়ের হাতে প্রেমিকা খুন

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে ক্লু-লেস একটি মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার (২৬) কে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগে তিন মাস পর  প্রেমিক লালনপাশী (২৩) ও ভিকটিমের দুলাভাই উজির মিয়া (৪২)  কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর হত্যার  সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

অভিযুক্তদের শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার (২৬) গতবছরের  ২৭ অক্টোবর  বিকালে  বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলে  বের হয়ে আর বাড়ী ফিরেনি। মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় তার বাবাসহ পরিবার নানা জায়গায় তাকে খোঁজতে থাকে।

পরে নিখোঁজের ৩ দিন পর ২৯ অক্টোবর বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃ সীমান্তবর্তী তালগাং নামক নদীর পানির স্রোত দিয়ে একটি নারীর লাশ ভেসে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশকে খবর দিলে থানার  অফিসার ইনচার্জ মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে থানার এসআই খাইরুল ইসলাম বাদল লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ  মর্গে প্রেরণ করে। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম ওসি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিকটিম শাহানার মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে প্রেমিক লালনপাশী ও শাহানার দুলাভাই উজির মিয়া হত্যার সাথে  জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা শাহানা কে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃ সীমান্তবর্তী তালগাং নামক নদীর পানিতে ডুবিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে।

সূত্রে আরো জানায়, নিহত শাহানার  ৬ বছর আগে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের মোঃ সিরাজ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই বাবার বাড়িতে ফিরে আসে শাহানা। বাবার বাড়ীতে অবস্থাকালে শাহানার সাথে একই বাগানের হিন্দুধর্মের যুবক লালনপাশীর সাথে গত দুই বছর ধরে শাহানার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে বেশ কয়েকবার তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকাবাসী সহ তার দুলাভাই জানতে পেরে তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হন।

এদিকে শাহানার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার দুলাভাই। একপর্যায়ে শাহানার দুলাভাই উজির মিয়া তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শারীরিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকের সহায়তায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রেমিক লালনপাশী ও দুলাভাই উজির মিয়া ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে ঠেকে নিয়ে শহানাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর প্রেমিককে কাউকে কিছু না জানানোর জন্য বলে দুলাভাই। কাউকে কিছু জানালে হত্যায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়‌।

এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, এ মামলার তদন্ত কালে ভিকটিম শাহানার মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে তার প্রেমিক লালনপাশী ও ভিকটিমের দুলাভাই উজির মিয়াকে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করি।

আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে লালনপাশী জানায় হত্যার দুই তিন মাস আগে শাহানার সাথে তার দুলাভাই শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করে। শারীরিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়ে শাহানার প্রেমিকসহ শাহানা কে সমাজচ্যুত করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে প্রেমিকের সহায়তায় শাহানাকে হত্যার পরিকল্পনা হিসেবে দুই জন মিলে তাকে হত্যা করে।

এ মামলায় তাদের দুই জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন বলেন, এ মামলায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যার সাথে জড়িত শাহানার দুলাভাই ও প্রেমিক লালনপাশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত থানায় মামলা রুজু করে (মামলা নং-১, তারিখ-০২-০২-২০২৩) আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুদখোর চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘরে আলাদিনের চেরাগ!

পরকীয়া প্রেমের ভয়াল দশা; জুড়ীতে প্রেমিক ও দুলাভাইয়ের হাতে প্রেমিকা খুন

আপডেট সময় ১১:১৩:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে ক্লু-লেস একটি মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার (২৬) কে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগে তিন মাস পর  প্রেমিক লালনপাশী (২৩) ও ভিকটিমের দুলাভাই উজির মিয়া (৪২)  কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর হত্যার  সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

অভিযুক্তদের শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার (২৬) গতবছরের  ২৭ অক্টোবর  বিকালে  বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলে  বের হয়ে আর বাড়ী ফিরেনি। মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় তার বাবাসহ পরিবার নানা জায়গায় তাকে খোঁজতে থাকে।

পরে নিখোঁজের ৩ দিন পর ২৯ অক্টোবর বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃ সীমান্তবর্তী তালগাং নামক নদীর পানির স্রোত দিয়ে একটি নারীর লাশ ভেসে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশকে খবর দিলে থানার  অফিসার ইনচার্জ মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে থানার এসআই খাইরুল ইসলাম বাদল লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ  মর্গে প্রেরণ করে। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম ওসি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিকটিম শাহানার মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে প্রেমিক লালনপাশী ও শাহানার দুলাভাই উজির মিয়া হত্যার সাথে  জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা শাহানা কে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃ সীমান্তবর্তী তালগাং নামক নদীর পানিতে ডুবিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে।

সূত্রে আরো জানায়, নিহত শাহানার  ৬ বছর আগে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের মোঃ সিরাজ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই বাবার বাড়িতে ফিরে আসে শাহানা। বাবার বাড়ীতে অবস্থাকালে শাহানার সাথে একই বাগানের হিন্দুধর্মের যুবক লালনপাশীর সাথে গত দুই বছর ধরে শাহানার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে বেশ কয়েকবার তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকাবাসী সহ তার দুলাভাই জানতে পেরে তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হন।

এদিকে শাহানার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার দুলাভাই। একপর্যায়ে শাহানার দুলাভাই উজির মিয়া তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শারীরিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকের সহায়তায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রেমিক লালনপাশী ও দুলাভাই উজির মিয়া ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে ঠেকে নিয়ে শহানাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর প্রেমিককে কাউকে কিছু না জানানোর জন্য বলে দুলাভাই। কাউকে কিছু জানালে হত্যায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়‌।

এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, এ মামলার তদন্ত কালে ভিকটিম শাহানার মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে তার প্রেমিক লালনপাশী ও ভিকটিমের দুলাভাই উজির মিয়াকে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করি।

আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে লালনপাশী জানায় হত্যার দুই তিন মাস আগে শাহানার সাথে তার দুলাভাই শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করে। শারীরিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়ে শাহানার প্রেমিকসহ শাহানা কে সমাজচ্যুত করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে প্রেমিকের সহায়তায় শাহানাকে হত্যার পরিকল্পনা হিসেবে দুই জন মিলে তাকে হত্যা করে।

এ মামলায় তাদের দুই জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন বলেন, এ মামলায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যার সাথে জড়িত শাহানার দুলাভাই ও প্রেমিক লালনপাশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত থানায় মামলা রুজু করে (মামলা নং-১, তারিখ-০২-০২-২০২৩) আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।