জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অ্যাডভোকেট হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আসছেন বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে। এটি বেলজিয়ামের কোনো রানির প্রথম বাংলাদেশ সফর হতে যাচ্ছে।
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন রানি মাথিল্ডে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বেলজিয়ামের রানি ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুযারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের ১৭ জন এসডিজি অ্যাডভোকেট আছেন, তাদেরই একজন বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে। তিনি এসডিজি বাস্তবায়নের কাজে আসছেন। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বা অনুপ্রেরণা যোগাতে তাদের ভূমিকা থাকে। কেননা মানুষ তাদের কথা শোনে। ওই উদ্দেশে রানি বাংলাদেশে আসছেন।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বেলজিয়ামের রানির বাংলাদেশ সফর নিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সরকার ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১’-এর ধারা ২ এর দফা ক’তে দেওয়া ক্ষমতাবলে, বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডেকে বাংলাদেশ সফরকালে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে রানি মাথিল্ডের। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানিকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সফরে মাথিল্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশ সফরকালে রানির সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি নৈশভোজের আয়োজন করার কথা রয়েছে। যদিও রানির বাংলাদেশ সফরকালে সরকারের গুরত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ড. মোমেনের। সেক্ষেত্রে রানির সম্মানে নৈশভোজের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে।
রানির সফরে মূল ফোকাসের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রানির এরিয়াস অব ইন্টারেস্ট হচ্ছে মেন্টাল হেলথ। এটা তার প্রাইমারি ফোকাস।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে রানি মাথিল্ডে দেশের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি গার্মেন্টস কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানবেন। রানি নারায়ণগঞ্জের ইউনিসেফের একটি স্কুল পরিদর্শন করবেন। এর বাইরে তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি তার ফোকাস এরিয়া নিয়ে নারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে আলাপ করবেন। এছাড়া তিনি খুলনায় যাবেন। সেখানে ইউএনডিপির ওয়াটার সেক্টরের একটি প্রজেক্ট পরিদর্শন করে সেখান থেকে উপকৃতদের সঙ্গে কথা বলবেন। মাথিল্ডে তাদের কাছে জানতে চাইবেন, কীভাবে ওই প্রকল্প থেকে তারা সুবিধা পাচ্ছেন।
রানির সফরে গুরত্ব বোঝাতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, রানির সফর জাতিসংঘের এসডিজি বিষয়ক হলেও এ সফরকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। রানি বলে কথা। একজন রানিকে রানির মতো করেই সম্মান দিতে চায় বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বেলজিয়ামের রানি আসছেন এটা আমাদের জন্য খুশির সংবাদ। তিনি জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নের কাজে আসলেও আমাদের কিছু সুযোগ থাকছে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করার। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যাসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরবেন। তাছাড়া ঢাকায় পুনরায় বেলজিয়ামের দূতাবাস খোলার বিষয়টি তোলা উচিত। ১৯৯৫ সালে বেলজিয়াম বাংলাদেশে দূতাবাস খোলে। একটা সময়ে গিয়ে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন বেলজিয়ামে যাতায়াত করতে সব কার্যক্রম হয় নয়াদিল্লি থেকে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এসডিজি অ্যাডভোকেট করেছেন ১৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে। যারা তাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখেন। জাতিসংঘের এসডিজি অ্যাডভোকেটদের মধ্যে রানি মেথেল্ডি ছাড়াও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, শান্তিতে নোবেলজয়ী ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী ও বলিউড অভিনেত্রী দিয়া মির্জাও রয়েছেন।