রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আল কারিম হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়ে এক কেজি সাতশ গ্রাম আইস বা ক্রিস্টাল মেথসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা (গোয়েন্দা) ইউনিট।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, টেকনাফ কেন্দ্রিক আইসের মূল কারবারি এবং সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাসচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার সহকারী মো. মেহেদী হাসান। গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীর হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার মাধবপুর বাজারের মৃত আলী আশরাফের পুত্র এবং মেহেদি হাসান বাগেরহাট জেলার সদর থানার মৃত আলতাফ শেখের পুত্র।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর সায়দাবাদ হাজী বোরহান উদ্দিন টাওয়ার সংলগ্ন আলকারিম হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য আইসহ তাদের আটক করা হয়। এটি এযাবতকালে সর্ববৃহৎ আইসের চালান বলে জানা গেছে। আজ বুধবার দুপুরে গেন্ডারিয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দক্ষিণ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আল আমিন এসব তথ্য জানান।
এসময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা (গোয়েন্দা) ইউনিটের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্হিত ছিলেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে গোপন সংবাদে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) মুহাম্মদ রিফাত হোসেনের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর সায়দাবাদ হাজী বোরহান উদ্দিন টাওয়ার সংলগ্ন আলকারিম হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন জাহাঙ্গীর ও তার সহকারী মো. মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে আমদানি নিষিদ্ধ ও ভয়ংকর মাদক এক কেজি ৭০০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত আইসের বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। যার প্রতি গ্রাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। এসময় তাদের কাছ থেকে দুইটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ডিএনসি’র গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছে, পেশায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস চালক জাহাঙ্গীর। বাস চালানোর আড়ালে মূলত ইয়াবাসহ আইসের চালান নিয়মিত কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় আনতেন তিনি। জাহাঙ্গীর টেকনাফ কেন্দ্রিক আইসের মূল কারবারি বলে দাবি ডিএনসি গোয়েন্দা শাখার। মাদক কারবারে জড়িত থাকায় ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চারবার গ্রেপ্তার হয়েছিল জাহাঙ্গীর। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ইয়াবা থেকে আইসের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় আইস পাচার ও বিক্রি জন্য আলাদা সিন্ডিকেট রয়েছে জাহাঙ্গীরের। এ কাজের জন্য জন্য সহযোগী মেহেদী হাসানকে ব্যবহার করতো জাহাঙ্গীর।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসি’র অতিরিক্ত পরিচালক আল আমিন জানান, টেকনাফ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আইসের চালান রাজধানীতে নিয়মিত আনতেন গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর। তিনি আইস কারবারের মূলহোতাও। পাশাপাশি তিনি সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস চালকও। মূলত বাস চালানোর আড়ালে তিনি এসব মাদক কক্সবাজার টেকনাফ হয়ে ঢাকায় নিয়ে আসতেন।
বাস চালক হলেও জাহাঙ্গীরের মূল পেশা মাদকের কারবারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ইয়াবা ও ২০২০ সাল থেকে আইস পাচারের সঙ্গে জড়িত। আগে টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবা-আইস ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। পরে নিজেই টেকনাফ থেকে ইয়াবা আইস ঢাকা এনে বিক্রির জন্য একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। ইয়াবা থেকে আইসের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় আইস পাচার ও বিক্রি জন্য আলাদা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে জাহাঙ্গীর। পরে তার সহযোগী গ্রেপ্তার মেহেদী হাসানের মাধ্যমে সরাসরি মাদক সেবনকারীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পরিচালক আল আমিন জানান, আইস মূলত উচ্চমূল্যের মাদক। এ কারণে অভিজাত এলাকার ক্রেতারাই এটি বেশি সেবন করে। আইস ঢাকার ভেতরেই বেশি ব্যবহার হয়। গ্রাম বা মফস্বলে এখনো এর বিস্তার ঘটেনি। তবে, এ ধরনের মাদক যেন সারা দেশে মাদক কারবারিরা পাচার বা বিক্রি করতে না পারে সেজন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহনের প্রস্ততি চলছে বলে জানান তিনি।