ঢাকা ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর পাকিস্তানে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদ্যুৎ সেবা

জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর পাকিস্তানে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদ্যুৎ সেবা। বিভ্রাটের দীর্ঘ সময় পরও বিদ্যুৎ সেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় রাতের বেলা নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে বাজারগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। এর আগে সোমবার সকালে পাকিস্তানজুড়ে লাখ লাখ বাড়িতে এবং প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ চলে যায়। এসময় দেশটির বৃহত্তম শহর করাচিসহ রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর এবং পেশোয়ারের মত প্রধান শহরগুলোও বিদ্যুৎ-বিহীন হয়ে পড়ে।

রয়টার্স বলছে, কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেওয়ার পর পাকিস্তানের সরকার সোমবার কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য বিদ্যুৎ সেবা পুনঃস্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়ে তদন্তও শুরু করেছে দেশটি। সোমবার সকাল থেকে পাকিস্তানে বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে দেশটির বিদ্যুৎবিহীন বহু এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এবং দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী খুররম দস্তগীর টুইটারে জানান, কর্তৃপক্ষ সারা দেশে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার শুরু করেছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কেন এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছেন। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা সোমবার রাতে জানান, বিপর্যয়ের খবর পাওয়ার ১৫ ঘণ্টা পরে অনেক শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

রাজধানী ইসলামাবাদসহ অনেক বড় শহর এবং পাকিস্তানজুড়ে প্রত্যন্ত শহর ও গ্রাম ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎবিহীন ছিল। সোমবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুতের সংযোগ পুরোপুরি চালু না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দিতে সারা দেশের বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। জ্বালানি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খুররম দস্তগীর খান দাবি করেছিলেন, রাত ১০টার মধ্যে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র করাচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কে-ইলেক্ট্রিক লিমিটেডের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে শহরে বিদ্যুৎ সেবা পুনরায় চালু হতে পারে। সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সংকট নতুন কিছু নয়। অব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগের অভাবকেই এর জন্য দায়ী করা হয়। শেষবার ব্যাপক মাত্রার এ ধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। সেসময় বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনতে কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানে লোডশেডিং এবং ভোল্টেজ ওঠা-নামা নৈমিত্তিক ব্যাপার। বহু বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব জেনারেটর রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে সেগুলো চালু করা হয়। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তানের সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে সমস্ত শপিং মল ও বাজার বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রেস্তোরাঁগুলোকে রাত দশটার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়।

পাকিস্তানের সরকার জানিয়েছে, এই বিধিনিষেধের ফলে ৬২০০ কোটি রুপি সাশ্রয় হবে। সরকারি অফিসগুলোকেও বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমাতে বলা হয়েছে। মূলত পাকিস্তানের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রধানত আমদানি করা জ্বালানি দিয়ে। আর তাই গত বছর আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারে দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক শাহাদাত হোসেনের উপর হামলা ও হত্যার হুমকি নিয়ে চান্দগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি

ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর পাকিস্তানে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদ্যুৎ সেবা

আপডেট সময় ০১:২০:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর পাকিস্তানে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদ্যুৎ সেবা। বিভ্রাটের দীর্ঘ সময় পরও বিদ্যুৎ সেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় রাতের বেলা নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে বাজারগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। এর আগে সোমবার সকালে পাকিস্তানজুড়ে লাখ লাখ বাড়িতে এবং প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ চলে যায়। এসময় দেশটির বৃহত্তম শহর করাচিসহ রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর এবং পেশোয়ারের মত প্রধান শহরগুলোও বিদ্যুৎ-বিহীন হয়ে পড়ে।

রয়টার্স বলছে, কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেওয়ার পর পাকিস্তানের সরকার সোমবার কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য বিদ্যুৎ সেবা পুনঃস্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়ে তদন্তও শুরু করেছে দেশটি। সোমবার সকাল থেকে পাকিস্তানে বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে দেশটির বিদ্যুৎবিহীন বহু এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এবং দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী খুররম দস্তগীর টুইটারে জানান, কর্তৃপক্ষ সারা দেশে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার শুরু করেছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কেন এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছেন। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা সোমবার রাতে জানান, বিপর্যয়ের খবর পাওয়ার ১৫ ঘণ্টা পরে অনেক শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

রাজধানী ইসলামাবাদসহ অনেক বড় শহর এবং পাকিস্তানজুড়ে প্রত্যন্ত শহর ও গ্রাম ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎবিহীন ছিল। সোমবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুতের সংযোগ পুরোপুরি চালু না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দিতে সারা দেশের বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। জ্বালানি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খুররম দস্তগীর খান দাবি করেছিলেন, রাত ১০টার মধ্যে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র করাচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কে-ইলেক্ট্রিক লিমিটেডের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে শহরে বিদ্যুৎ সেবা পুনরায় চালু হতে পারে। সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সংকট নতুন কিছু নয়। অব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগের অভাবকেই এর জন্য দায়ী করা হয়। শেষবার ব্যাপক মাত্রার এ ধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। সেসময় বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনতে কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানে লোডশেডিং এবং ভোল্টেজ ওঠা-নামা নৈমিত্তিক ব্যাপার। বহু বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব জেনারেটর রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে সেগুলো চালু করা হয়। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তানের সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে সমস্ত শপিং মল ও বাজার বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রেস্তোরাঁগুলোকে রাত দশটার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়।

পাকিস্তানের সরকার জানিয়েছে, এই বিধিনিষেধের ফলে ৬২০০ কোটি রুপি সাশ্রয় হবে। সরকারি অফিসগুলোকেও বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমাতে বলা হয়েছে। মূলত পাকিস্তানের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রধানত আমদানি করা জ্বালানি দিয়ে। আর তাই গত বছর আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারে দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।