ঢাকা ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাস চাষে ঝুঁকছেন রামগঞ্জের খামারিরা

দিন দিন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রামগঞ্জের গরু চাষি ও খামারিরা। গো-খাদ্য ছোলা, ভুট্টা, ভূষি, ফিড ও খরের দাম বেশি হওয়ায় এ সমস্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে কৃষক ঘাস চাষে বর্তমানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কৃষক ও খামারিরা গবাদি পশুর গো- খাদ্য হিসেবে ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে গরু লালন পালন শুরু করেছে। তাই কৃষকরা গো-খাদ্য কমিয়ে দিয়েছে খাবারে ঘাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করছেন।

এর ফলে কৃষকরা ফসল কম হয় এমন অনাবাদি জমি, বাড়ির আঙ্গিনা, পতিত জায়গা ও সড়কের দুই ধারে ব্যাপকভাবে ঘাস চাষ শুরু করেছেন। অনেকেই গবাদিপশুর জন্য বাড়তি খাবার হিসাবে কাঁচা ঘাস খাওয়াচ্ছেন। এতে দুধ দেওয়া গরুর দুধের পরিমাণ বেঁড়ে গেছে। জানা যায়, যে সব জমিতে ফসল ভালো হয় না সেই জমিতে কৃষক ঘাস চাষ করছে। বাজারে ঘাস বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। খামারিরা গো খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। ঘাসের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দুধের গরুর দুধের পরিমাণ বেশি হচ্ছে।

উপজেলার ভোলাকোট গ্রামের মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন, গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করি এবং কোরবানির ঈদে সাড়ে ২ ও ৩ লাখ টাকা বিক্রির লক্ষ নিয়ে ৩টি ষাড় পালন করছি। কিন্তু দ্রব্য মূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে গো-খাদ্য ও খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালন করতে হাপিয়ে উঠেছি। বাধ্য হয়ে এ বছর জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করছি। এতে কিটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না বলে লাভের পরিমাণ বেশি হয়। নিজের পালিত গরুর চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘাসের কয়েকটি জাতের ওপর নিবিড় গবেষণার পর নেপিয়ার ঘাসের উচ্চফলনশীল জাত উন্নয়ন করা হয়েছে। জাতগুলো হলো- বিএলআরআই নেপিয়ার-১ (যা নেপিয়ার বাজরা নামে পরিচিতি), বিএলআরআই নেপিয়ার-২ (নেপিয়ার এরোসা) এবং বিএলআরআই নেপিয়ার-৩ (হাইব্রিড নেপিয়ার)। সম্প্রতি আরো একটি উচ্চফলনশীন নেপিয়ার ঘাসের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বিএলআরআই নেপিয়ার-৪ নামে রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল এসব ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চ উৎপাদনশীল।

এক ক্ষেত থেকে বছরে প্রায় ৪ থেকে ৮ বার ঘাস কাটা যায়। সারা বছরই এ ঘাসের উৎপাদন সম্ভব। আলাদাভাবে কাটিং বা চারার দরকার হয় না। একটি দেশি গাভিতেও দৈনিক ৩.৫০ থেকে ৪.০০ লিটার দুধ উৎপাদন সম্ভব হয়। গরু খামারি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, এমরান হোসেন, তাহের হোসেনসহ কয়েকজন জানান, ৩-৪ টি গরু সারা বছর লালন পালন করে থাকি। দিন দিন গো খাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাধ্য হয়ে ঘাস চাষ করছি। এতে বিগত বছরের মতো গো- খাদ্য ও খড়ের উপর নির্ভর করতে হবে না।

গরু খামারিরা আরো জানান, ছয়মাস আগে একবস্তা ভালোমানের গমের ছাল বিক্রি হয়েছে ১২০০-১২৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৯৫০-১০০০ টাকা। একইভাবে ছয় মাস আগে মাসকলাইয়ের ভুসির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ১১০০-১২০০ টাকা। এক বছর আগে এক বস্তা খৈল বিক্রি হয়েছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৩৩শ’-৩৪শ’ টাকা। ছয়মাস আগে ডালের ভুসির বস্তা (৩৫ কেজি) ছিল ১২শ’ টাকা, অ্যাংকর ডালের ভুসি ৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এরপরও ধীরে ধীরে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছিল। কিন্তু গত ১৫ দিনে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, উপজেলায় খামারীরা দুধ দহন ও বিক্রির জন্য গাভী ও ষাড় গরু পালন করে। যে পরিমাণ গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে খামারিদের লোকশান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিকল্প হিসাবে খামারিদের অনাবাদি জমি ও পতিত জায়গায় উন্নত জাতের ঘাস চাষ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কাঁচা ঘাসে দ্রুত গরুর দুধ বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অল্পদিনে গরু সুঠাম হবে। উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে সফলতা পেলে গো-খাদ্য নির্ভরশীলতা কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বোরহানউদ্দিনে খাল পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার অভিযানের উদ্বোধন

গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাস চাষে ঝুঁকছেন রামগঞ্জের খামারিরা

আপডেট সময় ০২:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩

দিন দিন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রামগঞ্জের গরু চাষি ও খামারিরা। গো-খাদ্য ছোলা, ভুট্টা, ভূষি, ফিড ও খরের দাম বেশি হওয়ায় এ সমস্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে কৃষক ঘাস চাষে বর্তমানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কৃষক ও খামারিরা গবাদি পশুর গো- খাদ্য হিসেবে ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে গরু লালন পালন শুরু করেছে। তাই কৃষকরা গো-খাদ্য কমিয়ে দিয়েছে খাবারে ঘাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করছেন।

এর ফলে কৃষকরা ফসল কম হয় এমন অনাবাদি জমি, বাড়ির আঙ্গিনা, পতিত জায়গা ও সড়কের দুই ধারে ব্যাপকভাবে ঘাস চাষ শুরু করেছেন। অনেকেই গবাদিপশুর জন্য বাড়তি খাবার হিসাবে কাঁচা ঘাস খাওয়াচ্ছেন। এতে দুধ দেওয়া গরুর দুধের পরিমাণ বেঁড়ে গেছে। জানা যায়, যে সব জমিতে ফসল ভালো হয় না সেই জমিতে কৃষক ঘাস চাষ করছে। বাজারে ঘাস বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। খামারিরা গো খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। ঘাসের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দুধের গরুর দুধের পরিমাণ বেশি হচ্ছে।

উপজেলার ভোলাকোট গ্রামের মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন, গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করি এবং কোরবানির ঈদে সাড়ে ২ ও ৩ লাখ টাকা বিক্রির লক্ষ নিয়ে ৩টি ষাড় পালন করছি। কিন্তু দ্রব্য মূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে গো-খাদ্য ও খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালন করতে হাপিয়ে উঠেছি। বাধ্য হয়ে এ বছর জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করছি। এতে কিটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না বলে লাভের পরিমাণ বেশি হয়। নিজের পালিত গরুর চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘাসের কয়েকটি জাতের ওপর নিবিড় গবেষণার পর নেপিয়ার ঘাসের উচ্চফলনশীল জাত উন্নয়ন করা হয়েছে। জাতগুলো হলো- বিএলআরআই নেপিয়ার-১ (যা নেপিয়ার বাজরা নামে পরিচিতি), বিএলআরআই নেপিয়ার-২ (নেপিয়ার এরোসা) এবং বিএলআরআই নেপিয়ার-৩ (হাইব্রিড নেপিয়ার)। সম্প্রতি আরো একটি উচ্চফলনশীন নেপিয়ার ঘাসের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বিএলআরআই নেপিয়ার-৪ নামে রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল এসব ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চ উৎপাদনশীল।

এক ক্ষেত থেকে বছরে প্রায় ৪ থেকে ৮ বার ঘাস কাটা যায়। সারা বছরই এ ঘাসের উৎপাদন সম্ভব। আলাদাভাবে কাটিং বা চারার দরকার হয় না। একটি দেশি গাভিতেও দৈনিক ৩.৫০ থেকে ৪.০০ লিটার দুধ উৎপাদন সম্ভব হয়। গরু খামারি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, এমরান হোসেন, তাহের হোসেনসহ কয়েকজন জানান, ৩-৪ টি গরু সারা বছর লালন পালন করে থাকি। দিন দিন গো খাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাধ্য হয়ে ঘাস চাষ করছি। এতে বিগত বছরের মতো গো- খাদ্য ও খড়ের উপর নির্ভর করতে হবে না।

গরু খামারিরা আরো জানান, ছয়মাস আগে একবস্তা ভালোমানের গমের ছাল বিক্রি হয়েছে ১২০০-১২৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৯৫০-১০০০ টাকা। একইভাবে ছয় মাস আগে মাসকলাইয়ের ভুসির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ১১০০-১২০০ টাকা। এক বছর আগে এক বস্তা খৈল বিক্রি হয়েছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৩৩শ’-৩৪শ’ টাকা। ছয়মাস আগে ডালের ভুসির বস্তা (৩৫ কেজি) ছিল ১২শ’ টাকা, অ্যাংকর ডালের ভুসি ৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এরপরও ধীরে ধীরে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছিল। কিন্তু গত ১৫ দিনে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, উপজেলায় খামারীরা দুধ দহন ও বিক্রির জন্য গাভী ও ষাড় গরু পালন করে। যে পরিমাণ গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে খামারিদের লোকশান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিকল্প হিসাবে খামারিদের অনাবাদি জমি ও পতিত জায়গায় উন্নত জাতের ঘাস চাষ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কাঁচা ঘাসে দ্রুত গরুর দুধ বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অল্পদিনে গরু সুঠাম হবে। উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে সফলতা পেলে গো-খাদ্য নির্ভরশীলতা কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।