ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজবাড়ীতে মহাসড়কে গাছ ফেলে যানবাহনে ডাকাতি র‌্যাব-১৩ এর পৃথক অভিযানে ১৩১১ বোতল ফেনসিডিলসহ শীর্ষ ০৪ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কলেজ শিক্ষক জসিমের সিন্ডিকেটের অবৈধ ঔষধ ও চোরাই মোবাইলের রমরমা বাণিজ্য !! বেকারত্ব কমিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য : নাহিদ ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বরিস জনসনের টয়লেটে গিয়ে যে কাণ্ড ঘটালেন নেতানিয়াহু পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বটতলা হাটে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ধামরাইয়ে ১৯৬ মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব

বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়ার এখনই সময়, বললেন মার্কিন লেখক

পাকিস্তানকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তি গতকাল উদযাপন করেছে বাংলাদেশের মানুষ।

পাঁচ দশক কেটে গেলেও বাংলাদেশের ওপর চালানো গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। তাদের চালানো এ হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো। যার মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র।

তবে মার্কিন বিখ্যাত লেখক ও প্রাবন্ধিক মিখাইল রুবিন বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং এখনই এটি উত্তম সময়।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (এইআই) এর জ্যেষ্ঠ ফেলো মিখাইল রুবিন ১৯৪৫ নামে একটি পোর্টালে বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভাবে যদি বাংলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে তারা স্বীকৃতি দেয় তাহলে এটি ‘পাকিস্তান বিরোধী’ পদক্ষেপ হবে। কিন্তু আসলে এটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক আইন মানার একটি দায়িত্বশীল দেশে পরিণত হবে পাকিস্তান। আর এর ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। ফলে এ বিষয়টির দিকে নজর দিতে মার্কিন রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি তার প্রবন্ধে আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখনই সব জানত যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোলোকাস্ট, আর্মেনিয়ার গণহত্যা এবং ইউক্রেনের হলোডোমারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে কি ঘটেছিল এ নিয়ে নিরব রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশি নারীদের ধর্ষণ, বাসস্থানত্যাগে বাধ্য করার বিষয়টিও নিজের প্রবন্ধে তুলে এনেছেন রুবিন।

এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার মতো বাংলাদেশের গণহত্যাও সংঘটিত হয়েছিল বর্ণবৈষম্যের কারণে। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকালীন জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তানের সমস্যার সমাধান করার আগেই জিন্নাহ মারা যান। এ কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়।

তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানে জাতিগত পাঞ্জাবিরা সেনাবাহিনীসহ সব জায়গায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে এবং ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত বর্তমান বাংলাদেশ ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈষম্য করতে থাকে। বৈষম্য বাড়তে থাকলে ও ২৬ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট নামে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার নিরাপত্তা পরামর্শক হ্যানরি কিসিঞ্জারের কথা উল্লেখ করেছেন রুবিন। তিনি জানিয়েছেন, রিচার্ড নিক্সন ওই সময় ভারত বিরোধী ছিলেন। চীন ও ভারতকে কব্জায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি নিয়েছিলেন হ্যানরি কিসিঞ্জার। তবে হ্যানরি আবার চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলেন। এ কারণে ১৯৭১ সালে গোপনে চীনে এসেছিলেন তিনি। চীনের সঙ্গে তিনি আঁতাত করায় পাকিস্তানের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়নি।

মার্কিন লেখক রুবিন তার প্রবন্ধে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন কাউন্সিল জেনারেল আর্চার ব্লাডের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আর্চার ব্লাড বাংলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের বর্বরতার খবর টেলিগ্রামে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যা হোয়াইট হাউজেও জানানো হয়েছিল। তবে এ ঘটনার পর আর্চার ব্লাডকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত নিয়ে যান নিক্সন এবং কিসিঞ্জার। সত্য বলার কারণে তার কূটনীতিক ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যায়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজবাড়ীতে মহাসড়কে গাছ ফেলে যানবাহনে ডাকাতি

বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়ার এখনই সময়, বললেন মার্কিন লেখক

আপডেট সময় ০২:১৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

পাকিস্তানকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তি গতকাল উদযাপন করেছে বাংলাদেশের মানুষ।

পাঁচ দশক কেটে গেলেও বাংলাদেশের ওপর চালানো গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। তাদের চালানো এ হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো। যার মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র।

তবে মার্কিন বিখ্যাত লেখক ও প্রাবন্ধিক মিখাইল রুবিন বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং এখনই এটি উত্তম সময়।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (এইআই) এর জ্যেষ্ঠ ফেলো মিখাইল রুবিন ১৯৪৫ নামে একটি পোর্টালে বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভাবে যদি বাংলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে তারা স্বীকৃতি দেয় তাহলে এটি ‘পাকিস্তান বিরোধী’ পদক্ষেপ হবে। কিন্তু আসলে এটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক আইন মানার একটি দায়িত্বশীল দেশে পরিণত হবে পাকিস্তান। আর এর ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। ফলে এ বিষয়টির দিকে নজর দিতে মার্কিন রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি তার প্রবন্ধে আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখনই সব জানত যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোলোকাস্ট, আর্মেনিয়ার গণহত্যা এবং ইউক্রেনের হলোডোমারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে কি ঘটেছিল এ নিয়ে নিরব রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশি নারীদের ধর্ষণ, বাসস্থানত্যাগে বাধ্য করার বিষয়টিও নিজের প্রবন্ধে তুলে এনেছেন রুবিন।

এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার মতো বাংলাদেশের গণহত্যাও সংঘটিত হয়েছিল বর্ণবৈষম্যের কারণে। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকালীন জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তানের সমস্যার সমাধান করার আগেই জিন্নাহ মারা যান। এ কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়।

তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানে জাতিগত পাঞ্জাবিরা সেনাবাহিনীসহ সব জায়গায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে এবং ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত বর্তমান বাংলাদেশ ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈষম্য করতে থাকে। বৈষম্য বাড়তে থাকলে ও ২৬ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট নামে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার নিরাপত্তা পরামর্শক হ্যানরি কিসিঞ্জারের কথা উল্লেখ করেছেন রুবিন। তিনি জানিয়েছেন, রিচার্ড নিক্সন ওই সময় ভারত বিরোধী ছিলেন। চীন ও ভারতকে কব্জায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি নিয়েছিলেন হ্যানরি কিসিঞ্জার। তবে হ্যানরি আবার চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলেন। এ কারণে ১৯৭১ সালে গোপনে চীনে এসেছিলেন তিনি। চীনের সঙ্গে তিনি আঁতাত করায় পাকিস্তানের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়নি।

মার্কিন লেখক রুবিন তার প্রবন্ধে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন কাউন্সিল জেনারেল আর্চার ব্লাডের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আর্চার ব্লাড বাংলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের বর্বরতার খবর টেলিগ্রামে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যা হোয়াইট হাউজেও জানানো হয়েছিল। তবে এ ঘটনার পর আর্চার ব্লাডকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত নিয়ে যান নিক্সন এবং কিসিঞ্জার। সত্য বলার কারণে তার কূটনীতিক ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যায়।