মাদারীপুরের শিবচরে দর্শনার্থীদের কাছে টানছে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ মসজিদ। মসজিদটির অসাধারণ নির্মাণ শৈলী, এর রং ও লাইটিং দূর থেকেই কাছে টানছে লোকজনকে। নির্মাণের পর থেকেই প্রতিদিন মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন হাজারো দর্শনার্থীরা।
অসাধারণ লাইটিং ও মসজিদের মোহনীয় সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। মসজিদ দেখা শেষে মুগ্ধতার আবেশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও দর্শনার্থীরা। দিনের আলো, সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্ত ও রাতের অন্ধকার, তিন সময়ে ভিন্নরকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ। তবে সন্ধ্যার পর মসজিদের লাইট জ্বালানো হলে ফুটে ওঠে এর দূতি ছড়ানো সৌন্দর্য।
পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের দত্তপাড়া ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে নির্মিত এই মসজিদটি দর্শনার্থীদের পাশাপাশি মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও মুগ্ধ করছে।
কলেজের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ মসজিদ। মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কমিটি। মসজিদে নামাজের জন্য একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও ২ জন খাদেম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী পারিবারিকভাবে নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।
মসজিদ নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই মসজিদটি নামাজের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
মসজিদটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর অসাধারণ নির্মাণশৈলী, গম্বুজের কারুকাজ, চীন থেকে আনা ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের ৮ পাখাবিশিষ্ট বৈদ্যুতিক ফ্যান। আরও রয়েছে তুর্কিয়ে থেকে আনা ঝাড়বাতি। মসজিদের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ২৫ ফিট উচ্চতা রয়েছে।
মসজিদের চারপাশে বড় আকারের একাধিক জানালা থাকায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এতে ভেতরে সারাক্ষণ শীতলভাব বজায় থাকে।
প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন। শুক্রবার বিকেল থেকে মসজিদ প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার পর মসজিদ ও মহাসড়কে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
শরীয়তপুর থেকে মসজিদটি দেখতে আসা বৃদ্ধ মালেক ফকির বলেন, এরকম সুন্দর মসজিদ আমি কখনও দেখিনি। এখানে নামাজ পড়ে মনে অনেক প্রশান্তি পাই। এখান থেকে ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না।
ফরিদপুর থেকে আসা আবদুল্লাহ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ মসজিদটি দেখে চোখ আটকে যায়। বাসে এক মূহুর্তের জন্য দেখেছিলাম। এখন সময় নিয়ে দেখতে এসেছি।
দত্তপাড়া টিএন একাডেমীর সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা চিফ হুইপ মহোদয়ের কাছে একটি মসজিদ চেয়েছিলাম। তিনি এতো চমৎকার একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন এমনটা ভাবিনি। এমন চমৎকার নির্মাণ শৈলীর মসজিদ পেয়ে আমরা গর্বিত।’
মসজিদ নির্মাণ কাজের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন পিটার খান। তিনি বলেন, ‘চিফ হুইপ মহোদয় মসজিদের নির্মাণ শৈলী থেকে শুরু করে জানালার নেট পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিষয় নিজের পছন্দ মত করেছেন, তাই প্রত্যেকটি কাজ ভালোভাবে হয়েছে।’
মসজিদটির স্থাপত্য নকশা করেছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের এক্সটেনশনের ডিজাইনসহ দেশের অসংখ্য মসজিদের ডিজাইনার কাজী মোহাম্মদ হানিফ।
মসজিদের নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণে কি পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে তার প্রকৃত হিসেব জানা নেই। যারা অর্থায়ন করেছেন তারাও বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না।’
তবে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি তৈরিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
একদিকে এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে অসাধারণ নির্মাণ শৈলীর মসজিদ নজর কাড়েছে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের। দিন দিন মসজিদটি ঘিরে বাড়ছে দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া।