ঢাকা ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অবৈধ ভাবে গোয়াইনঘাট নদীর পার থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে ভবন জুলাই অভ্যুত্থানে শাহবাগের সবচেয়ে বড় মিছিল ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের – বাকের সাদ্দাম-ইনানসহ ঢাবি থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১২৮ জন বহিষ্কার জাবির ৬ নং ছাত্র হল প্রশাসনের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত জবির দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করল ঢাবি কুবিতে নোয়াখালী ছাত্রকল্যাণ পরিষদের দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গফরগাঁয়ে মাটিকাটা নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব, নিহত ১ একাত্তরে আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি -আমির ডা. তাহের নারায়ণগঞ্জে মাদক নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা কেশবপুর খ্রিস্টান মিশন থেকে তিন পাহাড়ি মেয়েকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী 

বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ বই মেলা কমিটিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমালোচনার ঝড়

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর (বেরোবি) প্রথমবারের মতো প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত শহীদ আবু সাঈদ বই মেলা উদযাপন কমিটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বইমেলার আয়োজক কমিটিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদকে রাখা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১১০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর শহীদ আবু সাঈদ বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন। এবছর ১৮ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

তবে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কমিটিতে অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে। তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং বেরোবিতে যোগদানের পর নীলদল প্রতিষ্ঠা করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, তিনি ২০২৩ সালের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দলের প্যানেল থেকে জয়লাভ করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি অধ্যাপক মশিউর রহমানের প্রভাবাধীন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন ড. আপেল মাহমুদ। তাই শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে আয়োজিত বইমেলার কমিটিতে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর নিয়োগের পর থেকেই তিনি প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। মাত্র তিন মাসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ক্রয় কমিটি, ডরমেটরি বরাদ্দ কমিটি, বাসা বরাদ্দ নীতিমালা রিভিউ কমিটি, ভর্তি পরিচালনা কমিটি, ক্যালেন্ডার মুদ্রণ কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ছুটি নির্ধারণ কমিটিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, “যখনই উপাচার্যের দপ্তরে যাই, দেখি আপেল মাহমুদ সেখানে বসে আছেন। উগ্র আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের এভাবে প্রশাসনের আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য বিব্রতকর।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, “নতুন উপাচার্য আসার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাঁদের পছন্দের শিক্ষকদের তালিকা নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীরাই তাঁর নাম দিয়েছে, তাই আমাদের কিছু বলার নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, “আমরা জানতাম, বইমেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে এবং নেতৃত্ব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের হাতে। কিন্তু সেখানে একজন কট্টর আওয়ামীপন্থী শিক্ষককে রাখা হয়েছে, যা শহীদ আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেইমানি। প্রশাসন যদি এভাবে আওয়ামীপন্থীদের পুনর্বাসন চালিয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারাবে।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, “বইমেলা নিয়ে আগে কিছু জানতাম না। পরে শুনলাম, সেখানে একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে তাঁকে কমিটি থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মতামত নিয়ে নতুন কমিটি দিতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “তাঁর নাম (আপেল মাহমুদ) বিভাগের শিক্ষার্থীরাই দিয়েছে। এখন তো কোনো দল নেই, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত—কিছুই নেই। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, তাই সবাইকেই নিয়ে কাজ করতে হবে।”

বারবার বিতর্কিত এই শিক্ষককে কেন বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হয়—এমন প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, “আপেল মাহমুদ কর্মঠ এবং কাজের মানুষ। কাজের লোক ১০টা, ২০টা কমিটিতেও থাকতে পারে। যারা সুবিধা পাচ্ছে না, তারাই এখন এসব বলছে।”

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অবৈধ ভাবে গোয়াইনঘাট নদীর পার থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে ভবন

বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ বই মেলা কমিটিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমালোচনার ঝড়

আপডেট সময় ০৯:৩২:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর (বেরোবি) প্রথমবারের মতো প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত শহীদ আবু সাঈদ বই মেলা উদযাপন কমিটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বইমেলার আয়োজক কমিটিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদকে রাখা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১১০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর শহীদ আবু সাঈদ বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন। এবছর ১৮ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

তবে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কমিটিতে অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে। তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং বেরোবিতে যোগদানের পর নীলদল প্রতিষ্ঠা করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, তিনি ২০২৩ সালের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দলের প্যানেল থেকে জয়লাভ করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি অধ্যাপক মশিউর রহমানের প্রভাবাধীন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন ড. আপেল মাহমুদ। তাই শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে আয়োজিত বইমেলার কমিটিতে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর নিয়োগের পর থেকেই তিনি প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। মাত্র তিন মাসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ক্রয় কমিটি, ডরমেটরি বরাদ্দ কমিটি, বাসা বরাদ্দ নীতিমালা রিভিউ কমিটি, ভর্তি পরিচালনা কমিটি, ক্যালেন্ডার মুদ্রণ কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ছুটি নির্ধারণ কমিটিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, “যখনই উপাচার্যের দপ্তরে যাই, দেখি আপেল মাহমুদ সেখানে বসে আছেন। উগ্র আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের এভাবে প্রশাসনের আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য বিব্রতকর।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, “নতুন উপাচার্য আসার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাঁদের পছন্দের শিক্ষকদের তালিকা নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীরাই তাঁর নাম দিয়েছে, তাই আমাদের কিছু বলার নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, “আমরা জানতাম, বইমেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে এবং নেতৃত্ব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের হাতে। কিন্তু সেখানে একজন কট্টর আওয়ামীপন্থী শিক্ষককে রাখা হয়েছে, যা শহীদ আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেইমানি। প্রশাসন যদি এভাবে আওয়ামীপন্থীদের পুনর্বাসন চালিয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারাবে।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, “বইমেলা নিয়ে আগে কিছু জানতাম না। পরে শুনলাম, সেখানে একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে তাঁকে কমিটি থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মতামত নিয়ে নতুন কমিটি দিতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “তাঁর নাম (আপেল মাহমুদ) বিভাগের শিক্ষার্থীরাই দিয়েছে। এখন তো কোনো দল নেই, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত—কিছুই নেই। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, তাই সবাইকেই নিয়ে কাজ করতে হবে।”

বারবার বিতর্কিত এই শিক্ষককে কেন বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হয়—এমন প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, “আপেল মাহমুদ কর্মঠ এবং কাজের মানুষ। কাজের লোক ১০টা, ২০টা কমিটিতেও থাকতে পারে। যারা সুবিধা পাচ্ছে না, তারাই এখন এসব বলছে।”