প্রকৃতির সাথে যার মিতালী মনের আঙ্গিনায় যার প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যের বসবাস, সেতো রূপের ঝলক দেখাবেই। সেতো মিডিয়ার রঙ্গনায় নান্দনিকতা তুলে ধরবেই। টেলিভিশন মিডিয়ার একজন উজ্জল মুখ, টিভির নান্দনিক উপস্থাপক তানিয়া আফরিন।
হেমন্তের কাশফুলের নরম ছোঁয়া তার গায়ে গেলেছে। যার প্রভাব পড়েছে তার মিডিয়া অঙ্গনে। মনে জাগলে পুলকিত হন। টিভি পর্দায় যার স্বতর্স্ফুত পদচারনা। উপস্থাপনা দিয়ে নান্দনিকতা ছড়ান তিনিইতো আফরিন, ফুরান না কখনো। টিভির পর্দায় যেন কাশফুলের নরম পালক উড়ান। একাধিক চ্যানেলের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়।
বর্তমানে উপস্থাপনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তানিয়া আফরিন। তানিয়া দীপ্ত টিভিতে উপস্থাপনা বিভাগে কর্মরত। সম্প্রতি কথা হয় দীপ্ত টিভিতে বসে। একান্ত আলাপচারিতায় নিজের অতিত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় তার সাথে। তানিয়ার মনে উপস্থাপনা বিষয়টি কল্পনার বাসা বাধে ২০০০ সাল থেকে। যখন একুশে টিভির কার্যক্রম শুরু হয় তখন একুশে টিভির অনুষ্ঠান ও সংবাদ গুলো দেখতে দেখতে নিজের মনে উপস্থাপক হওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন।
অদ্ভুত এক ভালোবাসার জন্ম নেয় তার মনে। তানিয়া নিজেকে প্রস্তুত করতে আবৃত্তি সংগঠনে যোগ দেন। কলেজে পড়ার সময় বৈকুন্ঠ আবৃত্তি একাডেমীতে ভর্তি হন। বৈকুন্ঠ আবৃত্তি চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি অনুষ্ঠান, বৈকুন্ঠ প্রযোজনা কাব্যনাট্যের শোতে মঞ্চে পারফর্মেন্স করেন। ‘জিয়ন্তকাল’ কাব্যনাট্য, আলো সাগরের পদাবলী, পাজরে দাড়ের শব্দ, ফেব্রুয়ারীর গানসহ শিল্পকলার মঞ্চ, মহিলা সমিতি মঞ্চ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর অনুষ্ঠানে শো করেন। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত একুশের প্রথম প্রহর মঞ্চায়নে অংশ গ্রহণ করেন। গোলাম মোস্তফা আবৃত্তি পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন।
তাছাড়া তানিয়া বৈকুন্ঠ আবৃত্তি একাডেমী থেকে আবৃত্তি বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। টেলিভিশন মিডিয়ায় কিভাবে আসলেন, এক প্রশ্নের জবাবে তানিয়া বলেনঃ -টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, সংবাদ উপস্থাপনা দেখে দেখে আমার মনে আগ্রহ্য জাগে এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করি। ২০১২ সালে চ্যানেল আইতে প্রথম অনুষ্ঠান বিভাগে কাজ করার সুযোগ পাই।
তিনি আরো বলেন-শুরুতে কাজ খুঁজে পাওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। মিডিয়ায় আমার পরিবারের অথবা পরিচিত কেউ ছিলোনা। তাই শুরুটা আমার জন্য এক প্রকার কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়েছে। ২০১৭ সালে দীপ্ত টিভিতে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তানিয়া। বিজয় টিভিতে উপস্থাপক হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল দুইবছর কাজ করেন, গাজী টিভিতে ২০১৯-২০ সাল উপস্থাপক এবং নিউজ রুম এডিটর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দীপ্ত টিভিতে উপস্থাপক হিসেবে কাজে যোগদান করে বর্তমানেও একই চ্যানেলে কর্মরত আছেন।
পাশাপাশি ২০১৯ সাল থেকে দুইটা প্রোডাকশন হাউজঃ প্ল্যাটফর্ম মিডিয়া ও সাউন্ড প্রিন্টারে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করে আসছেন। এদের প্রযোজিত শেহেরজাদ ফরহাদ ও ব্লুহুয়েল-এস এ টিভিতে প্রচারিত হয়েছে এবং জান্নাত সিরিয়ালটি এশিয়ান টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। একজন উপস্থাপকের কিকি গুনাবলি থাকা প্রয়োজন? প্রশ্নের জবাবে আফরিন বলেন-একজন উপস্থাপকের অবশ্যই ভাষা জ্ঞান, শুদ্ধ উচ্চারণ সাবলীল ভাবে কথা বলা, স্পষ্ট বাচনভঙ্গী এবং গুছিয়ে কথা বলতে পারা সর্বপরি দর্শকদের হৃদয়ে নিজের একটি স্থায়ী অবস্থান তৈরি করার যোগ্যতা থাকতে হবে।
টিভি মিডিয়ার দীর্ঘ সময় সংগ্রাম করে নিজের একটি অবস্থান তৈরী করেছেন, ভাবলে কেমন লাগে? প্রথমে কাজ করতে গিয়ে অনেক ভুল করতাম, আর এই ভুলগুলো থেকেই শিখেছি। যখন আমার কাজ গুলো প্রচার হয়, প্রচারের পর ঋধপবনড়ড়শ ও অনলাইনে প্রশংসিত হয় তখন সত্যি ভিশন ভালো লাগে। একটা তৃপ্তির হাসি হাসতে পারি, এর ফলে আরো নতুন নতুন কাজ করার খুদা জাগে। আমি আমার যোগ্যতার প্রমান দিতে চাই, যাতে দর্শকদের হৃদয়ে নিজের একটি ছাপ রেখে যেতে পারি।
তানিয়া আফরিন ইতিমধ্যে তার কাজের জন্য সেরা উপস্থাপক হিসেবে সাকোঁ টেলিফিল্ম এ্যাওয়ার্ড, বন্ধন কালচারাল পুরস্কার, স্বদেশ মৃত্তিকা পুরস্কার ও সাউথ এশিয়ান বিজনেস এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তানিয়ার পিতা মৃত শামছুল হক ও মাতা রেজিয়া বেগম ছিলেন সাংস্কৃতিক অনুরাগী। তিনি অনার্স মাস্টার্স করেছেন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে। তার আগে বাড্ডা আলাতুন্নেছা স্কুল ও ইস্পাহানী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি সম্পন্ন করেন। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে পড়ার সময়ই আবৃত্তি চর্চা শুরু করেন।
তানিয়া খুবই ফ্যাশনেবল, অনুষ্ঠান উপস্থপনায় শাড়ী পছন্দ, থ্রীপিচও পড়েন, ওয়ের্স্ট্রান ড্রেসও তার খুব পছন্দ। তার খেতে পছন্দ ফুসকা, পুদিনা পাতা ও মাল্টার চা তার পছন্দ। তার পছন্দের ফুল হলো বেলী ফুল, কালো ও বেগুনী তার পছন্দের রং। অবসর সময়ে তিনি বই পড়েন, গান শুনেন। ঘুরাঘুরিও তার পছন্দ, ভালো লাগে পাহাড়ী অঞ্চল, বৃষ্টির সময়, শিশির ভেজা কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল ও শীতের সকালে ভাপা পিঠা খাওয়ার মূর্হুত। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথায় তিনি বলেনঃ ভবিষ্যতে দেশে সামাজিক কাজের প্রতি পরিকল্পনা রয়েছে।
অসহায় নির্যাতিত, সুবিধা বঞ্চিত নারী ও পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তাদের পাশে থেকে সহযোগীতা করার ইচ্ছে রয়েছে। মিডিয়ায় কাজের অনুভূতি সম্পর্কে তানিয়া বলেন- আমি উপস্থাপনা কাজটিকে খুব উপভোগ করি। এই পথ চলার জন্য আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সার্পোট পেয়ে আসছি। ভাবলেই গর্ববোধ হয়, এই কাজটির সাথে আমি এক ধরনের মানসিক বন্ধন অনুভব করি। নতুন ধারায় নতুন নতুন বিষয় শেখার আগ্রহ সবসময় প্রত্যাশা করি। ছবিঃ মোস্তাফিজ মিন্টু। মেকাপঃ আবুল কালাম আজাদ পোষাকঃ বিশ্ব রং, স্পর্টঃ দীপ্ত প্রাঙ্গন।