পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লোকশূন্য হয়ে পড়েছে মানুষের ভিড়ে ব্যস্ত থাকা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ঘাট। এই ঘাটকে কেন্দ্র করে চলাচল করা অধিকাংশ লঞ্চ বিকল্প রুটে স্থানান্তর করা হলেও বিপাকে পড়েছেন স্পিডবোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে থাকা ৯৩টি লঞ্চের বেশিরভাগই দেশের অন্যান্য নৌরুটে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া এই রুটে ৯৪টি স্পিডবোট চলাচল করতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া প্রান্তের স্পিডবোটগুলোর বেশিরভাগ বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকরা। তবে বাংলাবাজার ঘাটের কিছু বোট বিক্রি করে দিলেও অর্ধশত স্পিডবোট এখনো রয়ে গেছে।
মো. সলেমান নামে স্থানীয় এক স্পিডবোটচালক বলেন, সেতু চালু হওয়ার পর ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের কিছু বোট বিক্রি করা হয়েছে। আর কিছু বোটের ইঞ্জিন বিক্রির পর বডি রয়ে গেছে। প্রায় দুই ডজন স্পিডবোট এখনো ঘাটে রয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ক্রয় করেছিলাম। এখন ঋণের টাকা দেব নাকি সংসার চালাব বুঝতে পারছি না। ক্রেতা পেলেই বিক্রি করে দেব। তবে সব স্পিডবোট বিক্রি করেও ঋণের টাকা শেষ করতে পারব না। কেননা এখন প্রকৃত দামে এগুলো বিক্রি করা যাবে না।
আব্দুস শুকুর নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, স্পিডবোটচালকদের অনেকেই ঢাকা চলে গেছেন। কেউ রঙের কাজ করেন। এছাড়া গ্রামে অনেকেই ইজিবাইক চালাচ্ছেন।
মজিবর নামের আরেক স্পিডবোটচালক বলেন, স্পিডবোট সব বিক্রি করেও ঋণের টাকা শেষ করা সম্ভব হবে না। ঋণের বোঝা নিয়েই ঘুরতে হবে। সরকারের কাছে দাবি, এখানে দ্রুত একটি পর্যটনকেন্দ্র করে দিলে আমরা আবার ঠিকমতো স্পিডটবোট চালিয়ে বাঁচতে পারব।
বাংলাবাজার এলাকার স্পিডবোটচালক মো. শাহিন আলম জানান, ৪০ সিসি ইঞ্জিনের স্পিডবোটের দাম সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখের মধ্যে, ৭৫ সিসি ইঞ্জিনের বোটের দাম আট লাখ টাকার মতো এবং ২০০ সিসি বিক্রি হয় ১৪ লাখ টাকায়। এর মধ্যে বাংলাবাজার ঘাটের ৪০ সিসি ও ৭৫ সিসির কিছু বোট অর্ধেক দামে বিক্রি করতে পেরেছেন মালিকরা। বাকিগুলো পড়ে আছে। তাছাড়া ৭৫ ও ২০০ সিসির বোট অর্ধেক দামেও কিনতে চান না কেউ।
বাংলাবাজারঘাট স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি ও পাঁচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, কাঁঠালবাড়ী এলাকায় স্পিডবোটের ব্যবসা রয়েছে। একটি স্পিডবোটকে ঘিরে মালিকসহ পাঁচ-ছয়জনের জীবিকার ব্যবস্থা হতো। স্পিডবোট বন্ধের পর শ্রমিকরা বিপাকে পড়ে যান। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের বিভিন্ন নৌরুটে এ ঘাটের কিছু স্পিডবোট স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলোও অন্যত্র চালানোর চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষ যদি এখানে একটি পর্যটনকেন্দ্র করে দেয় তাহলে চালকরা এই বোট চালিয়ে সংসার চালাতে পারবে।