বৃদ্ধ শ্বশুর, স্বামীসহ ছয় সদস্য নিয়ে ঝুমকি বেগমের সংসার। ছিল ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও ডেইরি ফার্ম। কিন্তু নদীভাঙনে সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। শেষ সম্বল সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া জমিটুকুও প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন।
ঝুমকি বেগম মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ আকনের স্ত্রী। নদীর পাড়ে অপলক দৃষ্টিতে বসে আছেন। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওই যে নদী দেখতেছেন না? ওই নদীর পাড়ে আমাগো বাড়িঘর, ফার্মসহ সব আছিল, এখন আর কিছুই নাই। আমার এই জীবনে তিনবার আমাগোর বাড়িঘর নদীর পেটে গেছে। জায়গা-জমি যা ছিল, সব শ্যাষ। কত যে না খাইয়া থাকছি হিসাব নাই। নদীতে যাগো সব লইয়া যায়, তাগো তো আর কোনো কিছুই থাকে না।’
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মো. হামিদ আকন পরিবার নিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু কয়েক দফা ভাঙনের পর তার বসতভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ঘটনার পর তাকে ভূমিহীন হিসেবে ঘোষণা করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করায় হামিদ আকন ও তার স্ত্রী ঝুমকি বেগমের নামে ১১০ নং আলীপুর মৌজায় ২৬ শতাংশ সরকারি খাস জমি কবুলিয়ত দলিল মূলে ভূমিহীন হিসেবে প্রদান করে। পরে সে জমিতে তিনি বসতঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল শুরু করেন। কিন্তু একই গ্রামের প্রভাবশালী কবির খা, হাবি মালত, নজু মালত ও আরিফ মালতসহ বেশ কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। উপায় না পেয়ে তিনি তাদের নামে আদালতে একটি মামলা করেন। পরে আদালত হামিদ আকনকে তার জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু জমি এখনো বুঝিয়ে না দেওয়ায় হামিদ আকন তার পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
ভুক্তভোগী ঝুমকি বেগম ও তার স্বামী হামিদ আকন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু নদী আমার স্বপ্ন নিয়ে গেছে। পরে সরকার থেকে আমাকে কিছু জমি দিয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমি তাদের নামে মামলা করেছি। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। এখন আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা বলেন, হামিদ আকনের বিষয়টি আমি দেখছি।