পুলিশের গুলিতে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ছাত্রদল নেতা নয়নের পরিবারে আহাজারি আর কান্না যেন থামছেই না। বৃদ্ধ বাবা-মা আর স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্বজনরা।
নয়ন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ও চরশিবপুর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
চরশিবপুর গ্রামে নয়নের বাড়িতে দেখা যায়, নয়নের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন পুরো গ্রাম। সারা দিন জেলা-উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নয়নের বাবার পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সন্ধ্যা নামতেই শোকের আবহ যেন আরও ভারী হয়ে উঠেছে। ঢাকা থেকে মরদেহ আসার অপেক্ষা শোককে যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সন্তান হারিয়ে নয়নের মা তাসলিমা বেগম, বাবা রহমত উল্লাহ, স্ত্রী সাজিদা আক্তার আহাজারি করছেন। নয়নের দুই বছর বয়সী শিশুসন্তান আলিফ কিছু বুঝতে না পারলেও মায়ের কান্না দেখে কাঁদছিল।
জানা গেছে, নয়ন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত শনিবার তার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মসূচির কারণে তিনি কালীগঞ্জে যাননি। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নয়নের মরদেহ পল্টনে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে নয়নের লাশ নিয়ে বাঞ্ছারামপুরের উদ্দেশে রওনা দেন নয়নের মামা বেদন মিয়া। রাতে বাঞ্ছারামপুরে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে নয়ন বড়। তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি কারখানায় কাজ করতেন। বড় বোন সুমি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। বড় বোনের একটি ছেলে আছে। বাবা রহমত উল্লাহর বাজারে একটি টং দোকান আছে। স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবাসহ সবার ভরণপোষণ নয়নই রেতেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে সবাই এখন অকূল পাথারে।
নয়নের মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘পুলিশ নয়নকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা এখন কুলহারা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। কেন আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করল?’
নয়নের স্ত্রী সাজিদা আক্তার বলেন, দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় জানালেন, বিএনপির কর্মসূচিতে যাবেন। বাবার বাইরে যাওয়া দেখে ছেলে আলিফ তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। বাইরে থেকে জুস ও খাবার আনার কথা বলে ছেলেকে শান্ত করেন। বিকেলে জানতে পারি, পুলিশের গুলিতে নয়ন মারা গেছে।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পুলিশ আমার স্বামীর পেটে গুলি করেছে। ঢাকায় নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায়। এখন আমার কী হবে? আমার ছেলের কী হবে? পুলিশ কি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? পুলিশ কেন আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করল? আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার ছেলেকে এতিম করার বিচার চাই।’
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রচারপত্র বিতরণের সময় গত শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া (২৬) নিহত হন।