নব্বইয়ের দশকেও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ উপজেলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ছিল বিরেন্দ্র খাল। ২০০ বছরের পুরনো এ খাল দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে ছোট-বড় ট্রলারে পণ্যসামগ্রী আনা-নেয়া করতেন ব্যবসায়ীরা। প্রবহমান পানি এখানকার কৃষিজমির সেচের কাজে ব্যবহার করা হতো। সময়ের পরিবর্তনে পাল্টে গেছে পুরো খালের চিত্র।
অব্যাহত দখল আর দূষণে এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিরেন্দ্র খাল। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় হাটবাজার ও আবাসিক এলাকার পতিত আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে খালের প্রবহমান স্রোতধারা। এসব আবর্জনা পচে নষ্ট হয়ে গেছে পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও রোগবালাই। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে দখলদাররা রামগঞ্জের বীরেন্দ্র খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ করে ব্যবসা ও বসবাস করে আসছেন। ফলে বীরেন্দ্র খালটি মরা খালে পরিণত হয়েছে।
এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে সেচ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিরেন্দ্র খালটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। সবশেষ ১৯৪৭-৪৮ সালে একবার সংস্কারের পর কোনো সংস্কারকাজ করা হয়নি খালটিতে। লক্ষ্মীপুর রহমতখালী খালের সংযোগ থেকে শুরু হয়ে বিরেন্দ্র খালটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এর একটি শাখা রামগঞ্জ হাজীগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে।
অন্য শাখা রামগঞ্জ হাজীগঞ্জ থেকে নোয়াখালী সোনাইমুড়ি হয়ে নদীতে প্রবাহিত হয়েছে। খালের অধিকাংশই রামগঞ্জ পৌরসভার বাজার ও আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। বিরেন্দ্র খালটি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। তবে খালটি নিয়ে উভয় বিভাগের মধ্যে জটিলতা রয়েছে। রামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোঁরা, আবাসিক এলাকা ও বাজারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বিরেন্দ্র খালে। এতে খালটি ভরে যাওয়া ছাড়াও দূষিত হচ্ছে পানি। প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে বর্তমানে খালটি আবর্জনার স্তূপ দিয়ে পূর্ণ। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশপাশের বসবাসকারীদের।
স্মৃতিচারণে কয়েকজন স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ জানান, একসময় ঢাকা থেকে মেঘনা নদী হয়ে ছোট বড় ট্রলারে করে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেয়া করতেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। রামগঞ্জ থানার সামনের ঘাটে ভিড়তো ট্রলারগুলো। বিরেন্দ্র খাল মালামাল পরিবহনের সহজতর মাধ্যম হওয়ায় উপজেলার সোনাপুর বাজারটি ‘রাজধানী’হিসাবে পরিচিত ছিল ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের কাছে।
এছাড়াও কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা এই খালের পানি দিয়ে সোনার ফসল ফলাতেন। নান্দনিক সৌন্দর্যের সে খালটি এখন অবহেলা-অনাদরে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে বিরেন্দ্র খাল অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, জেলা পরিষদ থেকে অস্থায়ী লীজ নেয়ার নাম করে প্রভাবশালী মহল খালের অধিকাংশই দখল করে নির্মাণ করেছেন স্থায়ী বহুতল ভবন ও দোকানপাট,বশতঘর ও ব্রিক ফিল্ড। এতে খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে পরিণত হয়েছে সরু ড্রেনে। অপরদিকে রামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও আবাসিক এলাকায় ড্রেনেজ ও ডাস্টবিন ব্যবস্থা নেই।
ওইসব স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খালটি ভাগারে পরিণত হয়েছে। এতে খালের পানির স্রোত বন্ধ হয়ে ও আবর্জনা পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুসহ মশার উপদ্রব। এতে একদিকে বাড়ছে রোগবালাই, হুমকিতে রয়েছে পরিবেশ। সংস্কার আর খননের অভাবে বর্ষাকালেও আগের মতো পানি আসেনা এক সময়ের খরস্রোতা এ খালে। খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এক সময় ঢাকা থেকে মেঘনা নদী হয়ে ছোট-বড় ট্রলারে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনা-নেয়া করতেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। রামগঞ্জ থানার সামনের ঘাটে ভিড়ত ট্রলারগুলো।
এ খাল দিয়ে কলাবাগান, মৌলভীবাজার ও সোনাপুর উত্তর বাজার এলাকায় সরকারিভাবে নির্মিত ঘাটে চাঁদপুর থেকে ট্রলারে করে আনা মালামাল নামানো হতো। বিরেন্দ্র খাল মালামাল পরিবহনের সহজতর মাধ্যম হওয়ায় উপজেলার সোনাপুর বাজারটি ‘রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ছিল ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের কাছে। এছাড়া কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা এ খালের পানি দিয়ে ফসল ফলাতেন। নান্দনিক সৌন্দর্যের সে খাল এখন অবহেলা-অনাদরে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে রামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন হাটবাজার ও আবাসিক এলাকায় ড্রেনেজ ও ডাস্টবিন ব্যবস্থা নেই। ওইসব স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে খালে পানির স্রোত বন্ধ হয়ে ও আবর্জনা পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুসহ মশার উপদ্রপ। এদিকে কয়েকজন কৃষক জানান, এক সময়ের এতিহ্যবাহী খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ইরি-বোরোসহ কৃষিকাজে এ খালের পানি ব্যবহার করা হতো।
এতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে খালের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। এতে পানির অভাবে অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছে। রামগঞ্জ পৌরসভা ও প্রশাসনের উদাসীনতায় আজ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই কৃষি বাঁচাতে খালটি সংস্কার করা জরুরি। রামগঞ্জ পৌরসভা মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল খায়ের পাটোয়ারী জানান, বিরেন্দ্র খালটির জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়ে তাদের চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। তাছাড়া খালের যে পরিস্থিতি, একা সংস্কার করা সম্ভব নয়। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন, খাল সংস্কারকারি সংস্থা বিআরডি ও ওয়াবদ বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় খালটি পুনর্জীবিত করা সম্ভব।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে খালটি পরিষ্কারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবীবা মীরা জানান, খালটির ব্যাপারে জানতে আমি উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে পাঠাবো। খালটির মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোধ রয়েছে শুনেছি।
এসময় তিনি খালটি উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাজাহান মিয়া জানান, উচ্ছেদের বিষয়ে পুরো লক্ষ্মীপুর জেলার সব উপজেলায় আমরা ইতোমধ্যে খালটি উদ্ধার ও সংস্কার করার জন্য জেলা পরিষদ থেকে চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছে ও ডিসি অফিসে জমা হয়েছে। রামগতি আলেকজেন্ডার থেকে উচ্ছেদের অভিযানও শুরু করেছিলাম। পরবর্তীতে করোনাভাইরাস আসার কারনে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। সরকার আবারও সিদ্ধান্ত দিলে আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো।