কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। ডলার সংকটের কারণে পর্যাপ্ত কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। এই সংকট কবে কাটবে তা বলতে পারছেন না বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৫ মে উৎপাদনে এলেও পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে পারছে না। এর মধ্যেই কয়লার সংকটে পড়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও জুনের ৩-৪ তারিখের দিকে পুরো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আজ রোববার আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি ডলার লাগবে। কিন্তু তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) ডলার নিয়ে কি করছে বুঝতে পারছি না। দেখা যাক।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক অল্প অল্প করে ডলার দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কয়লা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে যে পরিমাণ ডলার লাগে সে পরিমাণ দিতে হবে। ডলার নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ে যাচ্ছি।’
এ দিকে বাংলাদেশ–ভারতের যৌথ বিনিয়োগে নির্মাণ করা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদনে এসে কয়লা সংকটে পড়ে বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৫ মে পুরনায় উৎপাদনে আসলেও কয়লার অভাবে পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না।
এখন কয়লা সংকটে বন্ধ হওয়ার পথে আছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা। কয়লার পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় গত ২৫ মে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে এখানকার দুইটি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট। দ্বিতীয় যে ইউনিটটি এখনো স্বল্প উৎপাদন সক্ষমতায় চলছে সেটিও আগামী মাসের ৩-৪ তারিখের দিকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, কয়লা সরবরাহকারীদের ডলার সংকটে বকেয়া পরিশোধ করতে না পারার কারণে সরবরাহকারী কয়লা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এর ফলে কয়লার পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় পায়রা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দুইটা ইউনিটের একটি বন্ধ রাখে।
পিডিবি জানিয়েছে কয়লা সরবরাহকারীদের বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। পাওনা টাকা দেব–দিচ্ছি করে দিতে না পারায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতে প্রভাব পড়ছে না কি না জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, ইতিমধ্যে পায়রা একটি ইউনিট বন্ধ হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে।
বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) বা পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটা ইউনিটের একটি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী মাসে তিন-চার তারিখের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে যাবে।
কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র কত দিন বন্ধ থাকতে পারে জানতে চাইলে এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা যদি আজই কয়লা আনার জন্য ঋণপত্র খুলি তাও কয়লা জেটিতে আসতে কমপক্ষে ২০-২৫ দিন সময় লাগব। সেই হিসেবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কমপক্ষে চার সপ্তাহ বন্ধ থাকতে পারে।’