অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের নামটা দু’দিন আগেও বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটভক্তই জানতেন না। তবে আইরিশ এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত একমাত্র টেস্টে পারফর্ম করে নিজেকে চিনিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সাদা পোশাকে বল-ব্যাট দুই জায়গাতেই দিয়েছেন নিজের সক্ষমতার পরিচয়। স্বাগতিক টাইগারদের বিপক্ষে নিশ্চিত হারের ম্যাচে ম্যাকব্রাইন শেষ পর্যন্ত আইরিশদের আশা দেখিয়েছেন।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানমানা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী উদীয়মান আইরিশ ক্রিকেটার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন এখন পর্যন্ত খেলেছেন মোটে ৩টি টেস্ট। অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড সবমিলিয়ে ৪টি টেস্ট খেলেছেন। টাইগারদের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে তারা টেস্টে নেমেছিলেন ৪ বছর পর। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টাইগারদের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করেছেন ম্যাকব্রাইন। তিনি ব্যাট হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত।
অনেকদিন ধরে আমরা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটও খেলিনি, এমনটা হওয়ারই কথা। এরপরও আমরা যেভাবে লড়াই করেছি, সে কারণে আমি খুবই খুশি। একটু আক্ষেপ আছে, সেঞ্চুরি করতে পারিনি। আরও দু-চারটা উইকেট নিতে পারলে ভালো লাগত। তবে এখানেই শেষ নয়, শ্রীলঙ্কায় আমাদের জন্য এরকম আরও ম্যাচ অপেক্ষা করছে। আমি আশাবাদী।
আইরিশ স্পিনার ম্যাকব্রাইন
ম্যাকব্রাইন দ্বিতীয় ইনিংসে তো পুরোদস্তুর ব্যাটারই বনে গেছেন। টেস্টে বাংলাদেশের দুই পরীক্ষিত স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানদের ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছেন তিনি। খেলেছেন ৭২ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস। এর আগে প্রথম ইনিংসে তিনি করেছিলেন ১৯ রান। পরবর্তীতে আইরিশ এই স্পিনার বল হাতেও টাইগাদের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫ উইকেট এবং পরের ইনিংসে ম্যাকব্রাইন শিকার করেছেন একটি উইকেট।
এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২১৪ রানে গুটিয়ে যায় টেস্টে অনিয়মিত এই দলটি। তবে দীর্ঘদিন পর টেস্টে সুযোগ পাওয়া দলটি পরের ইনিংসে দারুণভাবে কামব্যাক করে। কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা তারা পরের ইনিংসে দেখিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে আইরিশদের টপকে লিড নেয় বাংলাদেশ। অথচ দলের পিছিয়ে পড়া সেই সময়েও সফল ম্যাকব্রাইন। তিনি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমের মতো ব্যাটারদের উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বের যে কোনো বোলারের জন্য এটা ড্রিম স্পেল, কেননা বিশ্ব ক্রিকেটে সাকিবরা যে এখন অন্যতম পরাশক্তি দলের নামী ক্রিকেটার। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ হারলেও নিজেদের লড়াইয়ের মানসিকতায় খুশি ম্যাকব্রাইন। অবশ্য সেঞ্চুরি করতে না পারার একটা আক্ষেপও এই স্পিনারের মনে থেকে গেছে।
সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘একটু ক্লান্ত। টেস্ট ক্রিকেট তো বটেই, অনেকদিন ধরে আমরা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটও খেলিনি, এমনটা হওয়ারই কথা। এরপরও আমরা যেভাবে লড়াই করেছি, সে কারণে আমি খুবই খুশি। একটু আক্ষেপ আছে, সেঞ্চুরি করতে পারিনি। আরও দু-চারটা উইকেট নিতে পারলে ভালো লাগত। তবে এখানেই শেষ নয়, শ্রীলঙ্কায় আমাদের জন্য এরকম আরও ম্যাচ অপেক্ষা করছে। আমি আশাবাদী।
সতীর্থদের পারফর্মেও বেশ খুশি ম্যাকব্রাইন। একইসঙ্গে দেশের ক্রিকেটভক্তরা কীভাবে বিষয়টি নিয়েছে সেই প্রসঙ্গে এই স্পিনার বলছেন, ‘দেশে কী হবে তা বলতে পারব না। তবে আমি যেটা বলতে পারি তা হলো আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আছে। যেমন হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকাররা এমন বিরুদ্ধ কন্ডিশনে যেভাবে খেলেছে, তাতে একটা বার্তা গেছে যে আমাদেরও বেশ ভালো খেলোয়াড় আছে।’
তবে লাল বলের ক্রিকেটে আরো বেশি ম্যাচ খেলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন ম্যাকব্রাইন, ‘আমরা যত বেশি দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলব, তত বেশি আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হবে এবং তত বেশি ভালো খেলতে পারব। বাংলাদেশ সফর আমাদেরকে এটা বুঝিয়েছে।’
চলতি মাসেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে দুটি টেস্ট খেলবে আয়ারল্যান্ড। তবে সেখানে বাংলাদেশ থেকে সব ইতিবাচক দিকগুলোই নিয়ে যেতে চান ম্যাকব্রাইন, ‘এই সফর শেষ হতে না হতেই আমাদের শ্রীলঙ্কা সফর। এখানের ইতিবাচক দিকগুলো আমরা সে সফরে নিয়ে যেতে চাই। আমরা অল্প রানে চারটা উইকেট খোয়ানোর পরও যেভাবে লড়াই করেছি, তাতে আমাদের লড়াকু মানসিকতাই ফুটে উঠেছে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ব্যাট করতে নেমে হোঁচট খেয়েছিল আয়ারল্যান্ড দল। ২৭ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে দলটির স্কোরবোর্ড থমকে গিয়েছিল। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আয়ারল্যান্ড দলকে সামনের দিকে এগোতে সাহস দিচ্ছে বলে মত ম্যাকব্রাইনের, ‘এই পারফরম্যান্স আমাদের বড় দলের মুখোমুখি হওয়ার সাহস দিচ্ছে, তাদের বিপদে ফেলার মতো আত্মবিশ্বাস যোগান দিচ্ছে। আশা করি মাঠের খেলাতেও আমরা এটার ছাপ ফেলতে পারব।’