দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সম্মেলন ডাকলেও এখনই সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না জাতীয় পার্টির।
এই সময়ে তার সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনে প্রত্যাহার করানো নিয়ে সমঝোতা চালিয়ে যেতে চায় দলটি। আর তার সঙ্গে কথা বলতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব আদিলুর রহমানকে। কথা বলার পরও যদি রওশন এরশাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তাহলে দলের প্রেসিডিয়াম মিটিংয়ে তার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে একটানা চলা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক উপস্থিত জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, রওশন এরশাদ এমনিতে কারও কথা শোনেন না। তারপর দলের যুগ্ম মহাসচিব ও প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগ্নে আদিলুর রহমান চায়, ব্যাংককে চিকিৎসাধীন মামী রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনে করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করানো যায় কি না চেষ্টা করতে।
তখন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ঠিক আছে তুমি তার সঙ্গে কথা বলো। যেহেতু তুমি আত্মীয় এবং সাদ এরশাদের (রওশন এরশাদের ছেলে) সঙ্গে তোমার কথা হয়, দেখো কী করা যায়। তিনি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে, তাহলে তো ভালো। আর যদি তিনি পার্টির বাইরে গিয়ে কিছু লোককে নিয়ে সম্মেলনে করে, তাহলে পার্টির পরবর্তী প্রেসিডিয়ামের বৈঠক করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ম্যাডাম রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আদিলুর রহমানকে। এখন তিনি ফোনে কথা বলবেন, নাকি ব্যাংককে গিয়ে কথা বলবেন সেটা তার বিষয়। এই প্রক্রিয়া নিয়ে মিটিংয়ে কোনো কথা হয়নি।
পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, রওশন এরশাদকে আমাদের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের মায়ের মতো সম্মান করেন। ফলে, এখনও যেহেতু সময় আছে তাই রওশন এরশাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না তিনি। আর রওশন এরশাদে সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন তাদের আত্মীয় আদিলুর রহমান। দেখা যাক তিনি কথা বলে কোনো সমঝোতা করতে পারেন কি না। আর যদি তিনি (রওশন) দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সম্মেলন করেন, তাহলে পার্টির পরবর্তী প্রেসিডিয়ামের মিটিং তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, রওশন এরশাদ তো কারও কথা শুনেন না। তার বিষয়ে তো হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আমাদের চেষ্টা থাকবে তার সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনা। তা হলে তিনি সম্মেলন করে তো আলাদা হয়ে যাবে। আলাদা পার্টি করবে, এটাই হবে। তখন তো আর কিছু করা লাগবে না তার বিষয়ে।
এই নেতা আরও বলেন, সরকার ইন্ধন দিলে রওশন এরশাদ সম্মেলন করতে পারবে। তখন হয়তো কিছুদিন তারা চাঙাও থাকবে। দলের কিছু সংসদ সদস্যও তার সঙ্গে যাবে। আর সরকার ইন্ধন না দিলে রওশন এরশাদ সম্মেলনও করতে পারবে না। দলের কেউ তার সঙ্গে যাবে না। আমার না গেলে তিনি কাকে নিয়ে সম্মেলনে করবেন?
জাপার এই নেতা আরও বলেন, আজকে বৈঠক ২০ জন সংসদ সদস্য ছিলেন। তারা এবং প্রেসিডিয়ামের সবাই বলেছেন- রওশন এরশাদ ভুল পথে আছেন। তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন তাহলে তিনি আলাদা হয়ে যাবেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
বৈঠক সূত্র জানান, নির্বাচনের এখনও এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। ফলে, এই নিয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে চায় না জাতীয় পার্টির। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তখন পরিস্থিতি ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে, জাতীয় পার্টির কোন দিক থাকে। এছাড়া আজকের বৈঠকে আগামী নভেম্বর মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলের যেসব সম্মেলনে বাকি আছে তা শেষ করারও সিদ্ধান্ত হয়।
দলের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে (জি এম কাদের) বাদ দিয়ে আগামী ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলনের ডাক দেন রওশন এরশাদ। অন্যদিকে, জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান বলছেন, দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক রওশন এরশাদের সম্মেলন ডাকার এখতিয়ার নেই। এরপরই দলে রওশনপন্থি প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করেন তিনি। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে অন্তর্কোন্দল দেখা দিয়েছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছে দুটি গ্রুপে।