বগুড়ার শেরপুরে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় আপস রফার লাখ টাকা না পেয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। নিহতরা হলেন- শেরপুর শহরের হাজিপুর পাড়া এলাকার বেল্লাল হোসেনের ছেলে মো. জিসান (২২) ও তার স্ত্রী মিম আক্তার (১৯)।
এই ঘটনায় শনিবার (২১ জানুয়ারি) বগুড়া সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর আগে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের শুভগাছা গ্রামের গোলজার হোসেনের মেয়ে মিমের সঙ্গে জিসানের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের চার বছর আগে শুভগাছা গ্রামের ছামিদুল হকের ছেলে এনামুল হক স্থানীয় মাঠের একটি ভুট্টাক্ষেতে মেয়েটিকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালান।
ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সম্প্রতি এক লাখ টাকার বিনিময়ে বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপস রফা হয়। গত ১৯ জানুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে ওইদিনই আপস-রফার টাকা আনতে শ্বশুরবাড়িতে যান জিসান। এ সময় স্ত্রী মিমও তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু টাকা চাওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি টাকা না দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর হাজিপুরের বাসায় ফিরে আসেন তারা।
তবে এই ঘটনায় জিসান-মিম দম্পতির মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে জিসান ও মিম একসঙ্গে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে ছটফট করতে থাকেন। ঘটনাটি জানার পর পরিবারের লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাৎক্ষণিক বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে স্ত্রী মিম আক্তার এবং তার ১৫ মিনিট পর স্বামী জিসান মারা যান।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ছেলে জিসানকে হারিয়ে বাবা বেল্লাল হোসেন পাগলপ্রায়। তাই ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে টাকা-পয়সা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্বীকার করেছেন।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে বগুড়া সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দাফনের জন্য পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই দম্পতির আত্মহত্যার নেপথ্যে কী কারণ সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের মৃত্যুর পেছনে কোনো প্ররোচনার ঘটনা থাকলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।