‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্সে কারি এ্যাওয়ার্ডের প্রধান উদ্যোক্তা মাস্টার শেফ মোঃ খলিলুর রহমান-এর বক্তব্যেবলেন। আমি একজন প্রবাসী-উদ্যোক্তা এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিশেষ ঘোষণা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে আমি নিউইয়র্ক থেকে মাতৃভূমি বাংলাদেশে এসেছি এবং আজ আপনাদেও সামনে হাজির হয়েছি।
আমরা সেই বিশেষ ঘোষণাটি দেবো- তবে তার আগে আমি আমার নিজের সম্পর্কে দু’চারটি কথা আপনাদের সামনে বলতে চাই। আমি মোঃ খলিলুর রহমান। আমি একজন গর্বিত বাংলাদেশি; তবে পেশাগত কারণে গত বেশ ক’বছর যাবত আমেরিকার নিউইয়র্কে বসবাস করছি। আমি পেশায় একজন শেফ। নিউ ইয়র্কের অত্যন্ত সুপরিচিত খলিল বিরিয়ানি হাউজের প্রতিষ্ঠাতা, চিফ শেফ এবং সিইও। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে খলিল বিরিয়ানি হাউজ নিউ ইয়র্ক তথা পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত খাবারের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যেটি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যপ্রেমীদের মোস্ট ফেভারেট প্লেস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই নয়, স্থানীয় আমেরিকানসহ পৃথিবীর নানান দেশের মানুষের কাছেও আমাদের খাবারসমূহ সমান জনপ্রিয়।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা জেনে থাকবেন যে, শুধুমাত্র জনপ্রিয়তাই নয়, সুস্বাদু খাবার, খাবারের মান এবং অনন্য গ্রাহক সেবার স্বীকৃতি হিসেবে খলিল বিরিয়ানি হাউজের আছে উল্লেখযোগ্য অর্জন। গ্রাহক সেবায় অনন্য অবদানের জন্য খলিল বিরিয়ানি হাউজের স্বত্তাধিকারি এবং প্রধান শেফ হিসেবে আমি অর্জন করেছি যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রদত্ত সম্মানজনক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফ টাইম এ্যাওয়ার্ড’। এই তথ্যও হয়তো আপনাদের অনেকেরই জানা। আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করছি। কারণ, ২০২২ সালে আমি ‘কারি শিল্পের অস্কার’ হিসেবে অভিহিত ‘বৃটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড’ও অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। যা নিঃসন্দেহে একজন বাংলাদেশি হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। সবার ভালোবাসা এবং গ্রাহক সেবায় খলিল বিরিয়ানি হাউজের ঐকান্তিক চেষ্টা যা সম্ভব হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মান ও গ্রাহকের পছন্দ আর ভালোবাসা আমাকে প্রতিনিয়ত ভালো করতে অনুপ্রাণিত এবং আরও দায়িত্বশীল করে, আপনারা জেনে অবাক হবেন, আমাদের যাত্রা কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ৫ বছরের কিছু বেশ সময় আগে ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্কে খলিল বিরিয়ানি হাউজ যাত্রা শুরু করে। আর এই অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের খাবার মানুষের পছন্দের শীর্ষে চলে আসে। খাদ্যপ্রেমী ও গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান পছন্দের ধারাবাহিকতায় খলিল বিরিয়ানি হাউজের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে একে একে যাত্রা শুরু করেছে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
যার মধ্যে আছে খলিল হালাল চায়নিজ, খলিল সুইটস অ্যান্ড বেকারি এবং আমেরিকান ফাস্টফুড খলিল পিৎজা এন্ড গ্রীল। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে এমন সাফল্যের কারণে প্রায়শই আমি মানুষের কাছ থেকে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হই। অনেকেই আমার সফলতার রহস্য কি সেটা জানতে চান। আসলে রহস্য বলতে তেমন কিছু নেই। যা আছে, তা হলো প্রতিনিয়ত মানুষকে ভালো খাবার উপহার দেওয়ার চেষ্টা এবং শতভাগ সততা। কুলিনারিকে আমরা কখনো শুধু ব্যবসা হিসেবে দেখিনি। কারণ মুনাফা অর্জনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এটি আমাদের কাছে একইসঙ্গে সেবা এবং শিল্প। মানুষকে শৈল্পিকভাবে সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন খাদ্য সেবা দেয়া আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শুরু থেকেই আমরা এই তিনটি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। কারণ এটি আমার কাছে যতটা না পেশা তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি নেশা এবং ভালোলাগা। মানুষকে সুস্বাদু এবং ভালো খাবার পরিবেশনের নেশা থেকেই আমি এই পেশায় এসেছি। তা না হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংকে অনার্স-মাস্টার্স করা এই আমার হয়তো অন্য পেশায় যাবার কথা ছিল। কিন্তু নেশা এবং নিয়তি আমাকে বানিয়েছে শেফ। তবে আমি আমার আজকের এই অবস্থান নিয়ে সম্মানিত এবং গর্বিত। কারণ এই পেশা আমাকে দিয়ে সম্মান, প্রতিষ্ঠা এবং অগণতি মানুষের ভালোবাসা। আর তাই প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের সামনে নতুন নতুন খাবার নিয়ে হাজির হওয়ার ব্যাপারটিতে আমি রোমাঞ্চ অনুভব করি। ব্যাপারটি আমাকে আনন্দ দেয়।
আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, সাম্প্রতিককালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামানুসারে ‘বাইডেন বিরিয়ানি’ নামে নতুন একটি ডিশ চালু করেছি। ব্যতিক্রমী এই ডিশটি আমেরিকায় বেশ আলোচিত হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম আরও কিছু ডিশ প্রচলনের ইচ্ছা আমাদের আছে। নিজের সম্পর্কে অনেক কথা বললাম। আপনাদের আর অপেক্ষায় রাখবো না। এবার আসল কথাটা বলি। যে ঘোষণাটি দেওয়ার জন্য আজকের এই বিশেষ আয়োজন। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, এই ঘোষণাটি আমি প্রথমে লন্ডনে এবং পরবর্তীতে নিউইয়র্কেও দিয়েছি।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে নিজের মাতৃভূমিতে যদি ঘোষণাটি না দিতে পারি তাহলে অপূর্ণতা থেকে যাবে। কারণ যে আয়োজনের জন্য এই ঘোষণা তার একটি বড় অংশ জুড়ে আছে বাংলাদেশ। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, বেশ অনেক দিন যাবত একটি স্বপ্ন আমি নিজের মধ্যে লালন করছি। যা অবশেষে বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। আর সেই বিষয়টি জানানোর জন্যই আজকের এই আয়োজন। আপনাদের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, ‘বৃটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড’ এর আদলে ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ড’ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। যে এ্যাওয়ার্ডের প্রধান উদ্দেশ্যই হবে বাংলাদেশে খাবারকে বিশ^ দরবারে তুলে ধরা এবং জনপ্রিয় করা।
২০২৩ সালের শেষদিকে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে জমকালো ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ড ২০২৩’ এর প্রথম আয়োজন। আর ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ড’কে সস্পূর্ণভাবে সাপোর্ট দেবে ‘বৃটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড’ কর্তৃপক্ষ। ‘বৃটিশ কারি এওয়ার্ড’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজনগত দিক দিয়ে ‘আমেরিকান কারি এ্যাওয়ার্ড’ অনেকটা ‘বৃটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড’-এর আদলেই হবে। তবে কিছু কিছু জায়গায় উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্যও থাকবে।