আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশ এসওয়াতিনির রাজা মসোয়াতি তৃতীয়র পুরোনো একটি ভিডিও নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওতে তাকে ১৫ স্ত্রী ও সঙ্গীদের বিশাল বহরসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে পৌঁছাতে দেখা যায়। গত জুলাইয়ে প্রথম প্রকাশিত এই ভিডিওতে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ব্যক্তিগত বিমান থেকে নামছেন রাজা মসোয়াতি। আর তার পেছনে সারিবদ্ধভাবে হাঁটছেন অভিজাত পোশাকে সজ্জিত নারীরা।
এসওয়াতিনির সাবেক নাম উল্লেখ করে ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ১৫ স্ত্রী ও ১০০ জন কর্মচারীসহ আবুধাবিতে পৌঁছেছেন সোয়াজিল্যান্ডের রাজা। তার বাবা রাজা সোবুজা দ্বিতীয়র ছিল ১২৫ স্ত্রী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজা মসোয়াতি তৃতীয় ওই সফরে আবু ধাবিতে তার ৩০ জন সন্তানকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন। রাজপরিবারের আগমন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কয়েকটি টার্মিনাল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ভিডিওটি সামাজিক যোগােযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার শুরু হয়। অনেকেই রাজপরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপন আর দেশের সাধারণ জনগণের দারিদ্র্যের ভয়াবহ বৈষম্য তুলে ধরেন।
অনেকেই রাজার জাঁকজমকপূর্ণ এই সফর নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী লেখেন, দেশে জনগণ যখন বিদ্যুৎ পায় না, তখন রাজা ব্যক্তিগত বিমানে করে বিদেশ সফর করছেন। আরেকজন প্রশ্ন তুলেছেন, এসওয়াতিনি কি এত ধনী রাষ্ট্র যে রাজা ব্যক্তিগত বিমানে চড়তে পারেন?
আরেকজন লিখেছেন, এই ব্যক্তি প্রাইভেট বিমানে ঘোরেন অথচ তার দেশের মানুষ অনাহারে মারা যায়। কেউ কেউ হাস্যরসাত্মক মন্তব্যও করেছেন। একজন লিখেছেন, রাজার এত স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য আলাদা কোনও সমন্বয়ক আছে কি না?
• রাজ সম্পদ
আফ্রিকার একমাত্র পূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী রাজা হিসেবে মসোয়াতি তৃতীয় ১৯৮৬ সাল থেকে এসওয়াতিনি শাসন করে আসছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসওয়াতিনির রাজার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
অন্যদিকে, দেশটিতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ধসে পড়েছে। সরকারি হাসপাতালে ওষুধের তীব্র সঙ্কটের কারণে নাগরিকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছেন এবং অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটিতে বেকারত্ব বেড়ে ২৩ শতাংশ থেকে ৩৩.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। যদিও দেশের নির্মাণ, পর্যটন, কৃষি, টেলিযোগাযোগ ও বনজ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও শেয়ারের মালিকানা রয়েছে রাজা মসোয়াতির।
আফ্রিকার ছোট্ট এই দেশটির রাজা মসোয়াতি ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠান ও বিলাসী জীবনযাপনের জন্য ব্যাপক পরিচিত। প্রতিবছর ‘‘রিড ড্যান্স’’ নামের এক প্রাচীন নৃত্য উৎসবে নতুন করে একজন স্ত্রী নির্বাচন করেন তিনি। ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে নতুন স্ত্রী বেছে নেওয়ার এই আয়োজন নিয়ে অনেকে প্রশংসা করলেও দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।
এসওয়াতিনির প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এমন একটি দেশে রাজপরিবারের সীমাহীন ঐশ্বর্য আর বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে তীব্র সমালোচনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 
























