দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থি অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে রংপুরে বিএনপি ও যুবদলের আট নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রোববার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির ছয় নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতকৃরা হলেন, বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক, উপজেলার ১০ নম্বর মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক, ১৩ নম্বর কালুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুল হক এবং ১৪ নম্বর বিষ্ণপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত আরেক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বদরগঞ্জ পৌর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. সুমন সরদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হক কয়েলকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল ৫ এপ্রিল শনিবার বদরগঞ্জে দোকান ঘর ভাড়াটিয়া টিন ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম ও দোকান ঘর মালিক ইশতিয়াক বাবু দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উপজেলার ১০ নম্বর মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক লাভলু মিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় সাংবাদিক সহ আহত হয় অন্তত ২০ জন।
এ সংঘর্ষের ঘটনার জেরে শনিবার বিকেলে বিএনপির তিন নেতার বিরুদ্ধে দখল দারিত্বের অভিযোগ এনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় জেলা বিএনপি।
তিন নেতা হলেন- রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার । উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১৩ নম্বর কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক।
জেলা বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে জানানো হয়, দায়িত্বশীল পদে থাকার পরেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দখলদারিত্ব ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। যার সাক্ষী জেলা বিএনপির কাছে আছে এবং উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বদরগঞ্জ শহীদ মিনার সংলগ্ন দোকান ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিনের ব্যবসা করছেন জাহিদুল ইসলাম। গত মাসে হঠাৎ জাহিদুল ইসলামকে দোকান ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন, দোকান মালিক ইশতিয়াক বাবু। দোকানের চুক্তিবদ্ধে আগামী ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও জাহিদুল ইসলাম দোকান জামানতের ৩৫ লাখ টাকা ফেরত শর্তে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। দোকান মালিক জামানতের ৩৫ লাখ টাকা দিতে নারাজ এবং দোকান নিজে না ছেড়ে দিলে জোর করে ছাড়িয়ে নেওয়ার হুশিয়ারী দেন। এরই প্রেক্ষিতে দোকান মালিক ইশতিয়াক বাবু তার লোক জন নিয়ে গত (২ এপ্রিল ) সন্ধ্যায় দোকান ঘর ভাংচুর এবং লুটপাট করে। ভাড়াটিয়া টিন ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামকে বেধরক মারপিট করে। বর্তমানে জাহিদুল ইসলাম বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় টিন ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের পক্ষ নেন বদরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরোয়ার জাহান মানিক সহ সকল ব্যবসায়ীরা এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১৩ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক কথা বলে, জামানতের টাকা না দিয়ে ভাড়াটিয়াকে মারধর এবং দোকানভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে বদরগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ মিনারের সামনে ভাড়াটিয়া টিন ব্যবসায় জাহিদুল এর পক্ষে মানববন্ধনের আয়োজন করে মানিক চেয়ারম্যান গ্রুপ ও বদরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরোয়ার জাহান মানিক।
এসময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের লোক জন অতর্কিত হামলা করে মানববন্ধনের ব্যানার ছিড়ে ফেলেন এবং মাইক ভাংচুর ও মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলে। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে গ্লোবাল টেলিভিশনের রংপুর প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব বদরগঞ্জ এর সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী নুরু, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফুয়াদ হোসেন,বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন সাইফুল ইসলাম মুকুল, নিউজ ২৪ এর ক্যামেরা পার্সন ফারুক হোসেন, সাংবাদিক আতিক রহমান, যায়যায়দিন পত্রিকার বদরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি মেজবাউল কবির সবুজ সহ স্থানীয় কয়েক জন সাংবাদিকের উপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরাও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন মোহাম্মদ আলী সরকারের সমর্থকরা। এতে সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে ২০ জন।
দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে পুরো পৌর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।