ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে যে মূল্যায়ন অলি আহমদের

দেশের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বরারই সোচ্চার থাকেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

এরই অংশ হিসেবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পতনের পর দেশের রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

প্রশ্নোত্তরে অলি আহমদ বলেন, তারা খুব দীর্ঘ গতিতে চলছে। আরও দ্রুতগতিতে চলা উচিৎ ছিল। তাদের কাছ থেকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পর্বত সমান। কিন্তু জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তারা ভঙ্গ করেছে। তাদেরকে আরও সুপরিকল্পিতভাবে; নির্দিষ্টভাবে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কী করণীয়-প্রধান উপদেষ্টার উচিত ছিল প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটা রূপরেখা তৈরি করা এবং এই রূপরেখা তৈরি করে প্রত্যেকটা মন্ত্রীকে কাগজটা হাতে ধরিয়ে দেওয়া। তুমি এই লাইনটা ফলো করো; এই লাইনটা ফলো করে তোমার কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করো। তাহলে অধিক সফলতা আসত এবং এটা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, একটা পোস্টিং করতেও দুই সপ্তাহ চলে যায়; একটা পোস্টিং ক্যানসেল করতে পাঁচ সপ্তাহ চলে যাচ্ছে-এভাবে তো হয় না। প্রত্যেক মন্ত্রীকে অর্থাৎ যারা উপদেষ্টা হয়েছে তাদেরকে একটা রূপরেখা দেওয়া হওয়া উচিত ছিল-যে তোমাকে এই কাজগুলো এতদিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। যেমন আমি যখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেলাম উনাকে কতগুলো পরামর্শ দিয়েছিলাম-যে আপনি কমিটিগুলো করেছেন খুবই ভালো করেছেন।

কমিটির কাজ হবে বড় বড় এক্সপার্টদেরকে নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনা করবে; আলোচনা করে তারা একটা রূপরেখা রেডি করবে। এই রূপরেখা রেডি করে তাদের মেম্বারদের সঙ্গে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটা চূড়ান্ত রূপ নেবে। চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার পরে এটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সার্কুলেট করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো এই খসরা পেপারের ওপরে তাদের মন্তব্যগুলি দেবে।

কিন্তু ঠিক উলটাটা হয়েছে- এই কমিটিগুলি তার ধারের কাছেও যায় নাই। কমিটিগুলি প্রথম দিন থেকেই রাজনৈতিক দলের মন্তব্য চাচ্ছে। একটা রূপরেখা তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দিলে তাহলে দেশ উপকৃত হতো এবং তারপরে রাজনৈতিক দলের মতামত পাওয়ার পরে লিখিতভাবে পুরো দেশে একটা কর্মশালা হওয়া উচিত ছিল দুই তিন দিনের জন্য।

বিভিন্ন জেলা থেকে যারা এ বিষয়ে এক্সপার্ট তাদের ডেকে দুইদিন তিনদিন এটার ওপরে ডেলিব্রেশন হবে; তাদের মন্তব্য নেবে- তাহলে কোনো রাজনৈতিক দল আর দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ পেত না। সমগ্র জাতিকে এটাতে ইনভল্ভ করা হতো- প্রথমে ইনভল্ভ করলেন আপনি এক্সপার্টদেরকে, তারপরে আপনি ওই কমিটির মেম্বারদেরকে, তারপরে রাজনৈতিক দলকে, তারপরে কর্মশালার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের এক্সপার্টদেরকে; তাহলে এখানে রাজনৈতিক দলের আর কোনো বিষয় থাকতো না; কেউ আপত্তি করার মত সুযোগ থাকতো না। কিন্তু এ কাজটা কোন কমিটি করে নাই।  তারা নিজের ইচ্ছামত একটা চিঠি ইস্যু করে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে দায়সারা গোছের কাজ করছে। তারা নিজেই কাজ জানে না আমাদের কাছ থেকে কী কাজ নেবে।

আপনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে চান কিনা বা এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

জবাবে অলি আহমদ বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য নিতে পারি। কারণ বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমি ছাড়া বর্তমানে কারো নাই- আমি এটা গর্ব করে বলব না- শহিদ জিয়ার সঙ্গে আমি পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি একসঙ্গে- তিনবার মন্ত্রী ছিলাম, ছয়বার এমপি ছিলাম- এই অভিজ্ঞতা নিয়ে এর ধারের কাছে বাংলাদেশে কেউ নেই। রাষ্ট্র পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কারো নাই। হয়তো মন্ত্রী পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আমি ছাড়া বর্তমানে কারো নেই; সেই দক্ষতাও নেই।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে যে মূল্যায়ন অলি আহমদের

আপডেট সময় ০৪:৫৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

দেশের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বরারই সোচ্চার থাকেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

এরই অংশ হিসেবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পতনের পর দেশের রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

প্রশ্নোত্তরে অলি আহমদ বলেন, তারা খুব দীর্ঘ গতিতে চলছে। আরও দ্রুতগতিতে চলা উচিৎ ছিল। তাদের কাছ থেকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পর্বত সমান। কিন্তু জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তারা ভঙ্গ করেছে। তাদেরকে আরও সুপরিকল্পিতভাবে; নির্দিষ্টভাবে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কী করণীয়-প্রধান উপদেষ্টার উচিত ছিল প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটা রূপরেখা তৈরি করা এবং এই রূপরেখা তৈরি করে প্রত্যেকটা মন্ত্রীকে কাগজটা হাতে ধরিয়ে দেওয়া। তুমি এই লাইনটা ফলো করো; এই লাইনটা ফলো করে তোমার কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করো। তাহলে অধিক সফলতা আসত এবং এটা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, একটা পোস্টিং করতেও দুই সপ্তাহ চলে যায়; একটা পোস্টিং ক্যানসেল করতে পাঁচ সপ্তাহ চলে যাচ্ছে-এভাবে তো হয় না। প্রত্যেক মন্ত্রীকে অর্থাৎ যারা উপদেষ্টা হয়েছে তাদেরকে একটা রূপরেখা দেওয়া হওয়া উচিত ছিল-যে তোমাকে এই কাজগুলো এতদিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। যেমন আমি যখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেলাম উনাকে কতগুলো পরামর্শ দিয়েছিলাম-যে আপনি কমিটিগুলো করেছেন খুবই ভালো করেছেন।

কমিটির কাজ হবে বড় বড় এক্সপার্টদেরকে নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনা করবে; আলোচনা করে তারা একটা রূপরেখা রেডি করবে। এই রূপরেখা রেডি করে তাদের মেম্বারদের সঙ্গে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটা চূড়ান্ত রূপ নেবে। চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার পরে এটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সার্কুলেট করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো এই খসরা পেপারের ওপরে তাদের মন্তব্যগুলি দেবে।

কিন্তু ঠিক উলটাটা হয়েছে- এই কমিটিগুলি তার ধারের কাছেও যায় নাই। কমিটিগুলি প্রথম দিন থেকেই রাজনৈতিক দলের মন্তব্য চাচ্ছে। একটা রূপরেখা তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দিলে তাহলে দেশ উপকৃত হতো এবং তারপরে রাজনৈতিক দলের মতামত পাওয়ার পরে লিখিতভাবে পুরো দেশে একটা কর্মশালা হওয়া উচিত ছিল দুই তিন দিনের জন্য।

বিভিন্ন জেলা থেকে যারা এ বিষয়ে এক্সপার্ট তাদের ডেকে দুইদিন তিনদিন এটার ওপরে ডেলিব্রেশন হবে; তাদের মন্তব্য নেবে- তাহলে কোনো রাজনৈতিক দল আর দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ পেত না। সমগ্র জাতিকে এটাতে ইনভল্ভ করা হতো- প্রথমে ইনভল্ভ করলেন আপনি এক্সপার্টদেরকে, তারপরে আপনি ওই কমিটির মেম্বারদেরকে, তারপরে রাজনৈতিক দলকে, তারপরে কর্মশালার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের এক্সপার্টদেরকে; তাহলে এখানে রাজনৈতিক দলের আর কোনো বিষয় থাকতো না; কেউ আপত্তি করার মত সুযোগ থাকতো না। কিন্তু এ কাজটা কোন কমিটি করে নাই।  তারা নিজের ইচ্ছামত একটা চিঠি ইস্যু করে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে দায়সারা গোছের কাজ করছে। তারা নিজেই কাজ জানে না আমাদের কাছ থেকে কী কাজ নেবে।

আপনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে চান কিনা বা এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

জবাবে অলি আহমদ বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য নিতে পারি। কারণ বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমি ছাড়া বর্তমানে কারো নাই- আমি এটা গর্ব করে বলব না- শহিদ জিয়ার সঙ্গে আমি পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি একসঙ্গে- তিনবার মন্ত্রী ছিলাম, ছয়বার এমপি ছিলাম- এই অভিজ্ঞতা নিয়ে এর ধারের কাছে বাংলাদেশে কেউ নেই। রাষ্ট্র পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কারো নাই। হয়তো মন্ত্রী পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আমি ছাড়া বর্তমানে কারো নেই; সেই দক্ষতাও নেই।