ঢাকা ০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পুরোপুরি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফিরছে বিএনপি

দলকে আরও শক্তিশালী করতে এবার পুরোপুরি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফিরছে বিএনপি। কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশের ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলা কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

আগামী ৩ মাসের মধ্যে সব পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য ঢাকা ছাড়া নয়টি সাংগঠনিক বিভাগে ৯ সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কার্যক্রমও শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সব কমিটিতে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন এমন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করেছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ সময়ে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কমিটি ঢাকা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে যেখানে কমিটি আছে, তার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার যেসব আহ্বায়ক কমিটি আছে; তার মেয়াদ ৩ অথবা ৬ মাস দেওয়া হলেও বছরের পর বছর পার করছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন মুক্ত পরিবেশে সব কর্মকাণ্ড করছে দলটি।

সূত্রমতে, বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার বেশিরভাগই আহ্বায়ক কমিটি। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের অনেক জায়গায় আহ্বায়ক কমিটি আছে, অনেক জায়গায় কমিটিই নেই। সেখানে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করা হবে। আবার অনেক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ, সেখানেও কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়েছে। তবে কিছু কিছু সাংগঠনিক এলাকার কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নেতৃত্ব শক্তিশালী ও সক্রিয়, সেসব কমিটি নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চায় না দলটি। অর্থাৎ সেই কমিটি এখনই নতুন করে করার চিন্তা করছে না দলটির হাইকমান্ড।

কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বরিশাল বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, রংপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, ফরিদপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান।

তবে ঢাকা বিভাগে এখনো কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে নির্দেশনাসংক্রান্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘আপনার বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌর, থানা কমিটি থেকে শুরু করে মহানগর ও জেলা কমিটি সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সমাপ্ত করতে হবে। এই পত্র প্রাপ্তির পর আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদ্বয় এবং মহানগর ও জেলার সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে অতি সত্ত্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দলের প্রয়োজন, দলকে গতিশীল করার জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করার মতো নেতৃত্বের সক্ষমতা যার আছে তাদের নিয়ে কমিটি হবে। স্বাভাবিকভাবে দলে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, পরিশ্রম করেছেন, যারা ত্যাগী তারা যাতে থাকেন সে বিষয়েও নির্দেশনা আছে।

৩১ দফা নিয়ে সেমিনার ও কর্মশালা করবে তৃণমূলেও : রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে দশ বিভাগে কর্মশালা করছে বিএনপি। এবার তৃণমূলেও সেমিনার ও কর্মশালা করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এ নিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম কাজ শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগীয় কর্মশালার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়, যা ৮ ডিসেম্বর শেষ হবে। এরপর সব জেলা, উপজেলা, পৌর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সেমিনার ও কর্মশালা করবে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় সেমিনার শেষ হয়েছে। এখন হবে সব জেলা ও মহানগরে। এরপর উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে গ্রামে পর্যায়ক্রমে করা হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের পূর্বের উদ্যোগ এবং এ বিষয়ে জনমত তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করছে। নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ধারণা প্রথমে বিএনপি জনসম্মুখে এনেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে সেই উদ্যোগের বিষয়টি অনেকে ভুলে গেছেন। মূলত রাষ্ট্র নিয়ে বিএনপির চিন্তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে কর্মশালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বোরহানউদ্দিনে খাল পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার অভিযানের উদ্বোধন

পুরোপুরি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফিরছে বিএনপি

আপডেট সময় ০৪:৩২:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

দলকে আরও শক্তিশালী করতে এবার পুরোপুরি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফিরছে বিএনপি। কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশের ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলা কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

আগামী ৩ মাসের মধ্যে সব পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য ঢাকা ছাড়া নয়টি সাংগঠনিক বিভাগে ৯ সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কার্যক্রমও শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সব কমিটিতে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন এমন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করেছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ সময়ে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কমিটি ঢাকা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে যেখানে কমিটি আছে, তার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার যেসব আহ্বায়ক কমিটি আছে; তার মেয়াদ ৩ অথবা ৬ মাস দেওয়া হলেও বছরের পর বছর পার করছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন মুক্ত পরিবেশে সব কর্মকাণ্ড করছে দলটি।

সূত্রমতে, বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার বেশিরভাগই আহ্বায়ক কমিটি। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের অনেক জায়গায় আহ্বায়ক কমিটি আছে, অনেক জায়গায় কমিটিই নেই। সেখানে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করা হবে। আবার অনেক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ, সেখানেও কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়েছে। তবে কিছু কিছু সাংগঠনিক এলাকার কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নেতৃত্ব শক্তিশালী ও সক্রিয়, সেসব কমিটি নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চায় না দলটি। অর্থাৎ সেই কমিটি এখনই নতুন করে করার চিন্তা করছে না দলটির হাইকমান্ড।

কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বরিশাল বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, রংপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, ফরিদপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান।

তবে ঢাকা বিভাগে এখনো কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে নির্দেশনাসংক্রান্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘আপনার বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌর, থানা কমিটি থেকে শুরু করে মহানগর ও জেলা কমিটি সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সমাপ্ত করতে হবে। এই পত্র প্রাপ্তির পর আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদ্বয় এবং মহানগর ও জেলার সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে অতি সত্ত্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দলের প্রয়োজন, দলকে গতিশীল করার জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করার মতো নেতৃত্বের সক্ষমতা যার আছে তাদের নিয়ে কমিটি হবে। স্বাভাবিকভাবে দলে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, পরিশ্রম করেছেন, যারা ত্যাগী তারা যাতে থাকেন সে বিষয়েও নির্দেশনা আছে।

৩১ দফা নিয়ে সেমিনার ও কর্মশালা করবে তৃণমূলেও : রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে দশ বিভাগে কর্মশালা করছে বিএনপি। এবার তৃণমূলেও সেমিনার ও কর্মশালা করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এ নিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম কাজ শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগীয় কর্মশালার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়, যা ৮ ডিসেম্বর শেষ হবে। এরপর সব জেলা, উপজেলা, পৌর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সেমিনার ও কর্মশালা করবে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় সেমিনার শেষ হয়েছে। এখন হবে সব জেলা ও মহানগরে। এরপর উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে গ্রামে পর্যায়ক্রমে করা হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের পূর্বের উদ্যোগ এবং এ বিষয়ে জনমত তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করছে। নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ধারণা প্রথমে বিএনপি জনসম্মুখে এনেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে সেই উদ্যোগের বিষয়টি অনেকে ভুলে গেছেন। মূলত রাষ্ট্র নিয়ে বিএনপির চিন্তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে কর্মশালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।