ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি: ‘নামের কারণে’ ১৪ বছর চাকরি করছেন ফেল করা ব্যক্তি

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গোলাম রব্বানী নামে দুজন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গোলাম রব্বানীকে বাদ দিয়ে অকৃতকার্য গোলাম রব্বানীকে চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। এভাবেই ১৪ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারার মো. গোলাম রব্বানী বেরোবিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি পরীক্ষার সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের (বর্তমানে পরিবর্তিত বিভাগ ‘ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব’) শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু নামের মিল থাকায় ১৪ বছর ধরে চাকরি করছেন পরীক্ষায় অকৃতকার্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মো. গোলাম রব্বানী।

পরীক্ষায় প্রভাষক পদে নিয়োগ বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। এর দুদিন পর ১৯ ডিসেম্বর বোর্ডের সুপারিশ ১১তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন করা হয়। সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচি-২-এ দেখা যায়, সুপারিশ অনুমোদনের জন্য প্রভাষক পদে বাগমারার মো. গোলাম রব্বানী ও আরা তানজিয়া নামে আরেকজনের নাম লেখা রয়েছে। অপেক্ষমাণ তালিকায় মো. মনিরুজ্জামানের নাম পাওয়া যায়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. গোলাম রব্বানী, গ্রাম: বালিয়াডাঙ্গা, পো: নাসিরগজ, থানা বাগমারা, জেলা: রাজশাহীকে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। যার স্মারক নম্বর: বেরোবি:/রেজি:/শিক্ষক নয়োগ/৫০৬(০৬)০৯।

নিয়োগপত্রে বলা হয়, সিন্ডিকেটের একাদশতম সভার অনুমোদনক্রমে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তাবলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। এতে ২০১০ সালের ২-৪ জানুয়ারির মধ্যে তাকে যোগদান করতে বলা হয়। গোলাম রব্বানী ২ জানুয়ারি রেজিস্ট্রারের কাছে প্রভাষক পদে যোগদানপত্র জমা দেন।

কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন যোগদানপত্র গ্রহণ না করে টালবাহানা করতে থাকে। যোগদানপত্র গ্রহণের বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়। পরে তৎকালীন উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নামের মিল থাকার সুযোগ নিয়ে একই পদে অকৃতকার্য ঠাকুরগাঁওয়ের গোলাম রব্বানীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত ১৫ নভেম্বর চাকরি ফেরত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর অবেদন করেছেন বাগমারার গোলাম রব্বানী।

এ বিষয়ে বেরোবির রেজিস্ট্রার হারুন-অর-রশিদ যুগান্তরকে বলেন, চাকরি ফেরত চেয়ে গোলাম রব্বানী নামে একজন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এখন এটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত বেরোবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে উল্লিখিত পদে যোগদান করতে পত্র দিয়েছেন। এছাড়া আর কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি: ‘নামের কারণে’ ১৪ বছর চাকরি করছেন ফেল করা ব্যক্তি

আপডেট সময় ০১:৩৮:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গোলাম রব্বানী নামে দুজন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গোলাম রব্বানীকে বাদ দিয়ে অকৃতকার্য গোলাম রব্বানীকে চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। এভাবেই ১৪ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারার মো. গোলাম রব্বানী বেরোবিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি পরীক্ষার সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের (বর্তমানে পরিবর্তিত বিভাগ ‘ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব’) শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু নামের মিল থাকায় ১৪ বছর ধরে চাকরি করছেন পরীক্ষায় অকৃতকার্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মো. গোলাম রব্বানী।

পরীক্ষায় প্রভাষক পদে নিয়োগ বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। এর দুদিন পর ১৯ ডিসেম্বর বোর্ডের সুপারিশ ১১তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন করা হয়। সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচি-২-এ দেখা যায়, সুপারিশ অনুমোদনের জন্য প্রভাষক পদে বাগমারার মো. গোলাম রব্বানী ও আরা তানজিয়া নামে আরেকজনের নাম লেখা রয়েছে। অপেক্ষমাণ তালিকায় মো. মনিরুজ্জামানের নাম পাওয়া যায়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. গোলাম রব্বানী, গ্রাম: বালিয়াডাঙ্গা, পো: নাসিরগজ, থানা বাগমারা, জেলা: রাজশাহীকে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। যার স্মারক নম্বর: বেরোবি:/রেজি:/শিক্ষক নয়োগ/৫০৬(০৬)০৯।

নিয়োগপত্রে বলা হয়, সিন্ডিকেটের একাদশতম সভার অনুমোদনক্রমে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তাবলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। এতে ২০১০ সালের ২-৪ জানুয়ারির মধ্যে তাকে যোগদান করতে বলা হয়। গোলাম রব্বানী ২ জানুয়ারি রেজিস্ট্রারের কাছে প্রভাষক পদে যোগদানপত্র জমা দেন।

কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন যোগদানপত্র গ্রহণ না করে টালবাহানা করতে থাকে। যোগদানপত্র গ্রহণের বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়। পরে তৎকালীন উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নামের মিল থাকার সুযোগ নিয়ে একই পদে অকৃতকার্য ঠাকুরগাঁওয়ের গোলাম রব্বানীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত ১৫ নভেম্বর চাকরি ফেরত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর অবেদন করেছেন বাগমারার গোলাম রব্বানী।

এ বিষয়ে বেরোবির রেজিস্ট্রার হারুন-অর-রশিদ যুগান্তরকে বলেন, চাকরি ফেরত চেয়ে গোলাম রব্বানী নামে একজন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এখন এটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত বেরোবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে উল্লিখিত পদে যোগদান করতে পত্র দিয়েছেন। এছাড়া আর কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।