ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শরীয়তপুরে ছেলের গাছের গোড়ার আঘাতে বাবা নিহত সেই ছেলে গ্রেফতার। ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক শিগগিরই ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা: শিবির সভাপতি চট্টগ্রাম নগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, ২ নেতা বহিষ্কার সরকার পতনের পর এই প্রথম মুখ খুললেন সাদ্দাম-ইনান কিস্তির টাকা দিতে না পারায় গরু ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন এনজিও মাঠকর্মীরা রংপুরের মিঠাপুকুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ভোলায় শহীদ পরিবারদের কোটি টাকার সহায়তা দিল- জামায়াতে ইসলাম জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশন যোগ দিতে নিউইয়র্কে দৈনিক তরুণ কণ্ঠ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শান্ত বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা

১৪০০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়

টানা বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যায় কুমিল্লার লাকসাম মনোহরগঞ্জ দুই উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বাসস্থান, তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।

পুরো উপজেলার প্রায় সব সড়ক পানির নিচে। পুকুর-দিঘী থেকে শুরু করে মাছের ঘের- সব কিছুই প্লাবিত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ এখন অবর্ণনীয়।

অসহায় অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু দালান ও আশ্রয় কেন্দ্রে। বন্যাকবলিত এ দুই উপজেলায় এক সপ্তাহ ধরে সিলিন্ডার গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে উপজেলার বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। অনেক পরিবার গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছে না।

অভিযোগ রয়েছে, সংকটের সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৪০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় দোকানপাটেও তেমন খাদ্যসামগ্রী নেই, থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয়ে তদারকিসহ এ উপজেলাকে দ্রুত দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া দরকার।

রোব ও সোমবার এ দুই উপজেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেকে পানির মধ্যে বসবাস করছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বিপাকে পড়েছে মানুষ।

দুর্গতদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। দুই উপজেলার সরকারি হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১৮৮টি, সরকারি ভাবে প্রায় ৫০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবারের প্যাকেট। লাকসাম উপজেলায় মারা গেছে শিশুসহ ২ জন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে কয়েকটি স্থানে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সেখানকার বানভাসি প্রায় তিন লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তাদের অভিযোগ, এ দুই উপজেলার মধ্যে মনোহরগঞ্জ উপজেলা অবস্থান একটু ভেতরে হওয়ায় এবং বন্যার ভয়াবহতার প্রচার না থাকায় কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসছে না; তারা ত্রাণও পাচ্ছেন না। সোমবার সকালে এ দুই উপজেলার অন্তত ৮ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ করা বাইরের স্বেচ্ছাসেবকরা একদম আসছেন না মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা একেবারেই নোয়াখালীর পাশে। মহাসড়ক থেকে দূরের উপজেলা হওয়ায় সেখানে বানভাসিদের কাছে যাচ্ছেন না কেউই। যার কারণে এ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার বেড়েই চলেছে।

এদিকে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার, মুদাফরগঞ্জ বাজার, বিজরা বাজার, মাওলানা সাহেব বাজার, ইছাপুরা নতুন বাজার, খিলা বাজার, মনোহরগঞ্জ বাজার নাথেরপেটুয়া বাজার, বিপুলাসার বাজার, বাইশগাও বাজার, হাসনাবাদ বাজার, শান্তির বাজার, লক্ষণপুরসহ ছোট-বড় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

যেসব অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও গ্যাস সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে বলে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা যুগান্তরকে জানিয়েছেন।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা বাজারের ব্যবসায়ী খোরশেদ মিয়া বলেন, যে কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে ছিল তা বিক্রি হয়ে গেছে। ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমরা গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই একটু বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন।

মুদাফরগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘সকালে স্থানীয় বাজারে গ্যাস কিনতে গিয়ে দেখি গ্যাস প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ানো হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ নামে মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, এ উপজেলা আগে থেকেই ‘জলাঞ্চল’ নামে পরিচিত। এ উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় পানিতে মানুষ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে নৌকা ও স্পিডবোট দরকার। কিন্তু এখানে তেমন কোনো সহায়তা এখনো আসেনি। মানুষ কষ্টে আছে। বন্যার কারণে লাকড়িও সংগ্রহ করতে পারছে না। অপরদিকে ঘরের ভিটিতে পানি উঠে যাওয়ায় মাটির চুলাতেও রান্না করতে পারছি না। বেড়েছে রান্নার জন্য বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়েছেন। বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।

লাকসাম বিজরা বাজার এলাকার বাসিন্দা আঞ্জুমা বেগম বলেন, গ্যাসের অভাবে আমার বাসায় গত দুদিন ধরে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। ফ্ল্যাট বাড়িতে লাকড়ির চুলাও জ্বালাতে পারছি না। কিভাবে রান্নাবান্না করবে, তার কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে পরিবারের সব সদস্য মুড়ি-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার খেয়ে গত দুদিন পার করছি। আমার প্রতিবেশীদের অনেকেই একই দুর্ভোগের শিকার।

কান্দিরপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বিল্লাল গণি জানান, গত শুক্রবার তার বাসার সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে যায়। সিলিন্ডার রিফিল না করতে পারায় রোববার হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। গ্যাস না থাকায় তিনি সিলিন্ডার রিফিল করতে পারছেন না।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ডিলার বলেন, কবে নাগাদ গ্যাস সিলিন্ডারের সরবরাহ পাওয়া যাবে, তা কোম্পানির পক্ষ থেকে জানতে চেয়েও তিনি জানতে পারেননি।

মজুত করা গ্যাস সিলিন্ডার তিনি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করলেও গত দুদিন ধরে তার কাছে কোনো সিলিন্ডার অবশিষ্ট নেই।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা যুগান্তরকে বলেন, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবনতির দিকে যাচ্ছে। আজও পানি কিছুটা বেড়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। আমাদের কাছে নৌকার প্রচুর সংকট রয়েছে।

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাঠিয়ে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটা মানুষও অভুক্ত না থাকে। তবে আমাদের আরও অনেক সহায়তা দরকার। আমি অনুরোধ করব, বিত্তশালীরা বানভাসি মানুষের জন্য এগিয়ে আসুন।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শরীয়তপুরে ছেলের গাছের গোড়ার আঘাতে বাবা নিহত সেই ছেলে গ্রেফতার।

১৪০০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়

আপডেট সময় ১১:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

টানা বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যায় কুমিল্লার লাকসাম মনোহরগঞ্জ দুই উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বাসস্থান, তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।

পুরো উপজেলার প্রায় সব সড়ক পানির নিচে। পুকুর-দিঘী থেকে শুরু করে মাছের ঘের- সব কিছুই প্লাবিত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ এখন অবর্ণনীয়।

অসহায় অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু দালান ও আশ্রয় কেন্দ্রে। বন্যাকবলিত এ দুই উপজেলায় এক সপ্তাহ ধরে সিলিন্ডার গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে উপজেলার বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। অনেক পরিবার গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছে না।

অভিযোগ রয়েছে, সংকটের সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৪০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় দোকানপাটেও তেমন খাদ্যসামগ্রী নেই, থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয়ে তদারকিসহ এ উপজেলাকে দ্রুত দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া দরকার।

রোব ও সোমবার এ দুই উপজেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেকে পানির মধ্যে বসবাস করছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বিপাকে পড়েছে মানুষ।

দুর্গতদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। দুই উপজেলার সরকারি হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১৮৮টি, সরকারি ভাবে প্রায় ৫০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবারের প্যাকেট। লাকসাম উপজেলায় মারা গেছে শিশুসহ ২ জন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে কয়েকটি স্থানে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সেখানকার বানভাসি প্রায় তিন লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তাদের অভিযোগ, এ দুই উপজেলার মধ্যে মনোহরগঞ্জ উপজেলা অবস্থান একটু ভেতরে হওয়ায় এবং বন্যার ভয়াবহতার প্রচার না থাকায় কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসছে না; তারা ত্রাণও পাচ্ছেন না। সোমবার সকালে এ দুই উপজেলার অন্তত ৮ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ করা বাইরের স্বেচ্ছাসেবকরা একদম আসছেন না মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা একেবারেই নোয়াখালীর পাশে। মহাসড়ক থেকে দূরের উপজেলা হওয়ায় সেখানে বানভাসিদের কাছে যাচ্ছেন না কেউই। যার কারণে এ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার বেড়েই চলেছে।

এদিকে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার, মুদাফরগঞ্জ বাজার, বিজরা বাজার, মাওলানা সাহেব বাজার, ইছাপুরা নতুন বাজার, খিলা বাজার, মনোহরগঞ্জ বাজার নাথেরপেটুয়া বাজার, বিপুলাসার বাজার, বাইশগাও বাজার, হাসনাবাদ বাজার, শান্তির বাজার, লক্ষণপুরসহ ছোট-বড় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

যেসব অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও গ্যাস সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে বলে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা যুগান্তরকে জানিয়েছেন।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা বাজারের ব্যবসায়ী খোরশেদ মিয়া বলেন, যে কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে ছিল তা বিক্রি হয়ে গেছে। ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমরা গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই একটু বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন।

মুদাফরগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘সকালে স্থানীয় বাজারে গ্যাস কিনতে গিয়ে দেখি গ্যাস প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ানো হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ নামে মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, এ উপজেলা আগে থেকেই ‘জলাঞ্চল’ নামে পরিচিত। এ উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় পানিতে মানুষ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে নৌকা ও স্পিডবোট দরকার। কিন্তু এখানে তেমন কোনো সহায়তা এখনো আসেনি। মানুষ কষ্টে আছে। বন্যার কারণে লাকড়িও সংগ্রহ করতে পারছে না। অপরদিকে ঘরের ভিটিতে পানি উঠে যাওয়ায় মাটির চুলাতেও রান্না করতে পারছি না। বেড়েছে রান্নার জন্য বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়েছেন। বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।

লাকসাম বিজরা বাজার এলাকার বাসিন্দা আঞ্জুমা বেগম বলেন, গ্যাসের অভাবে আমার বাসায় গত দুদিন ধরে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। ফ্ল্যাট বাড়িতে লাকড়ির চুলাও জ্বালাতে পারছি না। কিভাবে রান্নাবান্না করবে, তার কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে পরিবারের সব সদস্য মুড়ি-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার খেয়ে গত দুদিন পার করছি। আমার প্রতিবেশীদের অনেকেই একই দুর্ভোগের শিকার।

কান্দিরপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বিল্লাল গণি জানান, গত শুক্রবার তার বাসার সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে যায়। সিলিন্ডার রিফিল না করতে পারায় রোববার হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। গ্যাস না থাকায় তিনি সিলিন্ডার রিফিল করতে পারছেন না।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ডিলার বলেন, কবে নাগাদ গ্যাস সিলিন্ডারের সরবরাহ পাওয়া যাবে, তা কোম্পানির পক্ষ থেকে জানতে চেয়েও তিনি জানতে পারেননি।

মজুত করা গ্যাস সিলিন্ডার তিনি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করলেও গত দুদিন ধরে তার কাছে কোনো সিলিন্ডার অবশিষ্ট নেই।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা যুগান্তরকে বলেন, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবনতির দিকে যাচ্ছে। আজও পানি কিছুটা বেড়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। আমাদের কাছে নৌকার প্রচুর সংকট রয়েছে।

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাঠিয়ে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটা মানুষও অভুক্ত না থাকে। তবে আমাদের আরও অনেক সহায়তা দরকার। আমি অনুরোধ করব, বিত্তশালীরা বানভাসি মানুষের জন্য এগিয়ে আসুন।