ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ রেজিষ্ট্রি অফিসের দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভাঙতে পদক্ষেপ, কর্মকর্তাকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা ছাত্র-জনতার অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করবে যুবদল: মঈন খান ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৯৭ ডিএমসিআরএস এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র হলেন আবিদ দুর্গাপুরে ইউএনও সাবরিনা শারমিনের সাহসী ভূমিকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পাবনা র‍্যাবের অভিযানে ২১ গ্রাম হেরোইনসহ ০১জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ভোলায় জেলে চাল চুরির দায়ে যুবদল নেতা বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি গঠন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল স্কুলজীবনে সারাকে ভয় পেতেন অনন্যা

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ চোরাইপথে আসছে গরু, লোকসানের শঙ্কা

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেছেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত গলে ঢুকছে গরু-মহিষ। কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার।

কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনও প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে আনা হচ্ছে গরু। চোরাইপথে আসা এসব পশু বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, রীতিমতো সীমান্ত এলাকায় হাট বসিয়ে। এসব হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে পশু।

শনিবার (১ জুন) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

ইমরান বলেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসবে না- সরকারের এমন ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন দেশি খামারিরা। এখন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু ঢোকায় লোকসানের শঙ্কায় আমরা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তপথে গরু আসা বন্ধে কঠিন নজরদারি করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালনপালন বেড়ে যায়। আর সেটাই বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। একদিকে কয়েক বছর ধরে গবাদি পশু আমদানি বন্ধ, অন্যদিকে কোরবানির ঈদে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত থাকে ২০ লাখের বেশি পশু। এবারও চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত আছে।

এ সময় কুমিল্লার খামারি সজীব হোসেন বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের অসুস্থ গরু আমদানি হচ্ছে। এসব গরু লবণ পানি ও খড় ছাড়া কিছুই খায় না। এসব গরু আমদানি করে দেশীয় গবাদিপশুকে হুমকির মুখে ফেলা দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিবান্ধব নন বলেও অভিযোগ আনেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি।

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, তিনি খামারিদের কোনও সহযোগিতা করছেন না। তার কার্যক্রমে বোঝাচ্ছেন দেশের দুধ উৎপাদনে তাদের ডাক্তার ও মিল্ক প্রসেসিং কোম্পানিগুলোই সব কাজ করছেন।

জামাল হোসেন নামে এক প্রান্তিক খামারি বলেন, আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনদিন পরে দেখা করার জন্য সময় দেন। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম জানান, তার ২০টি গাভীর মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারকে ফোন দিলে ১০ হাজার টাকা চায়। একদিন পরে খামারবাড়ি থেকে ডাক্তার গেছে।

রাশেদা বেগম বলেন, গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি জানায়। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনো রিপোর্ট দেয়নি। আমি এখন নি:শ্ব।

এ সময় বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেলযোগে আসতো তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ৫০০-১৫০০০ টাকা দিতে হয়। এসব ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

গুড়া দুধের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন। তবে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধ খামারের মাধ্যমেই সম্ভব। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশ কিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আমরা মনে করি দুধ উৎপাদনের প্রধান বাধা আমদানিকৃত দুধ। আমদানি করা গুঁড়ো দুধ আমাদের সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করছে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ক্ষত তৈরি করেছে। বিশেষ করে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে যারা গবাদি পশু লালন করেছে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দুর্গত অনেক এলাকায় পশুর প্রয়োজনীয় খাবার নেই। অনাহারে কিংবা পচা খাদ্য খেয়ে অনেক পশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও পড়ছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সবুজ ঘাস। ১৯ জেলায় ১০৭টি উপজেলায় গবাদি পশু ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। অন্তত ২৫ লাখ গবাদি পশু ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আলী আজম শিবলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নাজীব উল্লাহ, আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারীসহ অনেকে

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ চোরাইপথে আসছে গরু, লোকসানের শঙ্কা

আপডেট সময় ১০:১২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেছেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত গলে ঢুকছে গরু-মহিষ। কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার।

কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনও প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে আনা হচ্ছে গরু। চোরাইপথে আসা এসব পশু বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, রীতিমতো সীমান্ত এলাকায় হাট বসিয়ে। এসব হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে পশু।

শনিবার (১ জুন) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

ইমরান বলেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসবে না- সরকারের এমন ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন দেশি খামারিরা। এখন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু ঢোকায় লোকসানের শঙ্কায় আমরা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তপথে গরু আসা বন্ধে কঠিন নজরদারি করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালনপালন বেড়ে যায়। আর সেটাই বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। একদিকে কয়েক বছর ধরে গবাদি পশু আমদানি বন্ধ, অন্যদিকে কোরবানির ঈদে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত থাকে ২০ লাখের বেশি পশু। এবারও চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত আছে।

এ সময় কুমিল্লার খামারি সজীব হোসেন বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের অসুস্থ গরু আমদানি হচ্ছে। এসব গরু লবণ পানি ও খড় ছাড়া কিছুই খায় না। এসব গরু আমদানি করে দেশীয় গবাদিপশুকে হুমকির মুখে ফেলা দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিবান্ধব নন বলেও অভিযোগ আনেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি।

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, তিনি খামারিদের কোনও সহযোগিতা করছেন না। তার কার্যক্রমে বোঝাচ্ছেন দেশের দুধ উৎপাদনে তাদের ডাক্তার ও মিল্ক প্রসেসিং কোম্পানিগুলোই সব কাজ করছেন।

জামাল হোসেন নামে এক প্রান্তিক খামারি বলেন, আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনদিন পরে দেখা করার জন্য সময় দেন। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম জানান, তার ২০টি গাভীর মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারকে ফোন দিলে ১০ হাজার টাকা চায়। একদিন পরে খামারবাড়ি থেকে ডাক্তার গেছে।

রাশেদা বেগম বলেন, গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি জানায়। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনো রিপোর্ট দেয়নি। আমি এখন নি:শ্ব।

এ সময় বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেলযোগে আসতো তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ৫০০-১৫০০০ টাকা দিতে হয়। এসব ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

গুড়া দুধের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন। তবে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধ খামারের মাধ্যমেই সম্ভব। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশ কিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আমরা মনে করি দুধ উৎপাদনের প্রধান বাধা আমদানিকৃত দুধ। আমদানি করা গুঁড়ো দুধ আমাদের সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করছে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ক্ষত তৈরি করেছে। বিশেষ করে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে যারা গবাদি পশু লালন করেছে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দুর্গত অনেক এলাকায় পশুর প্রয়োজনীয় খাবার নেই। অনাহারে কিংবা পচা খাদ্য খেয়ে অনেক পশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও পড়ছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সবুজ ঘাস। ১৯ জেলায় ১০৭টি উপজেলায় গবাদি পশু ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। অন্তত ২৫ লাখ গবাদি পশু ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আলী আজম শিবলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নাজীব উল্লাহ, আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারীসহ অনেকে