ঢাকা ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পটুয়াখালী-৩ আসনে নুরকে সহযোগিতার নির্দেশ বিএনপির পটুয়াখালীতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ রেজিষ্ট্রি অফিসের দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভাঙতে পদক্ষেপ, কর্মকর্তাকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা ছাত্র-জনতার অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করবে যুবদল: মঈন খান ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৯৭ ডিএমসিআরএস এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র হলেন আবিদ দুর্গাপুরে ইউএনও সাবরিনা শারমিনের সাহসী ভূমিকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পাবনা র‍্যাবের অভিযানে ২১ গ্রাম হেরোইনসহ ০১জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ভোলায় জেলে চাল চুরির দায়ে যুবদল নেতা বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি গঠন

লজ্জায় আত্মহত্যা, কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে টাকার জন্য গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

পাওনা টাকা আদায়ে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। লজ্জায় স্বামী স্ত্রীর বিষপান। এতে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (২৭) বেঁচে গেলেও মারা গেছে স্ত্রী আশা খাতুন (২৩)।
এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদরের কলেজ পাড়া এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারের অভাব অনটনের কারণে বাড়িঘর মেরামতের জন্য জহির মন্ডল পাড়া গ্রামের জয়নাল আলীর কাছ থেকে কয়েক মাস আগে চল্লিশ হাজার টাকা ধার নেয় জাহাঙ্গীর-আশা দম্পতি। কিন্তু ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার টাকা চেয়ে বসে। এসময় টাকা নেই বলে জানান আশা খাতুন।

টাকা না থাকায় স্ত্রী আশা খাতুন টাকা পরিশোধ করার জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে নেন। কিন্তু পাওনাদার জয়নাল তার টাকা চেয়ে বসে। টাকা না দিতে পারায় আশা খাতুনকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয় জয়নাল। তার পরিবার অভাব গ্রস্থ হওয়ায় তার সেই অবৈধ প্রস্তাব মেনে নিতে আশা খাতুনকে বাধ্য করায় জয়নাল। এরপর গত রমজান মাসে তার সাথে শারিরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সুযোগ বুঝে জয়নাল তার সাথে শুক্কুর আলী নামের একজনকে সাথে নিয়ে এসে শারিরিক সম্পর্কও করেন। নিয়মিত ভাবে তারা দুইজন ধর্ষণ করতে থাকে আশা খাতুনকে।

এসময় তাদের পরিচিত সোলেমান নামের আরেক জনকে দিয়ে শারিরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করার কথা জানানো হয় ভুক্তভোগী আশা খাতুনকে। সামাজিক মাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে সোলেমানও শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন গড়ে তোলে।

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আশা খাতুনের রুমে ঢুকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তিনি অতিষ্ট হয়ে পড়েন। তার স্বামী জাহাঙ্গীর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোক মুখে জানতে পেরে এবং বিছানায় রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে স্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চায়। ভুক্তভোগী আশা খাতুন তার স্বামীর কাছে সব খুলে বলেন।

স্বামী তার স্ত্রীর মুখে সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে। পরে স্বামী স্ত্রী মানুষকে মুখ দেখানোর লজ্জায় ঘরে থাকা ফসলে দেয়া কীটনাশক (বিষ) গত শুক্রবার ২৪ মে দুপুর আনুমানিক ২টায় স্বামী স্ত্রী মিলে পান করেন। পরবর্তীতে তাদের দুজনকেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা পেয়ে জাহাঙ্গীর কিছুটা সুস্থ হলেও।

আশা খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর আশা খাতুনের শারিরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে মময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে তারা গত সোমবার ২৮ মে রাতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত বুধবার ২৯মে দুপুর আনুমানিক ২টায় আশা খাতুন বাড়িতেই মারা যায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার ২৩মে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, রাজীবপুর থানার গাড়ি চালক মাজাহারুল ইসলাম, থানার বাবুর্চি রবিউল ইসলাম, আমেছ উদ্দিন বিবাদী জয়নাল, শুক্কুর, আলম ও সোলাইমান কে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেবার উদ্দেশ্যে বাদী জাহাঙ্গীর আলমকে বিশ হাজার টাকা দিতে চাইলে তিনি তা না নিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও উপস্থিত সকলের কাছে।

তিনি আরও জানান সুষ্ঠু বিচার না দিলে দুইজনই আত্মাহত্যা করবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষপান করেন তারা। এতে জাহাঙ্গীর আলম বাচঁলেও মারা যান তার স্ত্রী আশা খাতুন। মৃত্যুর সময় আশা খাতুন দুই বছরের একটি শিশু কন্যা রেখে যান।

ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে দুই জনই বিষ খেয়ে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন।

এই বিষয়ে জয়নাল টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেন। তবে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় তা বিশ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

গাড়ি চালক কনস্টেবল মাজহারের ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, গতকালের ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মীমাংসার করার সাথে যে দুজন কনস্টেবলের নাম শোনা যাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালী-৩ আসনে নুরকে সহযোগিতার নির্দেশ বিএনপির

লজ্জায় আত্মহত্যা, কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে টাকার জন্য গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

আপডেট সময় ১২:৪১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪

পাওনা টাকা আদায়ে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। লজ্জায় স্বামী স্ত্রীর বিষপান। এতে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (২৭) বেঁচে গেলেও মারা গেছে স্ত্রী আশা খাতুন (২৩)।
এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদরের কলেজ পাড়া এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারের অভাব অনটনের কারণে বাড়িঘর মেরামতের জন্য জহির মন্ডল পাড়া গ্রামের জয়নাল আলীর কাছ থেকে কয়েক মাস আগে চল্লিশ হাজার টাকা ধার নেয় জাহাঙ্গীর-আশা দম্পতি। কিন্তু ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার টাকা চেয়ে বসে। এসময় টাকা নেই বলে জানান আশা খাতুন।

টাকা না থাকায় স্ত্রী আশা খাতুন টাকা পরিশোধ করার জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে নেন। কিন্তু পাওনাদার জয়নাল তার টাকা চেয়ে বসে। টাকা না দিতে পারায় আশা খাতুনকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয় জয়নাল। তার পরিবার অভাব গ্রস্থ হওয়ায় তার সেই অবৈধ প্রস্তাব মেনে নিতে আশা খাতুনকে বাধ্য করায় জয়নাল। এরপর গত রমজান মাসে তার সাথে শারিরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সুযোগ বুঝে জয়নাল তার সাথে শুক্কুর আলী নামের একজনকে সাথে নিয়ে এসে শারিরিক সম্পর্কও করেন। নিয়মিত ভাবে তারা দুইজন ধর্ষণ করতে থাকে আশা খাতুনকে।

এসময় তাদের পরিচিত সোলেমান নামের আরেক জনকে দিয়ে শারিরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করার কথা জানানো হয় ভুক্তভোগী আশা খাতুনকে। সামাজিক মাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে সোলেমানও শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন গড়ে তোলে।

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আশা খাতুনের রুমে ঢুকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তিনি অতিষ্ট হয়ে পড়েন। তার স্বামী জাহাঙ্গীর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোক মুখে জানতে পেরে এবং বিছানায় রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে স্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চায়। ভুক্তভোগী আশা খাতুন তার স্বামীর কাছে সব খুলে বলেন।

স্বামী তার স্ত্রীর মুখে সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে। পরে স্বামী স্ত্রী মানুষকে মুখ দেখানোর লজ্জায় ঘরে থাকা ফসলে দেয়া কীটনাশক (বিষ) গত শুক্রবার ২৪ মে দুপুর আনুমানিক ২টায় স্বামী স্ত্রী মিলে পান করেন। পরবর্তীতে তাদের দুজনকেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা পেয়ে জাহাঙ্গীর কিছুটা সুস্থ হলেও।

আশা খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর আশা খাতুনের শারিরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে মময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে তারা গত সোমবার ২৮ মে রাতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত বুধবার ২৯মে দুপুর আনুমানিক ২টায় আশা খাতুন বাড়িতেই মারা যায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার ২৩মে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, রাজীবপুর থানার গাড়ি চালক মাজাহারুল ইসলাম, থানার বাবুর্চি রবিউল ইসলাম, আমেছ উদ্দিন বিবাদী জয়নাল, শুক্কুর, আলম ও সোলাইমান কে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেবার উদ্দেশ্যে বাদী জাহাঙ্গীর আলমকে বিশ হাজার টাকা দিতে চাইলে তিনি তা না নিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও উপস্থিত সকলের কাছে।

তিনি আরও জানান সুষ্ঠু বিচার না দিলে দুইজনই আত্মাহত্যা করবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষপান করেন তারা। এতে জাহাঙ্গীর আলম বাচঁলেও মারা যান তার স্ত্রী আশা খাতুন। মৃত্যুর সময় আশা খাতুন দুই বছরের একটি শিশু কন্যা রেখে যান।

ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে দুই জনই বিষ খেয়ে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন।

এই বিষয়ে জয়নাল টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেন। তবে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় তা বিশ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

গাড়ি চালক কনস্টেবল মাজহারের ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, গতকালের ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মীমাংসার করার সাথে যে দুজন কনস্টেবলের নাম শোনা যাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।