ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিটার্ন দাখিলে যেসব কাগজপত্র যুক্ত করতে হবে

আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। যারা ই-টিআইএন সার্টিফিকেট করছেন করযোগ্য থাকুক বা না থাকুক তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে একজন করদাতাকে পেশা অনুসারে বিভিন্ন তথ্য ও দলিল সংযুক্ত করতে হয়।

আয়কর রিটার্ন ফরমের সঙ্গে যেসব তথ্য ও দলিলাদি দাখিল করতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

বেতন ভাতা

ক. বেতন বিবরণী।

খ. ব্যাংক হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট।

গ. বিনিয়োগ ভাতা দাবি থাকলে তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি। যেমন- জীবন বিমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।

নিরাপত্তা জামানতের সুদ খা।

ক. বন্ড বা ডিবেঞ্চার যে বছরে কেনা হয় সে বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি।

খ. সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র।

গ. প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট বা ব্যাংক বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

গৃহ-সম্পত্তি খাতে যেসব নথিপত্র প্রয়োজন

ক. বাড়িভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রশিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়িভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়িভাড়া জমা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের বিবরণী।

খ. পৌর কর, সিটি করপোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব প্রদানের সমর্থনে রশিদের কপি।

গ. ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট এবং

ঘ. গৃহ-সম্পত্তি বিমাকৃত হলে বিমা প্রিমিয়ামের রশিদের কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা খাত

ব্যবসা বা অন্যান্য পেশার আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

অংশীদারি ফার্মের আয় 

অংশীদারি ফার্মের ব্যবসা থাকলে ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র জমা দিতে হবে।

মূলধনী লাভ 

ক. স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় কিংবা হস্তান্তর হলে তার দলিলের কপি।

খ. উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালান বা পে-অর্ডারের ফটোকপি এবং

গ. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে মুনাফা হলে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র রিটার্নে সঙ্গে জমা দিতে হবে।

অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত 

ক. নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা সার্টিফিকেট।

খ. সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি।

গ. ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী কিংবা সার্টিফিকেট।

ঘ. অন্য যেকোনো আয়ের উৎসের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।

আয়কর পরিশোধের প্রমাণ (উৎসে কর কর্তনসহ)

করদাতা যদি উৎসে কর কিংবা কর ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করেন তাহলে রিটার্ন দাখিলের সময় তার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। যেমন-

ক. সকল প্রকার উৎসে কর পরিশোধ অটোমেটেড চালান (এ-চালান) বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে জমা করতে হবে।

খ. করদায় পাঁচ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে তা আবশ্যিকভাবে অটোমেটেড চালান (এ চালান) বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

গ. পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণের কর অটোমেটেড চালান, ই-পেমেন্টে, পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট/একাউন্ট-পেয়ী চেক ব্যবহার করে উপ-কর কমিশনার বরাবর জমা করতে হবে।

ঘ. যেকোনো খাতের আয়ে উৎসে কর পরিশোধ করা হয়ে থাকলে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ যে চালান বা ই-পেমেন্টের চালানসহ প্রত্যয়নপত্র করদাতাকে দিয়েছে তা রিটার্ন ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানাসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে বলে মনে করেন এনবিআরের কর বিভাগ।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রিটার্ন দাখিলে যেসব কাগজপত্র যুক্ত করতে হবে

আপডেট সময় ১০:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২

আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। যারা ই-টিআইএন সার্টিফিকেট করছেন করযোগ্য থাকুক বা না থাকুক তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে একজন করদাতাকে পেশা অনুসারে বিভিন্ন তথ্য ও দলিল সংযুক্ত করতে হয়।

আয়কর রিটার্ন ফরমের সঙ্গে যেসব তথ্য ও দলিলাদি দাখিল করতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

বেতন ভাতা

ক. বেতন বিবরণী।

খ. ব্যাংক হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট।

গ. বিনিয়োগ ভাতা দাবি থাকলে তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি। যেমন- জীবন বিমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।

নিরাপত্তা জামানতের সুদ খা।

ক. বন্ড বা ডিবেঞ্চার যে বছরে কেনা হয় সে বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি।

খ. সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র।

গ. প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট বা ব্যাংক বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

গৃহ-সম্পত্তি খাতে যেসব নথিপত্র প্রয়োজন

ক. বাড়িভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রশিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়িভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়িভাড়া জমা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের বিবরণী।

খ. পৌর কর, সিটি করপোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব প্রদানের সমর্থনে রশিদের কপি।

গ. ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট এবং

ঘ. গৃহ-সম্পত্তি বিমাকৃত হলে বিমা প্রিমিয়ামের রশিদের কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা খাত

ব্যবসা বা অন্যান্য পেশার আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

অংশীদারি ফার্মের আয় 

অংশীদারি ফার্মের ব্যবসা থাকলে ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র জমা দিতে হবে।

মূলধনী লাভ 

ক. স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় কিংবা হস্তান্তর হলে তার দলিলের কপি।

খ. উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালান বা পে-অর্ডারের ফটোকপি এবং

গ. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে মুনাফা হলে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র রিটার্নে সঙ্গে জমা দিতে হবে।

অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত 

ক. নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা সার্টিফিকেট।

খ. সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি।

গ. ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী কিংবা সার্টিফিকেট।

ঘ. অন্য যেকোনো আয়ের উৎসের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।

আয়কর পরিশোধের প্রমাণ (উৎসে কর কর্তনসহ)

করদাতা যদি উৎসে কর কিংবা কর ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করেন তাহলে রিটার্ন দাখিলের সময় তার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। যেমন-

ক. সকল প্রকার উৎসে কর পরিশোধ অটোমেটেড চালান (এ-চালান) বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে জমা করতে হবে।

খ. করদায় পাঁচ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে তা আবশ্যিকভাবে অটোমেটেড চালান (এ চালান) বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

গ. পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণের কর অটোমেটেড চালান, ই-পেমেন্টে, পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট/একাউন্ট-পেয়ী চেক ব্যবহার করে উপ-কর কমিশনার বরাবর জমা করতে হবে।

ঘ. যেকোনো খাতের আয়ে উৎসে কর পরিশোধ করা হয়ে থাকলে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ যে চালান বা ই-পেমেন্টের চালানসহ প্রত্যয়নপত্র করদাতাকে দিয়েছে তা রিটার্ন ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানাসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে বলে মনে করেন এনবিআরের কর বিভাগ।