ঢাকা ০৯:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি না থাকা বড় ভুল পটুয়াখালীতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত শহীদ জিয়া স্মৃতি পদক পেলেন জাতীয়তাবাদী বিএনপির রাজশাহী জেলার সদস্য সচিব গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন জরুরি : যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না তাঁতীলীগের সভাপতি ইকবালের যত কান্ড, জনমনে প্রশ্ন কে এই ইকবাল? সিএমপির পাহাড়তলী থানার মাদক বিরোধী অভিযানে ভুয়া সাংবাদিক ফারুক মাদকসহ গ্রেফতার অন্তর্বতী সরকারের ১শ দিন পার হলেও সচিবালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরের এখনও আওয়ামী লীগের দোসরা বহাল পূর্বাচলে দুর্নীতির রাজত্ব গড়েছেন নায়েব আলী শরীফ ডঃ মোশাররফ ফাউন্ডেশন কলেজ নবীনবরণ উৎসব ২০২৪ পালিত। মুগদায় ১০ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

অনিশ্চয়তায় জানুয়ারির বই উৎসব, মানহীন হচ্ছে মুদ্রণ কাজ!

২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। করোনা মহামারির কারণে গত বছর এবং এ বছর বই উৎসব হয়নি। আগামী বছর বই উৎসব ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি চাপে দ্রুত ছাপতে গিয়ে প্রেস থেকে মানহীন বই সরবরাহ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি দুই মাসেরও কম সময়। জানুয়ারির প্রথম দিনে বই উৎসব করতে হলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শেষ করতে হবে বই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ। এরপর স্কুলে স্কুলে বইগুলো পৌঁছানোর কাজ করতে হবে।

হাতে সময় খুবই কম, কিন্তু বই ছাপানোর কাজ সিংহভাগ এখনও বাকি। যে কারণে এবার জানুয়ারির প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে তড়িঘড়ি করে বই ছাপানো হলে মান ঠিক রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রেস মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, ছাপাখানার পাওনা পরিশোধ না করা, কাগজের কাঁচামাল সংকট, প্রেস মালিকদের অসহযোগিতা, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল সংকট, কাগজসহ বই ছাপানোর অপরিহার্য উপাদানের দামবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি লোডশেডিং- এই সবকিছুর মিলিত প্রভাবে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে।

তবে এত সংকট-শঙ্কার পরও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে চায় সরকার। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মিল মালিক ও প্রেস মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

চুক্তিভুক্ত ছাপাখানাগুলো নির্ধারিত সময়ে বই দিতে ব্যর্থ হলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করাসহ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এখনও বছরের প্রথম দিনই সবার হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঠ্যবই তৈরিতে কাগজের সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের মিল মালিকরাও কৃত্রিম সংকট তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।

বইয়ের মান নিয়েও আপস করা হবে না জানিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, তড়িঘড়ি করে দেওয়ার নামে প্রেস মালিকরা যেন নিম্নমানের বই সরবরাহ করতে না পারেন সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা কমিটি মাঠ পর্যায়ে তা মনিটরিং করবে।

তিনি আরও বলেন, বিনামূল্যের বই তৈরিতে প্রতি বছরের শেষের দিকে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। মিল ও প্রেস মালিকদের কাছে এনসিটিবি এক ধরনের জিম্মি হয়ে যায়। সে কারণে বছরের শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বসে নতুন রূপরেখা তৈরি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি ও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে।

নির্ধারিত সময়ে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি মো. শহিদ সেরনিয়াবাত। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে সরকার বই দিতে চাইলেও তা সম্ভব নয়। বলতে গেলে বাজারে কাগজই নেই। চাহিদা থাকার পরও মিলগুলো কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে ডলার সংকটে পাল্প আমদানিও কমে গেছে। এই মুহূর্তে কাগজ সংকটই সবচেয়ে বড় বিষয়। এছাড়া টেন্ডার সাবমিটের পর কাগজের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। যার কারণে যারা বই ছাপানোর কাজ পেয়েছেন, সবাই ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন। প্রতিটি কাজেই এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেহেতু চুক্তিবদ্ধ প্রেস মালিকরা লোকসান দিয়ে বই ছাপাচ্ছেন, তাই বইয়ের মান ঠিক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। প্রথমত মানসম্মত কাগজ পাওয়া কঠিন। দ্বিতীয়ত ভালো কাগজ পাওয়া গেলেও কতজন প্রেস মালিক সে কাগজ কিনে বই ছাপাবে সেটা বড় প্রশ্ন। শেষ সময়ে এসে সব খারাপ কাগজ চালিয়ে দেন মিল মালিকরা। যে যাই বলুক মান ধরে রাখা সম্ভব নয়।

জানুয়ারির আগে বই সরবরাহ করা যাবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে শহিদ সেরনিয়াবাত বলেন, আমি সন্দিহান। তবুও চেষ্টা থাকবে সরকারের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে। এ বিষয়ে আমাদের চেষ্টা থাকলেও কতটা সম্ভব হবে তা জানি না। কারণ টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

তিনি বলেন, মিল মালিকরা কারো অধীনে ব্যবসা করেন না। তাদের অগ্রিম টাকা দিলেও কাগজ পাওয়া যায় না। তারা অনেক শক্তিশালী। তাদের মধ্যে ইউনিটি আছে। সুতরাং তারা কারো নির্দেশে কাগজ দেবেন না। অনেক সময় দেখা গেছে- আমাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দামবৃদ্ধি করে দিয়েছে। আমরা কিছুই করতে পারিনি। কাজেই মিল মালিকরা কাগজ দিতে আশ্বস্ত করলেও আমরা নিশ্চিন্ত নই।

নির্ধারিত সময় ও চুক্তি অনুযায়ী বই সরবরাহ করতে না পারলে প্রেস মালিক ও প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে যে আলোচনা রয়েছে সে প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি বলেন, প্রতিবছরই কালো তালিকার কথা বলা হয়, কিন্তু করা হয় না। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের বই দেয়, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করতে আমরা সুপারিশ করি। কিন্তু বোর্ড বা মন্ত্রণালয় তা করে না। এর পেছনে চাপ, সুপারিশ ও অনৈতিক লেনদেন থাকতে পারে।

বাধা বকেয়া বিলও 
নির্ধারিত সময়ে বই ছাপার কাজ শেষ না হওয়ার যেসব কারণ রয়েছে তার একটি হলো ছাপাখানার বকেয়া বিল পরিশোধ না হওয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনসিটিবির সমন্বিত সভায় বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেসব ছাপাখানা মালিকরা নির্ধারিত সময়ে বিল না পাওয়ায় বই ছাপাতে অপারগতা জানিয়েছেন, তাদের বিল ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কাজের বিল বকেয়া রয়েছে এমন একটি ছাপাখানা আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেড। আগের শিক্ষাবর্ষের ২০ শতাংশ পাওনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করায় ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের ( তৃতীয়, চতুর্থ, ও পঞ্চম শ্রেণি) পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজ করায় অপারগতা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বকেয়া বিল পেতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭২ টাকা পাওনা থাকার কথা জানিয়েছে আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেড।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি না থাকা বড় ভুল

অনিশ্চয়তায় জানুয়ারির বই উৎসব, মানহীন হচ্ছে মুদ্রণ কাজ!

আপডেট সময় ১২:০১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০২২

২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। করোনা মহামারির কারণে গত বছর এবং এ বছর বই উৎসব হয়নি। আগামী বছর বই উৎসব ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি চাপে দ্রুত ছাপতে গিয়ে প্রেস থেকে মানহীন বই সরবরাহ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি দুই মাসেরও কম সময়। জানুয়ারির প্রথম দিনে বই উৎসব করতে হলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শেষ করতে হবে বই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ। এরপর স্কুলে স্কুলে বইগুলো পৌঁছানোর কাজ করতে হবে।

হাতে সময় খুবই কম, কিন্তু বই ছাপানোর কাজ সিংহভাগ এখনও বাকি। যে কারণে এবার জানুয়ারির প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে তড়িঘড়ি করে বই ছাপানো হলে মান ঠিক রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রেস মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, ছাপাখানার পাওনা পরিশোধ না করা, কাগজের কাঁচামাল সংকট, প্রেস মালিকদের অসহযোগিতা, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল সংকট, কাগজসহ বই ছাপানোর অপরিহার্য উপাদানের দামবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি লোডশেডিং- এই সবকিছুর মিলিত প্রভাবে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে।

তবে এত সংকট-শঙ্কার পরও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে চায় সরকার। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মিল মালিক ও প্রেস মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

চুক্তিভুক্ত ছাপাখানাগুলো নির্ধারিত সময়ে বই দিতে ব্যর্থ হলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করাসহ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এখনও বছরের প্রথম দিনই সবার হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঠ্যবই তৈরিতে কাগজের সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের মিল মালিকরাও কৃত্রিম সংকট তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।

বইয়ের মান নিয়েও আপস করা হবে না জানিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, তড়িঘড়ি করে দেওয়ার নামে প্রেস মালিকরা যেন নিম্নমানের বই সরবরাহ করতে না পারেন সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা কমিটি মাঠ পর্যায়ে তা মনিটরিং করবে।

তিনি আরও বলেন, বিনামূল্যের বই তৈরিতে প্রতি বছরের শেষের দিকে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। মিল ও প্রেস মালিকদের কাছে এনসিটিবি এক ধরনের জিম্মি হয়ে যায়। সে কারণে বছরের শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বসে নতুন রূপরেখা তৈরি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি ও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে।

নির্ধারিত সময়ে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি মো. শহিদ সেরনিয়াবাত। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে সরকার বই দিতে চাইলেও তা সম্ভব নয়। বলতে গেলে বাজারে কাগজই নেই। চাহিদা থাকার পরও মিলগুলো কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে ডলার সংকটে পাল্প আমদানিও কমে গেছে। এই মুহূর্তে কাগজ সংকটই সবচেয়ে বড় বিষয়। এছাড়া টেন্ডার সাবমিটের পর কাগজের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। যার কারণে যারা বই ছাপানোর কাজ পেয়েছেন, সবাই ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন। প্রতিটি কাজেই এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেহেতু চুক্তিবদ্ধ প্রেস মালিকরা লোকসান দিয়ে বই ছাপাচ্ছেন, তাই বইয়ের মান ঠিক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। প্রথমত মানসম্মত কাগজ পাওয়া কঠিন। দ্বিতীয়ত ভালো কাগজ পাওয়া গেলেও কতজন প্রেস মালিক সে কাগজ কিনে বই ছাপাবে সেটা বড় প্রশ্ন। শেষ সময়ে এসে সব খারাপ কাগজ চালিয়ে দেন মিল মালিকরা। যে যাই বলুক মান ধরে রাখা সম্ভব নয়।

জানুয়ারির আগে বই সরবরাহ করা যাবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে শহিদ সেরনিয়াবাত বলেন, আমি সন্দিহান। তবুও চেষ্টা থাকবে সরকারের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে। এ বিষয়ে আমাদের চেষ্টা থাকলেও কতটা সম্ভব হবে তা জানি না। কারণ টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

তিনি বলেন, মিল মালিকরা কারো অধীনে ব্যবসা করেন না। তাদের অগ্রিম টাকা দিলেও কাগজ পাওয়া যায় না। তারা অনেক শক্তিশালী। তাদের মধ্যে ইউনিটি আছে। সুতরাং তারা কারো নির্দেশে কাগজ দেবেন না। অনেক সময় দেখা গেছে- আমাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দামবৃদ্ধি করে দিয়েছে। আমরা কিছুই করতে পারিনি। কাজেই মিল মালিকরা কাগজ দিতে আশ্বস্ত করলেও আমরা নিশ্চিন্ত নই।

নির্ধারিত সময় ও চুক্তি অনুযায়ী বই সরবরাহ করতে না পারলে প্রেস মালিক ও প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে যে আলোচনা রয়েছে সে প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি বলেন, প্রতিবছরই কালো তালিকার কথা বলা হয়, কিন্তু করা হয় না। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের বই দেয়, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করতে আমরা সুপারিশ করি। কিন্তু বোর্ড বা মন্ত্রণালয় তা করে না। এর পেছনে চাপ, সুপারিশ ও অনৈতিক লেনদেন থাকতে পারে।

বাধা বকেয়া বিলও 
নির্ধারিত সময়ে বই ছাপার কাজ শেষ না হওয়ার যেসব কারণ রয়েছে তার একটি হলো ছাপাখানার বকেয়া বিল পরিশোধ না হওয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনসিটিবির সমন্বিত সভায় বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেসব ছাপাখানা মালিকরা নির্ধারিত সময়ে বিল না পাওয়ায় বই ছাপাতে অপারগতা জানিয়েছেন, তাদের বিল ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কাজের বিল বকেয়া রয়েছে এমন একটি ছাপাখানা আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেড। আগের শিক্ষাবর্ষের ২০ শতাংশ পাওনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করায় ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের ( তৃতীয়, চতুর্থ, ও পঞ্চম শ্রেণি) পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজ করায় অপারগতা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বকেয়া বিল পেতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭২ টাকা পাওনা থাকার কথা জানিয়েছে আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেড।