দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের দুটি পক্ষ। নেতাকর্মীদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। জনসম্মুখে বিভিন্ন রকম বেফাঁস কথাবার্তা বলছেন তার গ্রুপের নেতারা। নৌকা প্রতীক পাওয়ার দিনই বাগমারায় ভোট হয়ে গেছে বলে প্রার্থী নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন। একজন নেতা বলেছেন, ‘ফেরেশতা এসে ভোট দিলেও এনামুল (স্বতন্ত্র প্রার্থী) পাশ করবে না।’ আরেক নেতার ঘোষণা, ‘এমপি এনামুল সরাসরি জাহান্নামে যাবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদারী এলাকায় নির্বাচনী এক পথসভায় প্রকাশ্যে এসব বক্তব্য দেওয়া হয়। পথসভা শেষে শিকদারী পেট্রোল পাম্পের পাশে টাকা লেনদেন করতে দেখা যায়। সভায় আসা কয়েকজন ব্যক্তিকে টাকা দেন এমপি প্রার্থীর গাড়িবহরে আসা একজন নেতা। এ প্রতিবেদককে দেখে তড়িঘড়ি করে অন্ধকারের ভেতরে চলে যান তিনি। নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালাম আজাদ তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
বৃহস্পতিবার শিকদারী পেট্রোল পাম্পের সামনে নির্বাচনী পথসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আপনাদের এখানে কোনো আপত্তি করবেন না; ভোট দিবে, ভোট কিন্তু হয়ে গেছে ২৬ তারিখে- এটা মানেন? ২৬ তারিখে যখন নৌকা আবুল কালাম আজাদ পেয়েছে, তখন বাগমারাতে ভোট হয়ে গেছে। ২৬ তারিখে যে আনন্দ বাগমারাতে হয়েছে, এ ভাই বলেছে, এ আনন্দ ঈদেও হয় না।’
মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। এনামুল হক কোনোদিন ভোটে পাশ করবে না। যদি স্বয়ং আল্লাহর ফেরেশতা এসে ভোট দেয়, তাও পাশ করবে না। উনার অপরাধের শেষ নাই।’
পথসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সোবহান চৌধুরীর ছেলে মাজেদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘মনোনয়নপত্র ডিক্লারেশনের আগে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল বিভিন্ন জনসভায় বিভিন্ন পার্টি অফিসে আওয়ামী লীগ যারা করে, সকলকে তিনি শপথ করিয়েছিলেন, ‘আপনারা সকলেই নৌকার প্রতীকের বাইরে যাবেন না, নৌকা প্রতীকে সিল দিবেন।’ এ অঙ্গীকার এ ওয়াদা উনি নিজেও করেছিলেন, সবাইকে দিয়ে করিয়েছিলেন। আজ উনি নিজেই সেই ওয়াদা ভঙ্গকারী।
মিঠু উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রশ্ন করেন, ওয়াদা ভঙ্গকারীকে কী বলা হয় ভাইয়েরা? উপস্থিত সবাই উত্তর দেন, ‘মুনাফিক।’ এসময় মিঠু বলেন, সরাসরি তিনি (এনামুল) জাহান্নামে যাবেন। উনি একজন জাহেল, মিথ্যাবাদী। এমপি এনামুল হক কোটি কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এর আগে গত ১ ডিসেম্বর দেওয়া এক বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৮ ডিসেম্বরের পর ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপিকে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে প্রবেশ করবে দেওয়া যাবে না। পরে এসব বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেঁউখালী গ্রামে এনামুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা করার অভিযোগ ওঠে আজাদ গ্রুপের বিরুদ্ধে। হামলায় এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমানসহ ৪ জন আহত হন বলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ।
এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের পৃথিবী থেকে নাই করে দেওয়ার প্রকাশ্য হুমকিও দেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। এমন হুমকির দেড় মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যাতে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে কথা বলছেন নৌকা প্রতীকের এমপি প্রার্থী আজাদ। এসময় তিনি বলেন, ‘আমার সাথে যারা ভালো ব্যবহার করবে আমি ফেরশতা, যারা খারাপ করবে তারা পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবে। একটা কথা বললাম।’ সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আজাহারুল হককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি আই এম দ্যা গ্রেট লিডার বাগমারা। এনামুল হকের মতো লোকেক ভুলি দিয়ে নৌকা নিয়েছি তার মানে বুঝতে হবে, কোনো আজাহার-মাজাহার এলাকায় থাকবে না কো। নৌকার বাইরে কথা বললে আজাহারের চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ করতে হবে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আজাহার ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তো, নাকি? আপনারে বিরোধীতা করে ওই এলাকায় থাকতে পারবে নাকো। কারণ সে আওয়ামী লীগ করে আওয়ামী লীগের ছেলেপেলের সাথে থাকতে হবে। নৌকার ভোট করতে হবে। ওগলা মাস্তানি থাকবে নাকো। নৌকার বাইরে কোন মাস্তানি চলবে না।’