দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে নানা ধরনের বিশ্লেষণ। ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরাও এই নির্বাচনের দিকে রাখছেন তীক্ষ্ণ নজর। ফলে বাংলাদেশে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনের কোন কিছুই তাদের নিকট গোপন নেই।
পশ্চিমা কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণ হলো, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব রয়েছে এবং ভোটারদের হাতে প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার প্রকৃত বিকল্প নেই। ফলে আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটে জয় হবে আওয়ামী লীগের।
ঢাকায় পশ্চিমা কয়েকটি দেশের দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ভোটের তপশিল ঘোষণার পর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারা প্রতিবেদন বানিয়েছেন। এরই মধ্যে ওই প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন নিজ নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই সব দেশের কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই প্রায় একই রকম পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। পশ্চিমা প্রভাবশালী একটি দেশের কূটনীতিক নাম না প্রকাশের শর্তে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নির্বাচনে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা জোটগত দলগুলো নির্বাচন বয়কট করায় ভোটারদের হাতে প্রকৃত বিকল্প নেই।’
এ নির্বাচন ঘিরে সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দূতাবাস। সেই সঙ্গে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা তারা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
সব রাজনৈতিক দলকে রাজি করিয়ে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে না পারায় আক্ষেপ রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে। ইইউভুক্ত দেশের এক কূটনীতিক বলেন, রাজনীতিতে বহুত্ববাদ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সবার মেনে চলা উচিত। এগুলো দেশের উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রাখতে সহায়তা করে। আর বাংলাদেশকে তা ইইউর জিএসপি প্লাস পেতে সহায়তা করবে। কারণ ইইউর জিএসপি প্লাসের অন্যতম শর্ত হলো– গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন। ওই কূটনীতিক জানান, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউর একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সফর করছে। তারা তাদের প্রতিবেদন দেবে ভোটের কয়েক সপ্তাহ পর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমা আরেক কূটনীতিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ‘যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, তাকে ক্ষমতাসীন দলের যোগ্য প্রার্থী বাছাই বললে খুব একটা ভুল হবে না। কারণ পুরো বিষয়টি যেভাবে সামনে এসেছে, তাতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই। তাদের একজন নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, আরেকজন পাননি।’তবে, বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রতিটি দেশের নিজস্ব অগ্রাধিকার রয়েছে, যা অন্যদের থেকে ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ওই অগ্রাধিকার মাথায় রেখে।’ এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্রই তুলে ধরতে হয়। তবে এর মানে এই নয় যে, আমাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।’