ঢাকা ০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এস আলমের নির্দেশে টাকা সরানো হতো সাদা স্লিপে তাসাউফ রিয়েল এস্টেট লিঃ এর চেয়ারম্যান ভূমি দস্যু শরীফ বিন আকবর খান সাদুল্লাপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ‘জিনের বাদশা’ আবু বকর অবৈধ সম্পদেও বাদশা জাজিরায় বালুর নিচে পুঁতে রাখা অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের অসাংবিধানিক নির্বাচন বাতিলের দাবি মিঠাপুকুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান রাজনৈতিক চাপে ধামাচাপা পড়েছে ফাইল গাজীপুর কাস্টমসের পিওন কাওসারের কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষমতার সান্নিধ্যে বিত্তবান সাবেক সচিব খাইরুল কুমিল্লায় হাসপাতাল দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম

আর্থিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে তার জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের শর্ত অন্যতম। এসব শর্ত পূরণ করতে বিদ্যুতে ভর্তুকি বন্ধ কিংবা কমিয়ে আনবে সরকার। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

অর্থনীতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ, ব্যয় ও বাজেটের সামঞ্জস্য, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি সমন্বয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার আবেদন করে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন একটি দল গত ২৬ অক্টোবর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে। বৈঠকে তারা ভর্তুকি খাতে সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা, আমদানির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরি করা ইত্যাদি।

আইএমএফের মতে, ভর্তুকির বড় একটি অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় ঋণ থেকে। যা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে এনে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। বিদ্যুতের ভর্তুকির বিষয়ে চলতি সপ্তাহে আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসব। সামঞ্জস্য বজায় রেখে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসবে। তবে দাম বাড়বে বা কমবে কী-না এটি নির্ভর করছে সরকার কতটুকু ভর্তুকি রাখবে তার ওপরে।

তবে আইএমএফ মিশন ঢাকায় আসার পূর্বেই জুন মাসে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২৩ শতাংশ ও এলএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়। এছাড়া আগস্ট মাসে জ্বালানি তেলের দাম ৪৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ( বিপিডিবি)। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপ ও মানুষের জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের শর্তা অনুযায়ী সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম ইতোমধ্যে বাড়িয়েছে। এখন ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ালেই আইএমএফের প্রধান শর্তও বাস্তবায়ন হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে আইএমএফের ঋণ বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। তাই ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বিদ্যুৎ বিষয়ক সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের ভর্তুকির বিষয়ে চলতি সপ্তাহে আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসব। সামঞ্জস্য বজায় রেখে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসবে। তবে দাম বাড়বে বা কমবে কী-না এটি নির্ভর করছে সরকার কতটুকু ভর্তুকি রাখবে তার ওপরে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়,  আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম বাড়ানো না হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের জন্য আসন্ন অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। যা চলতি বছরের চেয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের জন্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা বিগত কয়েকটি অর্থবছরের বরাদ্দের চাইতে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৯২০ কোটি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম  বলেন, আইএমএফ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই শর্ত দিয়ে থাকে। তবে এবার ভর্তুকির পরিমাণ কমলেও বিদ্যুতের দাম বাড়বে কী-না সেটা নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ দেশ এমনিতেই অর্থনৈতিক চাপে আছে। আমরা আগেও দেখেছি তেল-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি কীভাবে বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে লোকসান সামলাতে না পারলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে। যা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এস আলমের নির্দেশে টাকা সরানো হতো সাদা স্লিপে

বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম

আপডেট সময় ০৯:৫৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

আর্থিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে তার জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের শর্ত অন্যতম। এসব শর্ত পূরণ করতে বিদ্যুতে ভর্তুকি বন্ধ কিংবা কমিয়ে আনবে সরকার। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

অর্থনীতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ, ব্যয় ও বাজেটের সামঞ্জস্য, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি সমন্বয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার আবেদন করে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন একটি দল গত ২৬ অক্টোবর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে। বৈঠকে তারা ভর্তুকি খাতে সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা, আমদানির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরি করা ইত্যাদি।

আইএমএফের মতে, ভর্তুকির বড় একটি অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় ঋণ থেকে। যা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে এনে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। বিদ্যুতের ভর্তুকির বিষয়ে চলতি সপ্তাহে আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসব। সামঞ্জস্য বজায় রেখে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসবে। তবে দাম বাড়বে বা কমবে কী-না এটি নির্ভর করছে সরকার কতটুকু ভর্তুকি রাখবে তার ওপরে।

তবে আইএমএফ মিশন ঢাকায় আসার পূর্বেই জুন মাসে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২৩ শতাংশ ও এলএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়। এছাড়া আগস্ট মাসে জ্বালানি তেলের দাম ৪৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ( বিপিডিবি)। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপ ও মানুষের জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের শর্তা অনুযায়ী সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম ইতোমধ্যে বাড়িয়েছে। এখন ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ালেই আইএমএফের প্রধান শর্তও বাস্তবায়ন হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে আইএমএফের ঋণ বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। তাই ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বিদ্যুৎ বিষয়ক সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের ভর্তুকির বিষয়ে চলতি সপ্তাহে আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসব। সামঞ্জস্য বজায় রেখে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসবে। তবে দাম বাড়বে বা কমবে কী-না এটি নির্ভর করছে সরকার কতটুকু ভর্তুকি রাখবে তার ওপরে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়,  আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম বাড়ানো না হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের জন্য আসন্ন অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। যা চলতি বছরের চেয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের জন্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা বিগত কয়েকটি অর্থবছরের বরাদ্দের চাইতে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৯২০ কোটি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম  বলেন, আইএমএফ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই শর্ত দিয়ে থাকে। তবে এবার ভর্তুকির পরিমাণ কমলেও বিদ্যুতের দাম বাড়বে কী-না সেটা নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ দেশ এমনিতেই অর্থনৈতিক চাপে আছে। আমরা আগেও দেখেছি তেল-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি কীভাবে বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে লোকসান সামলাতে না পারলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে। যা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে।