বাহুবল প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপন সরকারি মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণয় চন্দ্র দেবের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে কাঁদাছুড়াছুড়ি চলছেই। প্রধান শিক্ষক বরাবরই শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ টাকা হারে চাঁদা তোলার কথা অস্বীকার করে আসছেন। কিন্তু চাঁদা তোলার কথা ভেতরে একরকম, বাহিরে অন্যরকম প্রকাশ করছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্কুলের শিক্ষকগণের মধ্যে কেউ কেউ প্রধান শিক্ষক কর্তৃক চাঁদা গ্রহণের টাকা স্বীকার করলেও অনেক শিক্ষক সরাসরি স্বীকার না করলেও ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন টাকা যে প্রধান শিক্ষক নিয়েছেন। এমন অনেক শিক্ষক শিক্ষিকাদের জবানবন্দীর অডিও রেকর্ড এসেছে আমাদের হাতে। মূলত: চাঁদাবাজি শুরু হয়, ২০১৭ সালে স্কুল জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে। এ নিয়ে ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবীরের নামে এসব টাকা তোলা হয়। ১৪ শিক্ষক লাখ টাকা হারে টাকা দিলে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা হয়।
এদিকে বিগত মাসে স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে ১১ জনের চাকুরি জাতীয়করণ প্রায় চুড়ান্ত। ইতিমধ্যে সিলেট বিভাগীয় শিক্ষা অধিদপ্তরে তারা যোগদানও করেছেন। কিন্তু ৩ শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণের কোন সুরাহা হয়নি। কিন্তু তারাও তো টাকা দিয়েছেন। তাহলে হলো না কেন? এর কারণ বঞ্চিত শিক্ষকরা এখনো জানেন না। দীর্ঘদিন পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসলো কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকদের মুখে জানা যায়, বিগত মাস থেকে বেতন ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। হয়ত প্রক্রিয়াকরণ শেষে বেতন-ভাতা ছাড়বে সরকার। ২০১৭ সাল হইতে অদ্যাবদি পর্যন্ত সুবিধাদিসহ আটক বেতন ছাড়িয়ে আনতে আরো কয়েক লাখ টাকা লাগবে বলে প্রধান শিক্ষক সকল শিক্ষকদের জানিয়ে দেন। ওই সময়ই অনেকের মাঝে সন্দেহ দানা বাধঁতে থাকে। এর সিনিয়র সহকারী শিক্ষক শাহ কামরুন্নাহারের স্বামী কবি ও গীতিকার এবং বঙ্গবন্ধু কবিতা সম্ভারের প্রতিষ্ঠাতা জাকিরুল ইসলাম চৌধুরী মুকুল অনুসন্ধানে নামেন। তাকে কৌশলে সহযোগিতা করেন আরো কয়েক শিক্ষক শিক্ষিকা। মুকুল চৌধুরী জেলা, বিভাগীয় অফিসসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন জাতীয়করণের ক্ষেত্রে এতসব টাকা লাগার কথা নয়। এর পরই মুকুল চৌধুরী টাকা ফেরত চান প্রধান শিক্ষকের কাছে। এলাকায় প্রচার হওয়ায় সম্মানহানি ভেবে ৩১ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টারদিকে শিক্ষক রুমে মুকুল চৌধুরীর কাছে টাকা ফেরতের অপারগতা জানিয়ে ক্ষমা চাঁন। কিন্তু বাহিরে করছেন অস্বীকার। এতেই ক্ষোভ। কিন্তু বাহিরের প্রচার বন্ধে এবং মুকুল চৌধুরীকে ঘায়েল করতেই উল্টো তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবীর অভিযোগের নাটক সাজান প্রধান শিক্ষক। এনিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে সভার নোটিশও প্রদান করেন। কিন্তু জিজ্ঞাস্য বিষয় হচ্ছে- “আসলেই কি মুকুল চৌধুরী শিক্ষকদের কাছে ১লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছেন”? মুকুল চৌধুরী কি সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ? শিক্ষকগণ কি এমন কোন বড় মেগা প্রজেক্টের ঠিকাদার যে তাদের কাছে চাঁদা দাবী করলেন? কোন উপাত্তই ধরা দেয় না। কোন শিক্ষকই স্বীকার করেননি মুকুল চৌধুরী চাঁদা চেয়েছেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষক যে মুকুল চৌধুরীর সাথে আপোস করতে চেয়েছেন তার প্রমাণ রয়েছে। কয়েক শিক্ষক সালিশিও করেছেন শেষ করতে। এমন সালিশ শিক্ষকের অডিও ভয়েস রেকর্ডও আমাদের হাতে পৌছেছে। এতে তাদের স্বীকারোক্তিও রয়েছে প্রধান শিক্ষকের টাকা নেয়ার বিষয়টি। এছাড়া নোটিশের কথাও স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক বলেন- মুকুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছি। কিন্তু সদরের চেয়ারম্যান তার আত্মীয় বিধায় তিনি মিমাংসা করবেন বলে আমি মামলার পথ থেকে ফিরে আসি। প্রধান শিক্ষক বাহিরের মানুষের কাছে এভাবেই জবাব দেন বলে জানান জাকিরুল ইসলাম চৌধুরী মুকুল। আর ঘরের ভেতর ক্ষমা চাঁন। জানতে চাইলে মুকুল চৌধুরী বলেন-আমরা টাকা দিয়েছি, তিনি আমিসহ শিক্ষকদের উপস্থিতিতে স্বীকার করেছেন। কিন্তু স্কুলের গেইটের বাইরে গিয়ে মিথ্যাচার করছেন কেন? তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন- আমি কি চাঁদাবাজ? আমি শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবী করেছি প্রধান শিক্ষক প্রমাণ করতে হবে। অন্যতায় আইন আছে। কিন্তু আমাদের নিরীহ শিক্ষকদের টাকা ফেরত দিতেই হবে। যেসব তথ্য উপাত্ত আছে, প্রধান শিক্ষক যতই অস্বীকার করুন না কেন আইন দেখবে। বিষয়টি মিমাংসার দাবী জানিয়েছেন বাহুবলের সুশীল সমাজ। চলবে।
সংবাদ শিরোনাম ::
বাহুবল ডিএনআই গভ: হাইস্কুল নিয়ে কাদাঁছুড়াছুড়ি চলছেই! মিমাংসার দাবী
- মোছাঃ নিছপা আক্তার, হবিগঞ্জ
- আপডেট সময় ০৭:১২:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- ৬০৭ বার পড়া হয়েছে
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ