ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় ভারতীয় মদসহ ৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি রোটারি ক্লাব অব পাবনার উদ্যোগে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মাঝে পূজা বস্ত্র বিতরণ কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ায় যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক ১ সরকারি ব্যবস্থায় দুর্নীতি বন্ধ চান এনজিও নেতারা কাবা শরিফের গিলাফ উপহার পেলেন ধর্ম উপদেষ্টা সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরখাস্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুজা মন্ডবে শেষ প্রতিমা তৈরীর কাজ, চলছে শেষ সময়ে প্রস্তুতি লালমনিরহাটে মধ্যরাতে আগুনে পুড়ল ১৪ দোকান, কোটি টাকার ক্ষতি কুমিল্লা জেলা দেবিদ্বার থানা গ্রাম পুলিশের নির্দেশে রাতের অন্ধকারে অবৈধ গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ। দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় জেলা-উপজেলায় কন্ট্রোল রুম চালু : আইজিপি

পার্থেনিয়াম আগাছা মানুষ ও কৃষি জমির জন্য বিপদ

 

পার্থেনিয়াম হচ্ছে সূর্যমুখী উপজাতির উদ্ভিদ যার জন্ম মেক্সিকোতে কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ তথা আমাদের এ উপমহাদেশে, বিপদজনক এ আগাছাটি বংশ বিস্তারের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। পার্থেনিয়ামের জীবনকাল তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই এ আগাছা তিন থেকে চারবার ফুল ও বীজ দিয়ে থাকে। পার্থেনিয়াম এমন একটি আগাছা যা একটি গাছ থেকেই
চার হাজার থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এর বীজ এতটাই ক্ষুদ্র যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর, গাড়ির চাকা, জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গেও এর বিস্তার ঘটে।

পার্থেনিয়ামে আছে sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও ব্যপক ক্ষতিকর। পার্থেনিয়াম এতটাই বিপদজনক আগাছা যা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমে যায়। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদি পশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজম সহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে হাত পা চুলকায়, লাল হয়ে যায়, এবং পরে ত্বকে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথা ব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুক্তে পারে। ১০ মিটার দুর থেকে এই ফুলের রেণু থেকে মানুষের এলার্জি, হাপানি, চর্মরোগ, ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি হতে পারে। এ আগাছা মানুষের ৭০ শতাংশ চর্মরোগ ও ৩০ শতাংশ মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়াম জনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পার্থেনিয়াম আগাছা ধ্বংস করার উপায়:
পার্থেনিয়ামে কেরোসিন স্প্রে করলে খুব তাড়াতাড়ি এ আগাছা মারা যায়। তবে এই পদ্ধতিটিতে অনেক অসুবিধা আছে যেমন পদ্ধতিটি ব্যয়সাপেক্ষ আবার কেরোসিন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে পানি নষ্ট হয়।তাই খুব কম খরচে এটি বিনাশ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ৪ থেকে ৫ লিটার পানিতে ১ কেজি লবণ ভালো করে মিশিয়ে এ আগাছার উপরে বা গোড়ায় স্প্রে করলে ২ দিনের ভিতর এ আগাছা মারা যায়।

পার্থেনিয়াম আগাছার বিষয়গুলি আমাদের সতর্ক থাকা উচিৎঃ
১: পার্থেনিয়াম আগাছায় কোনো ভাবেই হাত দেওয়া যাবে না আর বাচ্চাদের থেকে অবশ্যই দুরে রাখতে হবে।
২: এ আগাছা সাফাই করার সময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে নিবেন, তাছাড়া ফুল হাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে নিলে আরও বেশি ভালো হয়।
৩: এ আগাছা সাফাইয়ের কাজ শেষ হবার পরে জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে নিবেন ও নিজে গোসল করে বাসায় যাবেন।

আমাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবিস্তার করছে, তাই সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের চারপাশ পার্থেনিয়াম মুক্ত রাখুন, এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করুন ও নিজেরা সুস্থ থাকুন।

আমাদের সকলেরই পার্থেনিয়াম বিষয়ে আারও বেশি সচেতন হতে হবে, আমাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, কেবলমাত্র তাহলেই এ বিপদজনক আগাছা ধ্বংস করা সম্ভব। আর আমারও নিরাপদ থাকতে পারবো।

কৃষিবিদ মোঃ নাজমুস সাকিব বলেন, যত প্রকারের আগাছা তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদজনক আগাছা হচ্ছে পার্থেনিয়াম। তিনি আরও বলেন আমাদের একার পক্ষে এ আগাছা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, সবার আগে দরকার জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, কৃষকদের কে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি কি ভাবে এ আগাছা আমাদের ক্ষতি করে, কি ভাবে এ আগাছা ধ্বংস করা যায়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লায় ভারতীয় মদসহ ৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি

পার্থেনিয়াম আগাছা মানুষ ও কৃষি জমির জন্য বিপদ

আপডেট সময় ১১:৩৫:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

 

পার্থেনিয়াম হচ্ছে সূর্যমুখী উপজাতির উদ্ভিদ যার জন্ম মেক্সিকোতে কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ তথা আমাদের এ উপমহাদেশে, বিপদজনক এ আগাছাটি বংশ বিস্তারের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। পার্থেনিয়ামের জীবনকাল তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই এ আগাছা তিন থেকে চারবার ফুল ও বীজ দিয়ে থাকে। পার্থেনিয়াম এমন একটি আগাছা যা একটি গাছ থেকেই
চার হাজার থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এর বীজ এতটাই ক্ষুদ্র যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর, গাড়ির চাকা, জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গেও এর বিস্তার ঘটে।

পার্থেনিয়ামে আছে sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও ব্যপক ক্ষতিকর। পার্থেনিয়াম এতটাই বিপদজনক আগাছা যা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমে যায়। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদি পশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজম সহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে হাত পা চুলকায়, লাল হয়ে যায়, এবং পরে ত্বকে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথা ব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুক্তে পারে। ১০ মিটার দুর থেকে এই ফুলের রেণু থেকে মানুষের এলার্জি, হাপানি, চর্মরোগ, ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি হতে পারে। এ আগাছা মানুষের ৭০ শতাংশ চর্মরোগ ও ৩০ শতাংশ মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়াম জনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পার্থেনিয়াম আগাছা ধ্বংস করার উপায়:
পার্থেনিয়ামে কেরোসিন স্প্রে করলে খুব তাড়াতাড়ি এ আগাছা মারা যায়। তবে এই পদ্ধতিটিতে অনেক অসুবিধা আছে যেমন পদ্ধতিটি ব্যয়সাপেক্ষ আবার কেরোসিন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে পানি নষ্ট হয়।তাই খুব কম খরচে এটি বিনাশ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ৪ থেকে ৫ লিটার পানিতে ১ কেজি লবণ ভালো করে মিশিয়ে এ আগাছার উপরে বা গোড়ায় স্প্রে করলে ২ দিনের ভিতর এ আগাছা মারা যায়।

পার্থেনিয়াম আগাছার বিষয়গুলি আমাদের সতর্ক থাকা উচিৎঃ
১: পার্থেনিয়াম আগাছায় কোনো ভাবেই হাত দেওয়া যাবে না আর বাচ্চাদের থেকে অবশ্যই দুরে রাখতে হবে।
২: এ আগাছা সাফাই করার সময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে নিবেন, তাছাড়া ফুল হাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে নিলে আরও বেশি ভালো হয়।
৩: এ আগাছা সাফাইয়ের কাজ শেষ হবার পরে জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে নিবেন ও নিজে গোসল করে বাসায় যাবেন।

আমাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবিস্তার করছে, তাই সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের চারপাশ পার্থেনিয়াম মুক্ত রাখুন, এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করুন ও নিজেরা সুস্থ থাকুন।

আমাদের সকলেরই পার্থেনিয়াম বিষয়ে আারও বেশি সচেতন হতে হবে, আমাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, কেবলমাত্র তাহলেই এ বিপদজনক আগাছা ধ্বংস করা সম্ভব। আর আমারও নিরাপদ থাকতে পারবো।

কৃষিবিদ মোঃ নাজমুস সাকিব বলেন, যত প্রকারের আগাছা তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদজনক আগাছা হচ্ছে পার্থেনিয়াম। তিনি আরও বলেন আমাদের একার পক্ষে এ আগাছা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, সবার আগে দরকার জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, কৃষকদের কে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি কি ভাবে এ আগাছা আমাদের ক্ষতি করে, কি ভাবে এ আগাছা ধ্বংস করা যায়।