ঢাকা ০১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ছাত্রদল নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ গ্রেফতার পটুয়াখালীতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণের শুভ উদ্বোধন পশ্চিমা আদর্শ-সংস্কৃতির বিষয়ে যে সতর্কবার্তা দিলেন বায়তুল মোকাররমের খতিব পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু কুমিল্লায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার বোরহানউদ্দিনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে নিজ ঘরে আগুন আওয়ামীলীগ নেতার ফিউচার ক্যাডেট একাডেমি, পটুয়াখালী শাখা’র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ; প্রশংসায় ভাসছে একাডেমিটি লালমনিরহাটে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যসহ আহত-১০ পাঁচবিবি জিয়া পরিষদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা আমন ধান কাটার পর আলু চাষে লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আত্রাইয়ের কৃষকেরা

ডলার সংকটে হাতছাড়া কয়লায় দাম কমার সুবিধা

ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার কম দামের সুফল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এখন পরিবহন ব্যয়সহ ১০০ থকে ১১০ ডলারের মধ্যে প্রতি টন কয়লা দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে।

অথচ গত বছরের আগস্ট মাসেও একই মানের কয়লার দাম ছিল ৪৬০ ডলার।

পরিবহন ব্যয়সহ যা দেশে আনতে খরচ পড়ত ৪৮০ ডলার। সে হিসেবে এখন কিনলে প্রতি টন কয়লায় সাশ্রয় হতো ৩৭০ ডলার। টাকার অঙ্কে সাশ্রয়ের পরিমাণ গত আগস্টের দামের তুলনায় প্রতি টনে ৩৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ এবং কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন কয়লা দিয়ে প্রতি কিলোওয়াটআওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ নেমে গেছে পাঁচ টাকার নিচে। সব মিলিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯ টাকার মতো। কয়লার দাম বেশি থাকায় গত বছরের শেষের দিকেও প্রতি কিলোওয়াটআওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৭ থেকে ২২ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই ছয় মাসের কয়লা কিনে রাখার উপযুক্ত সময়। কিন্তু ডলার সংকটে অতিরিক্ত কয়লা কেনা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কোল প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী দাম পরিশোধ করে কোম্পানিগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন কয়লার ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় কয়লার দর পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম বা যে সময়ে নেওয়া হবে ওই সময়ের দাম উল্লেখ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হতে পারে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের জন্য কয়লা কিনে রাখা যায় না। কারণ বাতাসের জলীয়বাষ্পের সঙ্গে মিশে কয়লা নষ্ট হতে পারে। এলসি খুলে প্রয়োজন অনুযায়ী আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে ডলার সংকটের কারণে কয়লা কেনা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, মন্ত্রণালয় তো কয়লা আনে না। এ বিষয়ে সরাসরি তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রর নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

কয়লার আন্তর্জাতিক বাজার দরের হিসাব বলছে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৩২২ কিলোক্যালরির প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ৭৯ ডলার। বাংলাদেশের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫০৫০ কিলোক্যালরির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর দেশের অন্য কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করে ৪৬০০ কিলোক্যালরির কয়লা। কয়লার দাম নির্ভর করে কিলোক্যালরির ওপর। যে কয়লা যত ভালো তার দাম তত বেশি হয়। বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কিলোক্যালরি অনুযায়ী দাম নির্ধারণের পর আবার ‘সরবরাহকারী ডিসকাউন্ট’ বা ছাড় পায়।

গ্লোবাল মান্থলি কোল পাওয়ার ইনডেক্স ২০২০-২৩-এর হিসাব বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম বাড়তে থাকে। গত বছর আগস্টে যা সর্বোচ্চ ছিল ৫৭৭ ডলার। কিন্তু এরপর ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম আবার কমতে থাকে। গত জানুয়ারিতেও টনপ্রতি ৬৩২২ কিলোক্যালরির কয়লার দাম ছিল ৪১৭ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে যা কমে টনপ্রতি ২৮৩ ডলারে নেমে আসে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম আরও কমে আসে। এখন সবচেয়ে ভালো মানের কয়লা বিক্রি হচ্ছে ১২২ ডলারে (গত ১৪ জুনের হিসাব)।

এক মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা চলাতে ৯ দশমিক ৬৪ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। ভারত থেকে আদানির বিদ্যুৎ মিলিয়ে এখন দেশে ৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পায়রাতে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাশখালীতে এসএস পাওয়ারের ১৩২০ মেগাওয়াট, বরগুনার আমতলীতে ৩৬০ মেগাওয়াট, রামপালে ৬৬০ মেগাওয়াট এবং ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানির ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লায় উৎপাদন হচ্ছে। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪৯ হাজার ৭৪২ টন।

এ ছাড়া শিগগিরই মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে রামপালের। তখন দেশে কয়লাচালিত বিদ্যুতের পরিমাণ বেড়ে হবে ৭ হাজার ২০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগ আসবে কয়লা থেকে। তখন কয়লার চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য এরই মধ্যে কয়লা আমদানি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যদি কয়লা কিনে রাখা হয় তাহলে আগামী ছয় মাসের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি ৮০ ভাগ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তাহলে দৈনিক ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সে হিসেবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে তিন টাকা করে দৈনিক ৪০ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। আর ছয় মাসের হিসাবে সাশ্রয় সম্ভব সাত হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। সাশ্রয় আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

সূত্র বলছে প্রতিবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্থ বিভাগ ৩৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। এর মধ্যে প্রতি মাসে ৩ হাজার কোটি করে ১০ মাসে ৩০ হাজার কোটি, আর মে এবং জুন মাসে ৪ হাজার কোটি করে আট হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, কম দামের সুবিধা নিয়ে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখলে দুই দিক থেকে লাভ হবে। একটি হচ্ছে কম দামে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কম করলেও হবে। এতে করে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ অথ্য ব্যয় করতে হবে না। গত বছর পিডিবির ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২২ টাকা ১০ পয়সা খরচ করেছে। অর্থাৎ এখন যদি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি ইউনিট ৯ টাকা করে উৎপাদন করা যায়, তাহলেও প্রতি ইউনিটে ১৩ দশমিক ১০ পয়সা সাশ্রয় করা সম্ভব। দেশে এখন ফার্নেস অয়েলচালিত ৫ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াটের ৫৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডলার সরবরাহের কী অবস্থা, সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়লা বাবদ কেন্দ্রটির বকেয়া ছিল ৪২৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে ২৯৮ মিলিয়ন ডলার। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৮ লাখ টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে, সে হিসাবে ৬৬ দিনের কয়লার সংস্থান হয়েছে কেন্দ্রটিতে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর যে ৫৮ মিলিয়ন ডলার বেচেছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়লা আমদানির জন্য ওই ডলার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। আর ঝাড়খণ্ডের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধের জন্য পিডিবি এলসি খুলতে চাইলেও ডলার সংকটের কারণে কোনো ব্যাংক এলসি খুলতে চাইছে না।

একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ডলার সংকটের বিষয় নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে। এসব নিয়ে কথা বলায় অনেকে নাখোশ হয়েছেন। বিষয়টি বিব্রতকর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যেসব বৈঠক হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহি চৌধুরী বীরবিক্রম থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাশ্রয় করা সম্ভব এটি আমরা হয়তো তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। সাশ্রয় হলে টাকা রাষ্ট্রের কাছেই থাকবে। অন্যদিকে সাশ্রয় করা সম্ভব না হলে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কোনটি ভালো তা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সৌজন্যে: প্রতিদিনের বাংলাদেশ

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাত্রদল নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ গ্রেফতার

ডলার সংকটে হাতছাড়া কয়লায় দাম কমার সুবিধা

আপডেট সময় ১২:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩

ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার কম দামের সুফল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এখন পরিবহন ব্যয়সহ ১০০ থকে ১১০ ডলারের মধ্যে প্রতি টন কয়লা দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে।

অথচ গত বছরের আগস্ট মাসেও একই মানের কয়লার দাম ছিল ৪৬০ ডলার।

পরিবহন ব্যয়সহ যা দেশে আনতে খরচ পড়ত ৪৮০ ডলার। সে হিসেবে এখন কিনলে প্রতি টন কয়লায় সাশ্রয় হতো ৩৭০ ডলার। টাকার অঙ্কে সাশ্রয়ের পরিমাণ গত আগস্টের দামের তুলনায় প্রতি টনে ৩৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ এবং কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন কয়লা দিয়ে প্রতি কিলোওয়াটআওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ নেমে গেছে পাঁচ টাকার নিচে। সব মিলিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯ টাকার মতো। কয়লার দাম বেশি থাকায় গত বছরের শেষের দিকেও প্রতি কিলোওয়াটআওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৭ থেকে ২২ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই ছয় মাসের কয়লা কিনে রাখার উপযুক্ত সময়। কিন্তু ডলার সংকটে অতিরিক্ত কয়লা কেনা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কোল প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী দাম পরিশোধ করে কোম্পানিগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন কয়লার ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় কয়লার দর পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম বা যে সময়ে নেওয়া হবে ওই সময়ের দাম উল্লেখ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হতে পারে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের জন্য কয়লা কিনে রাখা যায় না। কারণ বাতাসের জলীয়বাষ্পের সঙ্গে মিশে কয়লা নষ্ট হতে পারে। এলসি খুলে প্রয়োজন অনুযায়ী আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে ডলার সংকটের কারণে কয়লা কেনা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, মন্ত্রণালয় তো কয়লা আনে না। এ বিষয়ে সরাসরি তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রর নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

কয়লার আন্তর্জাতিক বাজার দরের হিসাব বলছে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৩২২ কিলোক্যালরির প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ৭৯ ডলার। বাংলাদেশের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫০৫০ কিলোক্যালরির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর দেশের অন্য কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করে ৪৬০০ কিলোক্যালরির কয়লা। কয়লার দাম নির্ভর করে কিলোক্যালরির ওপর। যে কয়লা যত ভালো তার দাম তত বেশি হয়। বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কিলোক্যালরি অনুযায়ী দাম নির্ধারণের পর আবার ‘সরবরাহকারী ডিসকাউন্ট’ বা ছাড় পায়।

গ্লোবাল মান্থলি কোল পাওয়ার ইনডেক্স ২০২০-২৩-এর হিসাব বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম বাড়তে থাকে। গত বছর আগস্টে যা সর্বোচ্চ ছিল ৫৭৭ ডলার। কিন্তু এরপর ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম আবার কমতে থাকে। গত জানুয়ারিতেও টনপ্রতি ৬৩২২ কিলোক্যালরির কয়লার দাম ছিল ৪১৭ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে যা কমে টনপ্রতি ২৮৩ ডলারে নেমে আসে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম আরও কমে আসে। এখন সবচেয়ে ভালো মানের কয়লা বিক্রি হচ্ছে ১২২ ডলারে (গত ১৪ জুনের হিসাব)।

এক মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা চলাতে ৯ দশমিক ৬৪ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। ভারত থেকে আদানির বিদ্যুৎ মিলিয়ে এখন দেশে ৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পায়রাতে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাশখালীতে এসএস পাওয়ারের ১৩২০ মেগাওয়াট, বরগুনার আমতলীতে ৩৬০ মেগাওয়াট, রামপালে ৬৬০ মেগাওয়াট এবং ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানির ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লায় উৎপাদন হচ্ছে। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪৯ হাজার ৭৪২ টন।

এ ছাড়া শিগগিরই মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে রামপালের। তখন দেশে কয়লাচালিত বিদ্যুতের পরিমাণ বেড়ে হবে ৭ হাজার ২০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগ আসবে কয়লা থেকে। তখন কয়লার চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য এরই মধ্যে কয়লা আমদানি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যদি কয়লা কিনে রাখা হয় তাহলে আগামী ছয় মাসের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি ৮০ ভাগ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তাহলে দৈনিক ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সে হিসেবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে তিন টাকা করে দৈনিক ৪০ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। আর ছয় মাসের হিসাবে সাশ্রয় সম্ভব সাত হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। সাশ্রয় আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

সূত্র বলছে প্রতিবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্থ বিভাগ ৩৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। এর মধ্যে প্রতি মাসে ৩ হাজার কোটি করে ১০ মাসে ৩০ হাজার কোটি, আর মে এবং জুন মাসে ৪ হাজার কোটি করে আট হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, কম দামের সুবিধা নিয়ে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখলে দুই দিক থেকে লাভ হবে। একটি হচ্ছে কম দামে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কম করলেও হবে। এতে করে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ অথ্য ব্যয় করতে হবে না। গত বছর পিডিবির ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২২ টাকা ১০ পয়সা খরচ করেছে। অর্থাৎ এখন যদি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি ইউনিট ৯ টাকা করে উৎপাদন করা যায়, তাহলেও প্রতি ইউনিটে ১৩ দশমিক ১০ পয়সা সাশ্রয় করা সম্ভব। দেশে এখন ফার্নেস অয়েলচালিত ৫ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াটের ৫৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডলার সরবরাহের কী অবস্থা, সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়লা বাবদ কেন্দ্রটির বকেয়া ছিল ৪২৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে ২৯৮ মিলিয়ন ডলার। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৮ লাখ টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে, সে হিসাবে ৬৬ দিনের কয়লার সংস্থান হয়েছে কেন্দ্রটিতে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর যে ৫৮ মিলিয়ন ডলার বেচেছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়লা আমদানির জন্য ওই ডলার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। আর ঝাড়খণ্ডের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধের জন্য পিডিবি এলসি খুলতে চাইলেও ডলার সংকটের কারণে কোনো ব্যাংক এলসি খুলতে চাইছে না।

একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ডলার সংকটের বিষয় নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে। এসব নিয়ে কথা বলায় অনেকে নাখোশ হয়েছেন। বিষয়টি বিব্রতকর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যেসব বৈঠক হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহি চৌধুরী বীরবিক্রম থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাশ্রয় করা সম্ভব এটি আমরা হয়তো তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। সাশ্রয় হলে টাকা রাষ্ট্রের কাছেই থাকবে। অন্যদিকে সাশ্রয় করা সম্ভব না হলে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কোনটি ভালো তা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সৌজন্যে: প্রতিদিনের বাংলাদেশ