ঢাকা ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ বিস্ময়ের ব্যাপার : আরেফিন সিদ্দিক

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ বিস্ময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেছেন, ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু গণভবনে যেভাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, ১৯৭১ সালের  ১৭ এপ্রিল একেবারে যুদ্ধরত অবস্থায় আমাদের প্রথম সরকার একইভাবে শপথ নিয়েছিলেন। অর্থাৎ সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটা একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে রোববার বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার : ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে যেকোনো সময় পাকিস্তানিবাহিনী বোমা বর্ষণ করবে, এ ধরনের খবরাখবরও ছিল। তারপরও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হলো সেই মুক্তাঞ্চলে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে উপস্থাপিত হলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করলেন। প্রথম সরকার বলে শপথে কোনো রকমের কাট-ছাট বা সংক্ষিপ্ত করা হয়নি।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২৫ মার্চ থেকে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানিরা যে আক্রমণ শুরু করল, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই ঘোষণা একমাত্র বঙ্গবন্ধুই দিতে পারেন। কারণ বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত, পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা।

তিনি আরও বলেন, সেই অবিসংবাদিত নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, সেটি বুঝা যায় ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খানের দেওয়া জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে।

সেখানে ইয়াহিয়া বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং সেজন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে তার শাস্তি হবে। ইয়াহিয়া সেদিনের বক্তব্যে ১৩-১৪ বার বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেন। সেই ভাষণে একজনের নামই উচ্চারণ করা হয়েছে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির নাম সেদিন উচ্চারণের প্রয়োজন পড়েনি। কারণ, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কর্তৃত্ব ও অধিকার একমাত্র পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই ছিল।

পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের পরাধীনতার ইতিহাস ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা থাকলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি একই সূত্রে গাঁথা।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, নানা রকম উপাদান ও নানা কিছুর সংযোজন ঘটিয়ে কী দূরদৃষ্টি, দৃঢ়তা ও শক্তিময়তা নিয়ে, জনতার শক্তির বলে বাংলাদেশ আন্দোলন সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জন করল। পৃথিবীর বড় রাষ্ট্রগুলোর সরকার সমর্থন করেনি। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল বিপুলভাবে। তার পেছনে ছিল এই আন্দোলনের বৈধতা। যে সরকার গঠিত হলো, যে আবেদন জানানো হলো বিশ্বের কাছে, সেটি গণতন্ত্রের উই দ্যা পিপলেরই একটা প্রতিধ্বনি করল।

আলোচনা সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাদেকুল আরেফিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম, অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ড. আইয়ুবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্মসম্পাদক ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বোরহানউদ্দিনে খাল পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার অভিযানের উদ্বোধন

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ বিস্ময়ের ব্যাপার : আরেফিন সিদ্দিক

আপডেট সময় ১১:২৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ বিস্ময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেছেন, ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু গণভবনে যেভাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, ১৯৭১ সালের  ১৭ এপ্রিল একেবারে যুদ্ধরত অবস্থায় আমাদের প্রথম সরকার একইভাবে শপথ নিয়েছিলেন। অর্থাৎ সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটা একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে রোববার বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার : ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে যেকোনো সময় পাকিস্তানিবাহিনী বোমা বর্ষণ করবে, এ ধরনের খবরাখবরও ছিল। তারপরও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হলো সেই মুক্তাঞ্চলে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে উপস্থাপিত হলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করলেন। প্রথম সরকার বলে শপথে কোনো রকমের কাট-ছাট বা সংক্ষিপ্ত করা হয়নি।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২৫ মার্চ থেকে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানিরা যে আক্রমণ শুরু করল, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই ঘোষণা একমাত্র বঙ্গবন্ধুই দিতে পারেন। কারণ বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত, পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা।

তিনি আরও বলেন, সেই অবিসংবাদিত নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, সেটি বুঝা যায় ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খানের দেওয়া জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে।

সেখানে ইয়াহিয়া বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং সেজন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে তার শাস্তি হবে। ইয়াহিয়া সেদিনের বক্তব্যে ১৩-১৪ বার বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেন। সেই ভাষণে একজনের নামই উচ্চারণ করা হয়েছে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির নাম সেদিন উচ্চারণের প্রয়োজন পড়েনি। কারণ, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কর্তৃত্ব ও অধিকার একমাত্র পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই ছিল।

পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের পরাধীনতার ইতিহাস ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা থাকলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি একই সূত্রে গাঁথা।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, নানা রকম উপাদান ও নানা কিছুর সংযোজন ঘটিয়ে কী দূরদৃষ্টি, দৃঢ়তা ও শক্তিময়তা নিয়ে, জনতার শক্তির বলে বাংলাদেশ আন্দোলন সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জন করল। পৃথিবীর বড় রাষ্ট্রগুলোর সরকার সমর্থন করেনি। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল বিপুলভাবে। তার পেছনে ছিল এই আন্দোলনের বৈধতা। যে সরকার গঠিত হলো, যে আবেদন জানানো হলো বিশ্বের কাছে, সেটি গণতন্ত্রের উই দ্যা পিপলেরই একটা প্রতিধ্বনি করল।

আলোচনা সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাদেকুল আরেফিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম, অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ড. আইয়ুবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্মসম্পাদক ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।