ঢাকা ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

সুনামগঞ্জের জাহানারার ৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি ; তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

জাহানারা বেগমের (৪৬) প্রবল ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করবেন। স্কুলে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর সংসারের টানাপোড়েনে আর এগোতে পারেননি। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি-দুই জায়গাতেই অভাব ছিল। তবে জাহানারার মনে জেদ ছিল প্রবল।নিজে পারেননি কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করাবেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে নার্সারি করেছেন। তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।

জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন, পেয়েছেন জয়িতার সম্মানও। জাহানারা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ গ্রামে। স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার তাঁর। সম্প্রতি দেখা যায়, তিন একর জমির ওপর জাহানারার বাড়ি। বসত ঘরের সামনে এক চিলতে উঠোন। এর বাইরে পুরোটাই গাছগাছালিতে ভরা। আম, জাম, কাঁঠাল, কমলা, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, নারকেল, সুপারি, আতাফল, কামরাঙা, জলপাই, জাম্বুরাসহ বেশির ভাগই ফলের গাছ। বগুড়া থেকে এনেছেন বিভিন্ন জাতের আমের চারা। বিএমএফ টেলিভিশন এর বিশেষ প্রতিনিধি জাকিয়া সুলতানার একান্ত সাক্ষাৎকারে জাহানারা বলেন, স্বামীর জমি-জিরাত নেই, কৃষিকাজ করে টেনেটুনে সংসার চলে। এর মধ্যে তাদের দুই সন্তান হয়। ভাবতেন, সংসারের গরিবি দশা দূর করতে কিছু একটা করতেই হবে। ২০০৬ সালের কথা একদিন শোনেন, গ্রামের নারীরা মিলে একটি সমিতি করেছেন। তিনিও সদস্য হন। কিছুদিন পর উপজেলায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ডাক আসে। নার্সারি বিষয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নেন।

এর আগে উপজেলা তো দূরের কথা, গ্রামের বাইরে কখনো পা পড়েনি তাঁর। টাকা পয়সা নেই। বাড়িতে কিছু মরিচ ও পেঁপের বীজ ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে সেগুলো দিয়ে চার শতক জমিতে চারা করার কাজ শুরু করেন। তারপর চার হাজার টাকা ঋণ নেন। নিয়মিত চারার পরিচর্যা করেন। জাহানারা আরও বলেন, প্রথম দিন একটি ঝুড়িতে ৫০টি চারা দিয়ে স্বামী হাসান আলীকে সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে বললেন। হাসান বাজারে গেলেন এবং বাড়ি ফিরে জানালেন সব চারা মানুষ হাতে-হাতেই কিনে নিয়েছে। ছয় মাস পর ঋণ শোধ করেন। এরপর আয় থাকে আরও ১০ হাজার টাকা। এরপর আর থামতে হয়নি। কোনো ঋণও নিতে হয়নি। প্রতি বছর আয় থেকে নার্সারি বড় হয়। এখন মানুষ বাড়ি থেকে এসে চারা নিয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী মিলে নার্সারির পরিচর্চা করেন। এ ছাড়া আরও তিনজন লোক রাখেন কাজের জন্য। তাঁদের নার্সারিতে নার্সারিতে ১৫ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা দামের চারা আছে। সেই হিসাবে এখন তাঁদের নার্সারিতে ১৫ লাখ টাকার চারা আছে। এক সময় ছোট্ট শণের ঘর ছিল, এখন টিনের ঘর বানিয়েছেন। ঘরে বিদ্যুৎ এনেছেন। সবই হচ্ছে নার্সারির আয় থেকে। , ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পক্ষ থেকে জাহানারাকে অর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর পুরস্কার দেওয়া হয়।

তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। সমাজের জন্যও কাজ করছেন জাহানারা । গ্রামের ৩০ জন নারী মিলে ‘এসো কাজ করি’ নামের একটি সংগঠন করেছেন। সংগঠনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে, যৌতুক, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করেন। মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ জোগান। জাহানারা আরো বলেন, গত বন্যায় প্রায় ৯ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির চারা ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে পরে আমি বিভিন্ন দপ্তরে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছি।কিন্তু সহায়তা পাইনি। পরে ঋণ করে চারা কিনে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নার্সারির পাশাপাশি আরও একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। ৯০ শতক জমি পাঁচ মাসের জন্য ভাড়া করে সেখানে “পুস্প কানন” নামে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছি।শহর থেকে পাচ কিলোমিটার দূরে লালপুর এলাকায় রাস্তার পাশে পুস্প কানন গড়ে তুলেছি।

একই সাথে ফুলের চারা করব।তিনি বললেন, ছোট্ট ছেলে মেয়েরা বই পুস্তকে বিভিন্ন ফুলের নাম শিখে।কিন্তু বাস্তবে দেখেনি।আমার পুস্প কাননে এসে বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের নাম বাস্তবে দেখে শিখতে পারবে। জাহানারার ক্ষয় ক্ষতির বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন,বন্যায় জেলায় অনেকের ক্ষতি হয়েছে। জাহানারার নার্সারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাকে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করেছি।অন্যান্য দপ্তর থেকে জাহানারাকে সহায়তা করলে আশা করি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন,গত বন্যায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ব্যবসায়ী,ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যদি কেহ সহায়তা না পেয়ে থাকেন,সেই ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা ঋণের ব্যবস্হা করে দেব।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি

সুনামগঞ্জের জাহানারার ৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি ; তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

আপডেট সময় ০৬:২৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩

জাহানারা বেগমের (৪৬) প্রবল ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করবেন। স্কুলে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর সংসারের টানাপোড়েনে আর এগোতে পারেননি। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি-দুই জায়গাতেই অভাব ছিল। তবে জাহানারার মনে জেদ ছিল প্রবল।নিজে পারেননি কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করাবেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে নার্সারি করেছেন। তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।

জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন, পেয়েছেন জয়িতার সম্মানও। জাহানারা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ গ্রামে। স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার তাঁর। সম্প্রতি দেখা যায়, তিন একর জমির ওপর জাহানারার বাড়ি। বসত ঘরের সামনে এক চিলতে উঠোন। এর বাইরে পুরোটাই গাছগাছালিতে ভরা। আম, জাম, কাঁঠাল, কমলা, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, নারকেল, সুপারি, আতাফল, কামরাঙা, জলপাই, জাম্বুরাসহ বেশির ভাগই ফলের গাছ। বগুড়া থেকে এনেছেন বিভিন্ন জাতের আমের চারা। বিএমএফ টেলিভিশন এর বিশেষ প্রতিনিধি জাকিয়া সুলতানার একান্ত সাক্ষাৎকারে জাহানারা বলেন, স্বামীর জমি-জিরাত নেই, কৃষিকাজ করে টেনেটুনে সংসার চলে। এর মধ্যে তাদের দুই সন্তান হয়। ভাবতেন, সংসারের গরিবি দশা দূর করতে কিছু একটা করতেই হবে। ২০০৬ সালের কথা একদিন শোনেন, গ্রামের নারীরা মিলে একটি সমিতি করেছেন। তিনিও সদস্য হন। কিছুদিন পর উপজেলায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ডাক আসে। নার্সারি বিষয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নেন।

এর আগে উপজেলা তো দূরের কথা, গ্রামের বাইরে কখনো পা পড়েনি তাঁর। টাকা পয়সা নেই। বাড়িতে কিছু মরিচ ও পেঁপের বীজ ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে সেগুলো দিয়ে চার শতক জমিতে চারা করার কাজ শুরু করেন। তারপর চার হাজার টাকা ঋণ নেন। নিয়মিত চারার পরিচর্যা করেন। জাহানারা আরও বলেন, প্রথম দিন একটি ঝুড়িতে ৫০টি চারা দিয়ে স্বামী হাসান আলীকে সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে বললেন। হাসান বাজারে গেলেন এবং বাড়ি ফিরে জানালেন সব চারা মানুষ হাতে-হাতেই কিনে নিয়েছে। ছয় মাস পর ঋণ শোধ করেন। এরপর আয় থাকে আরও ১০ হাজার টাকা। এরপর আর থামতে হয়নি। কোনো ঋণও নিতে হয়নি। প্রতি বছর আয় থেকে নার্সারি বড় হয়। এখন মানুষ বাড়ি থেকে এসে চারা নিয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী মিলে নার্সারির পরিচর্চা করেন। এ ছাড়া আরও তিনজন লোক রাখেন কাজের জন্য। তাঁদের নার্সারিতে নার্সারিতে ১৫ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা দামের চারা আছে। সেই হিসাবে এখন তাঁদের নার্সারিতে ১৫ লাখ টাকার চারা আছে। এক সময় ছোট্ট শণের ঘর ছিল, এখন টিনের ঘর বানিয়েছেন। ঘরে বিদ্যুৎ এনেছেন। সবই হচ্ছে নার্সারির আয় থেকে। , ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পক্ষ থেকে জাহানারাকে অর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর পুরস্কার দেওয়া হয়।

তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। সমাজের জন্যও কাজ করছেন জাহানারা । গ্রামের ৩০ জন নারী মিলে ‘এসো কাজ করি’ নামের একটি সংগঠন করেছেন। সংগঠনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে, যৌতুক, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করেন। মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ জোগান। জাহানারা আরো বলেন, গত বন্যায় প্রায় ৯ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির চারা ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে পরে আমি বিভিন্ন দপ্তরে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছি।কিন্তু সহায়তা পাইনি। পরে ঋণ করে চারা কিনে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নার্সারির পাশাপাশি আরও একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। ৯০ শতক জমি পাঁচ মাসের জন্য ভাড়া করে সেখানে “পুস্প কানন” নামে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছি।শহর থেকে পাচ কিলোমিটার দূরে লালপুর এলাকায় রাস্তার পাশে পুস্প কানন গড়ে তুলেছি।

একই সাথে ফুলের চারা করব।তিনি বললেন, ছোট্ট ছেলে মেয়েরা বই পুস্তকে বিভিন্ন ফুলের নাম শিখে।কিন্তু বাস্তবে দেখেনি।আমার পুস্প কাননে এসে বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের নাম বাস্তবে দেখে শিখতে পারবে। জাহানারার ক্ষয় ক্ষতির বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন,বন্যায় জেলায় অনেকের ক্ষতি হয়েছে। জাহানারার নার্সারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাকে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করেছি।অন্যান্য দপ্তর থেকে জাহানারাকে সহায়তা করলে আশা করি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন,গত বন্যায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ব্যবসায়ী,ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যদি কেহ সহায়তা না পেয়ে থাকেন,সেই ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা ঋণের ব্যবস্হা করে দেব।