বাংলাদেশের শীর্ষ সারির ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল ২০ ডিসেম্বর। ‘আমরা সময়কে রাঙিয়ে তুলি’ স্লোগানে স্বপ্নময় এ উদ্যোগের সূচনা ১৯৯৪ সালে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার শান্তনা মার্কেটের ছোট্ট পরিসরে। যা বাংলাদেশের ফ্যাশন অনুরাগীদের ভালোবাসায় ছড়িয়েছে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
নব্বই দশকের শুরুতে চার বন্ধু মিলে টুকটাক কাজ করতে করতেই পরিকল্পনা শুরু হয় ‘রঙ’-এর। সে ভাবনার সোপান ধরেই ফ্যাশন হাউজটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪ সাল থেকে। বয়ে যাওয়া সময়ে চার থেকে হয়ে যায় দুই। বাকি দুজন এগিয়ে নিতে থাকে ‘রঙ’-কে। দেশের ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের ভালোবাসায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অন্যত্রও শাখা বিস্তার হয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডটির।
নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক সামগ্রীর বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজনের পাশাপাশি ২০১০ সালে রঙধনু শিরোনামে অনন্য প্রদর্শনী আয়োজন করে বিপুল সুনাম অর্জন করেছিল ‘রঙ’। সার্বিক পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়ে এক সময় ‘রঙ’ হয়েছে ‘রঙ বাংলাদেশ’। ২০১৫ সালে বিভিন্ন ছন্দপতনের বিহ্বলতা কাটিয়ে ওঠে দেশে ছড়িয়ে থাকা রঙ অনুরাগীদের সমর্থন আর পৃষ্ঠপোষণায় নতুন করে আলো ছড়ায় এ ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি। চলমানতায় আঙ্গিক পরিবর্তন সত্বেও লক্ষ্যে অবিচল থেকে প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাসের সঙ্গে এক ঝাঁক নিবেদিত কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় নতুন করে বিকশিত হয়েছে ‘রঙ বাংলাদেশ’।
অপরিসীম উৎসাহ, উদ্দীপনার সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এগিয়েছে ‘রঙ বাংলাদেশ’। সময়ের সঙ্গে আরো বড় হয়েছে এর পরিবার। ফ্যাশন অনুরাগীদের ভালোবাসায় শাখা ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশীয় ফ্যাশন শিল্পের অন্যতম এ ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে। ফলে ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর অনুরাগীরা হাতের নাগালেই পাচ্ছেন প্রিয় ব্র্যান্ডের পোশাক ও উপহারসামগ্রী।
সমান্তরালে ডিজিটাল উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে ওঠেছে এর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, নিজস্ব ই-কমার্স সাইট ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম। ফলে দেশে-বিদেশের ক্রেতারা বাড়িতে বসেই পাচ্ছেন সব সামগ্রী।
‘রঙ বাংলাদেশ’-এর সাব-ব্র্যান্ড ‘রঙ’ বাংলাদেশ বিভিন্ন বয়সের জন্য সমান সচেতন। সেজন্যই মূল ব্র্যান্ডের অধীনেই রয়েছে ৪টি পৃথক সাব-ব্র্যান্ড। জ্যেষ্ঠদের জন্য ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’, তরুণদের জন্য ‘ওয়েস্টরঙ’, ছোটদের জন্য ‘রঙ জুনিয়র’ আর বাংলাদেশকে দেশ এবং দেশের বাইরে পরিচিত করাতে রয়েছে ‘আমার বাংলাদেশ’।
এছাড়াও সব দেশীয় উৎসবে থিমভিত্তিক সামগ্রী তৈরীর অনন্য ধারণা প্রচলনে পথপ্রদর্শক এ প্রতিষ্ঠান। ‘রঙ বাংলাদেশ’ বরবারই থিম নির্ভর কাজ করে থাকে, তা যে উৎসবই হোক বা উপলক্ষ্য। ২০১৫ হতে ইতোমধ্যে হায়া সোফিয়া মসজিদ, ইন্দোনেশিয়ান বাটিক, কাঠখোদাই নকশা, বাংলার এতিহ্যবাহী গয়না, শিল্পী যামিনী রায়ের চিত্রকলা, নকশি কাঁথা, ইবান টেক্সটাইল, আফ্রিকান মাড হাউজ, ইসলামিক নকশা, শিল্পী কামরুল হাসানের চিত্রকলা, সন্দেশের ছাঁচ, জ্যামিতিক নকশা, ইসলামিক নকশা, ফ্লোরাল মোটিফ, শীতল পাটি, সাঁওতালদের দেয়ালচিত্র, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল, চাকমা সম্প্রদায়ের আলাম, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর রেখাচিত্র, মান্ডালা, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল, রাজস্থানী ডিজাইন, মোঘল আর্ট, কাতান, টাইলস, শতরঞ্জি, মধুবনী, সুজনী সেলাই, মান্ডালা, আলপনা, কলমকারী, কার্পেট, ট্রাক আর্ট, অরিয়েন্টাল রাগ, পূজার ফুল থিম নিয়ে প্রোডাক্ট লাইন তৈরী করেছে ‘রঙ বাংলাদেশ’।
২৮ বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ‘রঙ বাংলাদেশ’ সুদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে এর দুর্দান্ত টিমওয়ার্কে সৃজনশীল ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি জয় করেছে শুভানুধ্যায়ীদের আস্থা। এছাড়া ভবিষ্যতেও দেশজ উপকরণ, উজ্জ্বল রঙ আর বিষয়ভিত্তিক নকশা বিন্যাসের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পোশাকে ধরে রাখায় চেষ্টায় ত্রুটি না রেখে পণ্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পাশাপাশি টেকসই ফ্যাশন ও পুনর্ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়েই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়াসী ‘রঙ বাংলাদেশ’।