রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই আল বায়াত স্টেডিয়ামে ফরাসিরা মেতে উঠল উৎসবে। না, বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবার বিশ্ব জয় করে ফেলেনি। তবে আরেক সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে, তাদের বিশ্বকাপ-স্বপ্ন শেষ করে সেমিফাইনালে উঠে গেছেন কিলিয়ান এমবাপেরা। সেই উদযাপনটা তাই বিশ্ব জয়ের মতো হবেই!
প্রথমার্ধে ফরাসিরা খানিকটা রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলেছিল। তবে এরপরও দলটি আক্রমণ করেছে বেশ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে দিয়েছিলেন অরলিয়েঁ চুয়ামেনি। গোলটা করেছিলেন ম্যাচের ১৭ মিনিটে।
অ্যান্টোয়ান গ্রিজমানের মাইনাস করা বল তিনি পান বক্সের অনেক বাইরে। সেখান থেকেই করে বসেন এক শট। গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে ফাঁকি দিয়ে বলটা এরপর আছড়ে পড়ে ইংলিশদের জালে। সেই এক গোলই ইংলিশ আর ফ্রেঞ্চদের আলাদা করেছে এই প্রথমার্ধে।
ইংল্যান্ডও প্রথমার্ধে স্রেফ বসে ছিল না। সমতাসূচক গোলের খোঁজে হন্যে হয়ে আক্রমণে উঠেছে। তবে হ্যারি কেইনদের গোলের পথ আগলে দাঁড়িয়েছিলেন উগো লরিস। দারুণ এক ফিঙ্গারটিপ সেভে একটা বল বের করে দিয়েছেন কর্নারের বিনিময়ে, এরপর কেইনের একটা শট ফ্রেঞ্চ রক্ষণ নড়বড়ে করে দিলেও গোলটা আসেনি ইংলিশদের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেনাল্টি পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। সেটা নিতে এগিয়ে যান হ্যারি কেইন। মোজা টেনে, জার্সি ঠিক করে পেনাল্টি নেওয়ার আগের যত রেওয়াজ পালন করেন, তা করলেন; এরপর পেনাল্টি নিতে গিয়েও নিলেন না। একটু অপেক্ষা করে ফিরলেন আবার রান আপের জায়গায়। সেখান থেকে সব রেওয়াজ আবারও পালন করলেন। পেনাল্টি টেকারের মনোযোগ নড়াতে গোলরক্ষক যা করেন, তারই যেন উল্টোটা করলেন কেইন। তাতেই যেন ফরাসি গোলরক্ষক লরিস একটু মনোযোগ হারালেন, ঝাঁপালেন শটের বিপরীত দিকে। বল গিয়ে আছড়ে পড়ল ফ্রান্সের জালে। ১-১ সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড।
ম্যাচ সমতায় আসার পর ফ্রান্স খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এতক্ষণ রক্ষণাত্মক ফুটবল খেললেও এরপরই সেই চিরচেনা ফ্রান্সের দেখা মেলে। জিরু, এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানরা সপ্রতিভ হয়ে একের পর এক আক্রমণ আছড়ে ফেলতে থাকেন প্রতিপক্ষ গোলমুখে। ইংলিশরা অবশ্য রক্ষণকাজটা সারছিল ভালোভাবেই।
এমবাপ্পে ছিলেন কড়া মার্কিংয়ে। বাংলা প্রবাদ পুরনো চাল ভাতে বাড়ে সেটা প্রমাণ করে বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়েছেন জিরু। ৭৮ মিনিটে তার দারুণ এক ফিনিশিংয়ে ফ্রান্স পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোলটা।
পাঁচ মিনিট পরই ম্যাচের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। গোল পরিশোধে মরিয়া ইংলিশরা সংঘবদ্ধ আক্রমণ করে। ফ্রান্সের ডিফেন্ডার বক্সের মধ্যে ফাউল করে। রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দেননি। ইংলিশ ডাগআউট ফেটে পড়ে প্রতিবাদে। সেই ফাউল ভিএআরে পেনাল্টি হয়।
পেনাল্টি থেকেই প্রথম সমতা এনেছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন। দ্বিতীয় পেনাল্টি তিনিই নেন। এবার ব্যর্থ হন ইংলিশ অধিনায়ক। অনেক উপর দিয়ে শট নেন। আল বায়াত স্টেডিয়ামে তখন ইংলিশ দর্শকরা স্তব্ধই হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের সে ফাঁকা জায়গাটা নিয়েছিল ফরাসিদের গলার স্বর।
দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেলায় ফাউলও হয়েছে অনেক। রেফারিকে বাঁশি ও কার্ডের ব্যবহার করতে হয়েছে অনেক। ফ্রান্স এই ম্যাচে ফাউল করে ইংল্যান্ড দুই পেনাল্টি ও ফ্রি কিক দিয়েছে বেশ কয়েকটি। দ্বিতীয়ার্ধে ইনজুরি সময় ছিল ৮ মিনিট। গতকাল নেদারল্যান্ডস ইনজুরি সময় ফ্রি কিকে ম্যাচে সমতা আনলেও ইংল্যান্ড আজ পারেনি। গত আসরে সাউথগেটের দল সেমিফাইনালে খেললেও এবার এক ধাপ আগেই বাদ। আর গেল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স চলে যায় বিশ্বকাপ ধরে রাখার স্বপ্নটার আরও এক ধাপ কাছে।