‘ঐতিহাসিক দুই দলের অসাধারণ একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। দুঃখজনক হচ্ছে, একটা দলকে বাদ পড়তে হবে। আশা করছি, পরের রাউন্ডে যাব আমরা’- কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের পর বলেছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচ মাঠে গড়াবে আগামীকাল।
একই দিন ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ গতবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপের দুর্দান্ত দুই দলের সঙ্গে লড়াই লাতিনের ঐতিহ্যবাহী দুই দলের। ইউরোপীয়দের ফুটবল সব সময় যান্ত্রিক। শক্তি, ট্যাকটিকস আর টেকনিক্যাল ফুটবল খেলে তারা। লাতিনদের ফুটবলে থাকে শিল্পের সৌরভ। সৃষ্টিশীলতা আর মনের আনন্দে খেলাই মূলমন্ত্র। যান্ত্রিক ইউরোপের সঙ্গে আগামীকালের লড়াইটা জিতলে ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর আরো একবার ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। মঞ্চটা কাজে লাগাতে পারবেন তো মেসি-নেইমাররা?
নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ শিরোপা জেতেনি কখনো। ইয়োহান ক্রুইফ আর রেনাশ মিশেলের হাত ধরে ‘টোটাল ফুটবল’ নামে হৃদয়কাড়া এক দর্শনের জন্ম দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। কমলাঝড় তুলে ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ডাচরা। শিরোপাটা অবশ্য অধরা এখনো। এদিকে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে তৈরি ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপেই চমকে দেয় সেমিফাইনালে পৌঁছে। সেবার ডেভন সুকাররা হন তৃতীয়। গতবার লুকা মডরিচ-ইভান রাকিতিচরা সেই সাফল্য ছাড়িয়ে পৌঁছে যান ফাইনালে। ফ্রান্সের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি ক্রোয়াটরা।
ব্রাজিল এবারের বিশ্বকাপে ফিরিয়ে এনেছে বিখ্যাত ‘জোগো বোনিতো’র সৌরভ। মন-মাতানো এমন ফুটবল খেলে তারা শিরোপা জিতেছে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে। এরপর ২০ বছর আর ফাইনালেই পৌঁছতে পারেনি। ২০১৪ সালে নিজেদের মাটিতে তারা সেমিফাইনালে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় জার্মানির কাছে। ধাক্কাটা কাটিয়ে গত আসরের মতো এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে তিতের দল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নামার আগে দানি আলভেস জানালেন, ‘আমাদের ১১০ শতাংশ মনোযোগ পাওয়ার মতো দল ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বমানের অনেক ফুটবলার আছে ওদের। ’
ব্রাজিল শেষ ষোলোর ম্যাচে বিরতির আগে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েছিল ৪-০ গোলে। এরপর একের পর এক মিসে কোরিয়ানদের গোলে ভাসাতে পারেননি নেইমার, রিচার্লিসনরা। পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান সোফাস্কোর জানাচ্ছে, এই বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১২টি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে ব্রাজিল। জার্মানি ১১টি, আর্জেন্টিনা ১০টি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া নষ্ট করেছে সমান সাতটি করে সুযোগ।
লুকা মডরিচ, ইভান পেরিসিচরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেই এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ ষোলোয় জাপান অবশ্য বড় পরীক্ষা নিয়েছে তাদের। ১-১ সমতার পর তারা জিতেছে টাইব্রেকার লটারিতে। তবে ম্যাচের সময় পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে খেলাটা হয়তো টাইব্রেকারেই গড়াত না।
লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ এটা। সেটা রাঙিয়েও চলেছেন এই কিংবদন্তি। জাদুকরী গোল করে আর করিয়ে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার নায়ক তিনি। এখন তাঁর মহানায়ক হওয়ার পালা। ১৯৮৬ সালের পর আর্জেন্টিনা আরেকটি বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছে মেসির অলৌকিক পায়ে। আলভারেস, ফের্নান্দেসের মতো তরুণরা সেই স্বপ্নের পালে লাগিয়েছেন নতুন হাওয়া। তবে নেদারল্যান্ডস হেলাফেলার দল নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে দারুণ ট্যাকটিকাল ফুটবলে জিতেছে ৩-১ গোলে। এটাই ভয় আর্জেন্টিনার।
বিশ্বকাপে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। ১৯৭৪-এ নেদারল্যান্ডস জেতে ৪-০ গোলে, ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয় ৩-১ গোলে, ১৯৯৮-এ আবারও ডাচরা জেতে ২-১ ব্যবধানে। ২০০৬ সালে গোলশূন্য ড্রর পর সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে শেষ হাসি আর্জেন্টিনার। আগামীকাল হাসবে কে?