সব সন্দেহ আর সংশয় দূরে ঠেলে সাত বছর আগে পারা গিয়েছিল? এত দিন পর আবার সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে বাংলাদেশ? প্রথম ম্যাচের অবিশ্বাস্য জয়ের মহিমা এমনই যে আজ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ২০১৫ আর ২০২২ সালকে এনে যেন গাঁথতে চাইছে একই মালায়। লিটন কুমার দাসদের সামনে যে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের হাতছানি। আজ জিতলেই সেটি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এই ম্যাচের গায়েও লেগে যায় সিরিজ নির্ধারণীর তকমা।
ভরসা দিতে আছে ২০১৫ সালের সেই সিরিজও। সেবার জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করা দল পরের ম্যাচে প্রবল পরাক্রমশালী ভারতের তোপে পোড়ে কি না, সেই সংশয়ও কম ছিল না। কিন্তু তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবে নতুন মুস্তাফিজুর রহমান রহস্যের কূল-কিনারা করতে না পেরে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল সিরিজই হেরে বসে। প্রথম ওয়ানডেতে ৫০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া ‘কাটার মাস্টার’ পরের ম্যাচে হয়ে ওঠেন আরো কার্যকর, ৪৩ রানে ৬ শিকার ধরে পুরো দেশকে ভাসান ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের প্রথমানন্দে।
এত দিন পর মিরপুরের সেই ধীরগতির অসমান বাউন্সের উইকেটে প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ বোলিং করেও মুস্তাফিজ উইকেট পাননি তো কী! প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তির দিনে আরেক পেসার এবাদত হোসেনও তাঁকে যোগ্য সংগত দিয়েছেন ৪ শিকার ধরে। তা ছাড়া প্রথম ম্যাচ জিতে পরের ম্যাচেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে যখন, তখন স্বাগতিকরা আরো আশাবাদী হতেই পারে। এমনকি দ্বিতীয় ম্যাচ হেরেও সিরিজ জেতার ঘটনা আছে এই বছরই। গত মার্চে সেঞ্চুরিয়নে হেরে সিরিজ শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা জোহানেসবার্গে পরের ম্যাচেই সমতা ফেরায়। তবে সেঞ্চুরিয়নে শেষ ম্যাচে আবার তাদের হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবার সিরিজ জয়ের হাসি হাসে বাংলাদেশ। অবশ্য লিটনদের অনুপ্রেরণার জোগান দিতে আরো কিছু তথ্য-উপাত্তও আছে। ২০১৩ সালের মে মাসের পর আর কখনোই প্রথম ম্যাচ জেতার পর সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ।
তবে প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন এসব পরিসংখ্যানে খুব ভেসে যাওয়ারও উপায় নেই। কারণ রোহিত শর্মাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পরিসংখ্যানও কম ভারী নয়। প্রথম ম্যাচ হেরেও তাঁদের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জেতার ঘটনা আটবার। সম্প্রতি দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম ম্যাচ হেরেও শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিতেছে তাঁরাই। তাই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ভারতের সামনে আজ বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করে থাকার কথা।
প্রতিপক্ষের কথা বাদ দিন, প্রথম ওয়ানডের পারফরম্যান্স থেকে নিজেরাও কি সেই চ্যালেঞ্জ অনুভব করছে না বাংলাদেশ শিবির? অবশ্যই করছে। না হলে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কেন বলবেন, ‘এই সংস্করণে আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। দেশের মাঠে আমাদের রেকর্ডও বেশ ভালো। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা এক দলের বিপক্ষে খেলার রোমাঞ্চ তো আছেই। ওদের বিপক্ষে আমরা নিজেদের বাজিয়েও দেখছি। এটিও জানি যে ভারতও প্রবলভাবে ফিরে আসতে চাইবে। সে জন্য আমাদের অবশ্যই প্রথম ম্যাচের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। (একই রকম খেললে) আবার পার পাওয়া যাবে না। ’
না পাওয়ারই কথা। ৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে সহজ জয়ের তীর থেকে বহুদূরে ছিটকে পড়ার পরও জেতা গেছে শেষ উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমানের বীরত্বে। কিন্তু এ রকম ঘটনা নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত ঘটে না। তাই দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে বাংলাদেশের সতর্কতা।