বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার বা পুলিশের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন বিএনপির সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে। সোহওরাওয়ার্দী উদ্যান চারদিক থেকে ঘেরা, একটা খাঁচার মতো। নেতাকর্মীরা সেখানে নিরাপদ মনে করছেন না। নয়াপল্টনকেই তারা নিরাপদ মনে করছেন।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার মর্জিমাফিক আর কিছুই হবে না। বিরোধী আন্দোলনের ঝড়ো হাওয়া তিনি আর স্থির করতে পারবেন না। নতুন নতুন প্রহসন ও নাটক করে শেষ রক্ষা হবে না।
তিনি বলেন, আজ রাজশাহী মহানগরে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রচন্ড রকম বাড়াবাড়ি করেছে। তিনদিন আগে থেকেই জনগণ সমাবেশের মূল মাঠে আসার জন্য চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের ঢুকতে দেয়নি ও প্রচন্ড রকমের হয়রানি করেছে। প্রশাসন ও সরকারি দলের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পর গতকাল (শুক্রবার) থেকে বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় তিন চাকার পরিবহনও। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন- ‘দাবি-টাবি কিছুই না, বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করতেই গরিবের পেটে লাথি মারা।’ এর মধ্যেও কিছু কিছু সিএনজিচালক ও অটোরিকশাচালক তাদের গাড়ি নিয়ে বের হলে তাদের প্রচন্ড রকম হয়রানি ও মারধর করেছে পুলিশ।
‘সব বাধা, হামলা-মামলা ভেদ করে রাজশাহীর সমাবেশে যোগ দিয়েছে লাখ লাখ জনতা। রাজশাহী জনসমাগমে পূর্ণ। এক তারা গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত সমাবেশ মাঠে ঢুকতে না পারলেও পাশের ঈদগাহ মাঠ, পাশের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে চাল-ডাল-মুড়ি-চিড়া-গুড় সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছে সমাবেশ ময়দানে। খিচুড়ি রান্না করে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে দেখা গেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এ এক বিস্ময়কর অভূতপূর্ব দৃশ্য, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। গতকাল গোটা রাজশাহী ছিল মিছিলের নগরী। আজ রাজশাহীর ভোর ছিল জনমানুষের কোলাহলে এক অন্য ভোর। রাজশাহীর মানুষ কতটা অতিথিপরায়ণ তা তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আশপাশের জেলাগুলো থেকে ট্রেনে-মোটরসাইকেল ও ট্রলারে করে দলে দলে মিছিলসহ যোগ দেয় সমাবেশে। সমাবেশে আসার পথে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নাটোরে জনতার ওপর সহিংস আক্রমণ করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর। বিভিন্ন স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ সড়ক আটকিয়ে দিলেও জনতার স্রোত রোধ করা যায়নি। বিএনপির চলমান এই ধারাবাহিক সমাবেশগুলো মানুষের উপচেপড়া ভিড় প্রমাণ করে জনগণ সরকারকে আর এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, অর্থনৈতিক ধাক্কা ও দুঃশাসনের কষাঘাতে ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বেসামাল হয়ে গেছে। সরকারবিরোধী হাওয়া প্রবল আকার নিচ্ছে। তাই ছলে-বলে কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশজুড়ে পুলিশ-র্যাবকে দিয়ে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘কো-অপারেটিভ ফ্যাসিজম’ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। এক ধরনের দুর্ভাবনা থেকেই স্বাধীন কণ্ঠস্বর নিবৃত্ত করতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা ও গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। পথে-ঘাটে চলছে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের মিলিত অপমান, অত্যাচার এবং সহিংস পৈশাচিকতা।
তিনি আরও বলেন, মিথ্যা ককটেল বিস্ফোরণ মামলা, কবর থেকে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে হাস্যকর মামলা দায়ের, অক্ষত গাড়ি ভাঙচুরের মামলা দায়ের, ছাত্রলীগ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা মিছিল করে নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের, কোনো ঘটনা না ঘটলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের বাদী করে মিথ্যা ককটেল বিস্ফোরণের মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটছে সমানতালে।
সংবাদ সম্মেলনে গত তিন দিনে ৭৭৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান রিজভী আহমেদ।