আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীর সেরা ও স বথেকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।’ (সুরা তীন : আয়াত-৪)
সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে উন্নত রুচিবোধ, ব্যক্তিত্ব মানুষকে সবার মাঝে সেরা করে তোলে। তাই তো সৃষ্টির সেরা হয়েও সুন্দরের প্রতি মানুষের আগ্রহ আজন্ম। নিজেকে শালীন, পরিপাটি, সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন যেকোনও রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি। দেহ-মন ফুরফুরে রাখতে সুগন্ধি-আতর ব্যবহার করে থাকেন। সুগন্ধির ব্যবহার অনেকটা মানুষের আভিজাত্যকেও ফুটিয়ে তোলে।
সাধারণত বিশেষ অনুষ্ঠান-আয়োজনকে উপলক্ষ করেই বেশিরভাগ সুগন্ধি-আতর ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে দৈনন্দিন চলাফেরাতেও সুগন্ধি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
অনেকে একে নিছক সৌন্দর্য ও দৈনিক পরিপাটি, সাজগোজের উপলক্ষ হিসেবেই ধরে থাকেন, তবে এক্ষেত্রে ইসলামী বিধানের কথা খেয়াল করলেই তা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সুগন্ধি ব্যবহার করতেন এবং পছন্দ করতেন। এক হাদিসে সুগন্ধি ব্যবহারকে আল্লাহর রাসুল সব নবীদের সুন্নত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত-আতর, বিয়ে, মিসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৪৭৮)।
পৃথিবীতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় বস্তুগুলোর একটি সুগন্ধি। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। নারী, সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজের মাধ্যমে’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৩৯)।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি তা গ্রহণ করতেন, ফিরিয়ে দিতেন না।
একাধারে ১০ বছর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছেন বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুরভির চেয়ে হৃদয়কাড়া কোনো ঘ্রাণ (অন্য কোথাও) কখনো গ্রহণ করিনি।’ -(মুসলিম)
আরেক হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমার দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।’-(মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৮৪৬)
আল্লাহর রাসুল আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, তার স্ত্রীর সুগন্ধি (আতর) থাকলে তা ব্যবহার করে, উত্তম লেবাস পরিধান করে, অতঃপর (মসজিদে এসে) লোকেদের কাতার চিরে (আগে অতিক্রম) করে না এবং ইমামের উপদেশ দানকালে কোন বাজে কর্ম করে না, সে ব্যক্তির জন্য তা উভয় জুমার মধ্যবর্তী কৃত পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কর্ম করে এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করে সে ব্যক্তির জুমাহ যোহরে পরিণত হয়ে যায়।’-(আবু দাউদ, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ তারগীব ৭২০)
সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের কয়েকটি নির্দেশনা অবশ্যই মনে রাখতে। যেমন তাদের মতে, যেসব পারফিউমে অ্যালকোহল আছে অথবা শরিয়ত সমর্থন করে না এমন বস্তু দ্বারা তৈরি পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না। ইসলামে অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি বডি স্প্রে ব্যবহারের জন্য বারণ করা হয়েছে।
নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম’ (বুখারি : ৪৩৪৩)। যেসব সেন্ট বা বডি স্প্রে শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না সেগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই (জাদিদ ফিকহি মাসাইল : ১/৩৮, আলমুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৪৮)।