চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুনর্বাসন করেছে। শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, রাজাকার আবদুল হালিমকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দায় মুক্তি দিয়ে বিদেশি দূতাবাসে বড় বড় পদে বসিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একই পথে হেঁটেছে এরশাদ ও খালেদা জিয়া। এরা স্বপ্ন দেখেছিলেন এদেশ আবার পাকিস্তান হবে। এরা দেশপ্রেম বিবর্জিত ঘৃণ্য অপশক্তি, বিষধর সাপ, যখন-তখন ফণা তুলে ছোবল দিতে পারে। তাই আগে-ভাগে এদের বিনাশ করতে হবে। এই কাজটিই দেশপ্রেমিক শক্তিকে করতেই হবে। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যৌক্তিক আন্দোলন রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। অযৌক্তিক ইস্যুতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা ও নাশকতা এবং জান-মালের ক্ষতি করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হলে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। অতীতে বিএনপি-জামায়াত অগ্নি সন্ত্রাস চালিয়েছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। তারা যদি আবার একই পথ বেছে নেয় আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আঘাত হানবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালি জাতিসত্তা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ভাষা ও স্বাধীন রাষ্ট্র চিন্তার বিকাশের ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাই বাঙালি, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন। এই সত্যটি যারা অস্বীকার করে তারা পরজীবী পরগাছা। বাংলার উর্বর মাটিতে এই পরগাছারাই সব অপকর্ম, হত্যা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের মূল হোতা। এদের সমূলে উৎখাত করা না হলে সময় থাকতে সাধন হবে না।
তিনি দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনের উদ্দেশে বলেন, এসব সংগঠন ও কথিত সুশীল সমাজ কথায় কথায় বাংলাদেশে মানবাধিকার গেল বলে মায়াকান্না করেন। তারা কী জানেন না, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তাণ্ডব ও বর্বরতার কথা? সংখ্যালঘু, আওয়ামী লীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কী অবস্থা করেছিল তারা? ঘরবাড়ি জ্বালানো, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সন্ত্রাসের জাহান্নামে মানবাধিকার ও মানবতা বলতে কিছুই ছিল না। বরিশাল ও ভোলা থেকে ২৫ হাজার মানুষ টুঙ্গিপাড়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ঢাকায় আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ভিটে-মাটি হারা আর্তমানুষের জন্য লঙ্গরখানা খোলা হয়েছিল। তখন মানবাধিকার সংগঠন ও কথিত সুশীল সমাজ মুখে কলুপ এঁটে বসে ছিলেন কেন?
তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আবার যেন ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন তাকে বিজয়ী করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা এবং সবার ঈমানী দায়িত্ব।
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিএনপি ঢালাওভাবে মিথ্যাচার করে চলেছে, এমনকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন হবে সাংবিধানিক উপায়ে সেভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা চাইবো সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হউক। কিন্তু কাউকে জোর করে নির্বাচনে টেনে আনা সম্ভব নয়। কেউ আসুক না আসুক বড় কথা নয়, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। ইউক্রেন-রুশ যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে তাতে সারা বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষরা কষ্ট পাচ্ছে। তবে এই সংকট সাময়িক। মানুষের এই দুঃখ কষ্ট লাঘবে আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং প্রত্যেকের সঙ্গে সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে হবে। এভাবেই দলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ানো সম্ভব।
চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল হক রঞ্জুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বাচ্চু, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, জোবাইরা নার্গিস খান, শহীদুল আলম, জাফর আলম চৌধুরী, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দীন আহমেদ।