শীতকালে ঠাণ্ডা আর পানি থেকে দূরে পালিয়ে বাঁচতে চায় মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া পানির কাছাকাছিও আসতে চায় না। গরম কাপড় জরিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে সবাই। যেখানে গ্রীষ্মকালে নিজেকে তৃপ্ত করতে বরফে ঢেলে, ফ্রিজে রেখে পানি পান করা হয়, শীতের মৌসুমে দেখা যায় উল্টো চিত্র। হিটারে গরম করে পান করা হয় পানি। মূলত শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে বেঁচে থাকার প্রবণতা মানুষের স্বভাবজাত।
কিন্তু এরপরও বিশেষ প্রয়োজনে শীতকালেও পানি-ঠাণ্ডার মুখোমুখি হতেই হয়। অন্য আর সব প্রয়োজনের কথা বাদ দিলেও পাঁচবার নামাজের জন্য অজু করতেই হয়। অজু ছাড়া তো পবিত্রতা অর্জন সম্ভব নয়। অজুর সময় চেহারা, দুই হাত, মাথা, দুই পা-য়ে পানি স্পর্শ করাতেই হয়। তবে মানুষের সহজতার বিষয়টির প্রতি খেয়াল রেখে এমন পরিস্থিতিতে ইসলামে অজুর সময় পায়ের মোজার ওপর মাসেহের বিধান দেওয়া হয়েছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও মোজার ওপর মাসাহ করেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সবধরনের মোজার ওপর মাসেহ করা যাবে না। তাই মোজা মাসেহের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধানগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
মোজা মাসেহের জন্য মুসাফির ও মুকিমের জন্য আলাদা আলাদা বিধান রয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ -(আবু দাউদ, ১৩৫)
মুসাফির ব্যক্তি অজু করে মোজা পরিধানের পর থেকে পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত এবং মুকিম ব্যক্তি পরবর্তী একদিন পর্যন্ত যতবার অজু করতে ততবার পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করতে পারবে। মোজার ওপর তিন আঙুল পরিমাণ মাসাহ করে নিলেই চলবে। -(রাদ্দুল মুহতার : ১/২৬০)
তবে সব মোজার ওপরই মাসাহ করা যায় না। (যেমন- সুতা ও নায়লনের মোজার ওপর মাসেহ করলে হবে না।) বরং মোজার ওপর মাসেহ করার জন্য মোজাটি টাখনু পর্যন্ত ঢেকে ফেলে এমন অথবা চামড়ার মোজার গুণে উত্তীর্ণ হতে হবে।
মোজার ওপর মাসেহ সহি হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো-
১. পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯)
২. মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)
৩. মোজা ফাটাছেঁড়া হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটাছেঁড়া থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০, আল-আশবাহ ১/১১৪, আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)
৪. উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।
৫. তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)
৬. মোজা এমন মোটা হতে হবে যেন উপরে পানি পড়লে ভেতরে না পৌঁছায়।
৭. সংকীর্ণতা বা রাবার অথবা সুতা ইত্যাদি দিয়ে বাঁধা ছাড়াও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে পায়ের সঙ্গে লেগে থাকে।
৮. শুধু ওই মোজা পরিধান করেই দুই-তিন মাইল হাঁটা যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১/১৮৮; ফাতহুল ক্বদির : ১/১০৯)