ঢাকা ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
হাসিনার শাসনামল ছিল ইতিহাসের কলঙ্ক: যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বোরহানউদ্দিন বিএনপির কেউ চাঁদাবাজি করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্হা নেয়া হবে: মাফরুজা সুলতানা পাঁচবিবির ইউএনও জেলা প্রশাসককে গাছের চারা উপহার মঠবাড়িয়ায় মুদি মনোহরী দোকান থেকে নগদ টাকা সহ মালামাল চুরির অভিযোগ রাজবাড়ী সদরের আলীপুরে একই সময় দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার জান্নাতুলের, এলাকায় চাঞ্চল্য শেখ হাসিনার পতন ও বিতর্কিত ঠিকাদার শাহ আলমের সখ্যতার নতুন খেলা” গুলশানে বেদখল হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি, জানা গেল বাড়িগুলোর নাম-ঠিকানা প্রয়োজন ছাড়া প্রকল্প তৈরি নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ কোটি টাকা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্মকর্তারা। ইলিয়াস কাঞ্চন এবং যুব ও ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এর মত বিনিময় অনুষ্ঠিত সার্ক ‘আইকন অব সার্জারি’ সম্মাননা পেলেন অধ্যাপক ডা. মওদুদ

জায়গা দান করা ব্যক্তির নামে মসজিদের নামকরণ করা যাবে?

মসজিদ হলো মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র। এ কারণে রাসুল (সা.) হিজরতের প্রথম দিনই মসজিদ নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে তিনি কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে তিনি মসজিদ-ই-নববী স্থাপন করেন। এবং সেখান থেকেই ইসলামের জ্যোতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন।

মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)

তাছাড়া মসজিদ নির্মাণ এমন একটি পুণ্যময় কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। যত দিন সেই মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হবে, তত দিন নির্মাণকারী এর সওয়াব পেতে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত ধরনের আমলের প্রতিদান মৃত্যুর পর কবরেও জারি থাকে । ১. যে ব্যক্তি কাউকে দ্বিনি ইলম শিক্ষা দেবে। ২. যে নদী প্রবাহিত করতে সহযোগিতা করবে। ৩. অথবা কূপ খনন করবে। ৪. অথবা গাছ রোপণ করবে। ৫. অথবা মসজিদ নির্মাণ করবে। ৬. অথবা কোরআন বিতরণ করবে। ৭. অথবা সুসন্তান রেখে যাবে যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করবে। (আল বাহরুজ জাখখার : ১৩/৪৮৪)

পরকালের কথা মাথায় রেখে অনেকেই নিজের জমি দান করে মসজিদ নির্মাণ করেন। সমাজে বেশিভাগ ক্ষেত্রে মসজিদগুলোর নাম রাখা হয় বিভিন্ন সাহাবি বা ইসলামি রীতিতে প্রচলিত নাম অনুসারে। যেমন, মসজিদে আবু বকর, বাইতুল মামুর মসজিদ। মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে এমন নামগুলোই সমাজে প্রচলিত।

‘আমাদের এলাকায় একটি মসজিদ আছে। মসজিদের জন্য যিনি জমি দান করেছেন, তার নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। এখন কিছু মানুষ বলছে এটা আল্লাহ তায়ালার ঘর। আর আল্লাহর ঘর দুনিয়ার কোনো মানুষের নামে রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তাহলে ওই মসজিদে নামাজ সহিহ হবে না। এ নিয়ে মসজিদে ও এলাকায় খুব বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, মসজিদ মানুষের নামে নামকরণ করা জায়েজ আছে কি না?

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো- সাহাবি, তাবেয়ি বা কোনো আল্লাহর অলির নামে মসজিদের নামকরণ করা জায়েজ। যেমন-মসজিদে আবু বকর (রা.), মসজিদে বেলাল (রা.) ইত্যাদি। তবে মসজিদের জায়গা বা মসজিদে অর্থ দান করে দাতার নামে মসজিদের নামকরণ করা উচিত নয়। কারণ এতে ইখলাস ও আন্তরিকতা নষ্ট হওয়া ও রিয়া তথা লোক দেখানোর আশঙ্কা থাকে। আর যদি এমনটি লোক-দেখানো বা রিয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে, তবে তো কাজটি সম্পূর্ণ নাজায়েজ হবে এবং দানের সওয়াবও নষ্ট হয়ে যাবে।

হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য এবং মানুষের নিকট প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য কোনো আমল করে— আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা মানুষকে শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে, আল্লাহ তাআলা তাকে রিয়াকারীর শাস্তি দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ২/৯৬২; মুসলিম, হাদিস : ২/৪১২; তিরমিজি, হাদিস : ২/৬১; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২/৩১০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৩/৪০; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৫/৩৩০)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের উপর যে জিনিসটিকে বেশি ভয় করি, তা হলো- ছোট শিরক। সাহাবিরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শিরক কী? তিনি উত্তর দিলেন, রিয়া। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেবেন, তখন রিয়াকারীকে বলবেন- যাও দুনিয়াতে যাদের তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে— দেখ তাদের নিকট কোনো সাওয়াব পাও কিনা?’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৬৮১)

তবে আলেমদের মতে, কেউ যদি জমিদান করার পর নিজের নামে মসজিদের নাম রাখে তাহলেও তা মসজিদ বলেই গণ্য হবে এবং সেখানে নামাজসহ সব ধরনের ইবাদাত-বন্দেগি করা যাবে। -(বুখারি, হাদিস : ৪২০; ফাতহুল বারী : ১/৬১৪; উমদাতুল কারী : ৪/১৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪২৫)

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

হাসিনার শাসনামল ছিল ইতিহাসের কলঙ্ক: যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না

জায়গা দান করা ব্যক্তির নামে মসজিদের নামকরণ করা যাবে?

আপডেট সময় ১০:১১:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২

মসজিদ হলো মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র। এ কারণে রাসুল (সা.) হিজরতের প্রথম দিনই মসজিদ নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে তিনি কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে তিনি মসজিদ-ই-নববী স্থাপন করেন। এবং সেখান থেকেই ইসলামের জ্যোতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন।

মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)

তাছাড়া মসজিদ নির্মাণ এমন একটি পুণ্যময় কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। যত দিন সেই মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হবে, তত দিন নির্মাণকারী এর সওয়াব পেতে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত ধরনের আমলের প্রতিদান মৃত্যুর পর কবরেও জারি থাকে । ১. যে ব্যক্তি কাউকে দ্বিনি ইলম শিক্ষা দেবে। ২. যে নদী প্রবাহিত করতে সহযোগিতা করবে। ৩. অথবা কূপ খনন করবে। ৪. অথবা গাছ রোপণ করবে। ৫. অথবা মসজিদ নির্মাণ করবে। ৬. অথবা কোরআন বিতরণ করবে। ৭. অথবা সুসন্তান রেখে যাবে যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করবে। (আল বাহরুজ জাখখার : ১৩/৪৮৪)

পরকালের কথা মাথায় রেখে অনেকেই নিজের জমি দান করে মসজিদ নির্মাণ করেন। সমাজে বেশিভাগ ক্ষেত্রে মসজিদগুলোর নাম রাখা হয় বিভিন্ন সাহাবি বা ইসলামি রীতিতে প্রচলিত নাম অনুসারে। যেমন, মসজিদে আবু বকর, বাইতুল মামুর মসজিদ। মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে এমন নামগুলোই সমাজে প্রচলিত।

‘আমাদের এলাকায় একটি মসজিদ আছে। মসজিদের জন্য যিনি জমি দান করেছেন, তার নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। এখন কিছু মানুষ বলছে এটা আল্লাহ তায়ালার ঘর। আর আল্লাহর ঘর দুনিয়ার কোনো মানুষের নামে রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তাহলে ওই মসজিদে নামাজ সহিহ হবে না। এ নিয়ে মসজিদে ও এলাকায় খুব বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, মসজিদ মানুষের নামে নামকরণ করা জায়েজ আছে কি না?

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো- সাহাবি, তাবেয়ি বা কোনো আল্লাহর অলির নামে মসজিদের নামকরণ করা জায়েজ। যেমন-মসজিদে আবু বকর (রা.), মসজিদে বেলাল (রা.) ইত্যাদি। তবে মসজিদের জায়গা বা মসজিদে অর্থ দান করে দাতার নামে মসজিদের নামকরণ করা উচিত নয়। কারণ এতে ইখলাস ও আন্তরিকতা নষ্ট হওয়া ও রিয়া তথা লোক দেখানোর আশঙ্কা থাকে। আর যদি এমনটি লোক-দেখানো বা রিয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে, তবে তো কাজটি সম্পূর্ণ নাজায়েজ হবে এবং দানের সওয়াবও নষ্ট হয়ে যাবে।

হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য এবং মানুষের নিকট প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য কোনো আমল করে— আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা মানুষকে শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে, আল্লাহ তাআলা তাকে রিয়াকারীর শাস্তি দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ২/৯৬২; মুসলিম, হাদিস : ২/৪১২; তিরমিজি, হাদিস : ২/৬১; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২/৩১০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৩/৪০; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৫/৩৩০)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের উপর যে জিনিসটিকে বেশি ভয় করি, তা হলো- ছোট শিরক। সাহাবিরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শিরক কী? তিনি উত্তর দিলেন, রিয়া। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেবেন, তখন রিয়াকারীকে বলবেন- যাও দুনিয়াতে যাদের তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে— দেখ তাদের নিকট কোনো সাওয়াব পাও কিনা?’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৬৮১)

তবে আলেমদের মতে, কেউ যদি জমিদান করার পর নিজের নামে মসজিদের নাম রাখে তাহলেও তা মসজিদ বলেই গণ্য হবে এবং সেখানে নামাজসহ সব ধরনের ইবাদাত-বন্দেগি করা যাবে। -(বুখারি, হাদিস : ৪২০; ফাতহুল বারী : ১/৬১৪; উমদাতুল কারী : ৪/১৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪২৫)