ঢাকা ১১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
স্কুলে না গিয়েও বেতন তোলেন প্রধান শিক্ষক আ.লীগ নেতা বিনা টিকিটের যাত্রীদের থেকে অর্থ আদায়, বরখাস্ত ২ অ্যাটেনডেন্ট পদ্মা উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ফ্রী মেলায় স্থান পেলো ৫০ জন উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগ নেতাদের জামিন করানোয় ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার পাঁচ বছরে ৫ কোটি গাছ লাগাতে চান তারেক রহমান ইমরান-বুশরার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা রাজধানী উত্তরা, উলুদাহ, বাদালদির আতঙ্কের নাম এনএসআই নাজমুল করিম কুমিল্লায় আমীরে জামায়াতকে স্বাগত জানিয়ে মহানগরী জামায়াতের মিছিল নরসিংদীতে ব্র্যাকের “বিদেশ-ফেরত নিরাপদ অভিবাসীদের পুনরেকত্রীকরণ”শীর্ষক ইউনিয়ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত। বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য বানানোর স্বপ্ন দেখেছিল ভারত- কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইয়াছিন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে সর্বোচ্চ আদালতে বিএনপি

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া রায় বাতিল চেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন। ২০১১ সালে সুপ্রিমকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের ১০ জুন তৎকালীন আপিল বিভাগ ০৪: ০৩ কণ্ঠ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। ফলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক সরকারের অধীন নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির কাঁধে ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসে।’

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিমকোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়। বিএনপি সরকার জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথাক্রমে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ২০১১ সালের ১০ জুন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করেন। সংক্ষিপ্ত আদেশের ভিত্তিতে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তৎকালীন সংসদ তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ পরিবর্তন করা হয়, যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।’

বিএনপি মহাসচিবের ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেওয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করে বিচার বিভাগীয় প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ফৌজদারি মামলা চলমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যমজ সন্তানের মতো, একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না।সুপ্রিমকোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা, যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।’

সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, আইনজীবী শিশির মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য বিশেষভাবে আইনজীবী শিশির মনিরকে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলে না গিয়েও বেতন তোলেন প্রধান শিক্ষক আ.লীগ নেতা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে সর্বোচ্চ আদালতে বিএনপি

আপডেট সময় ০৫:১৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া রায় বাতিল চেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন। ২০১১ সালে সুপ্রিমকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের ১০ জুন তৎকালীন আপিল বিভাগ ০৪: ০৩ কণ্ঠ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। ফলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক সরকারের অধীন নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির কাঁধে ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসে।’

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিমকোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়। বিএনপি সরকার জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথাক্রমে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ২০১১ সালের ১০ জুন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করেন। সংক্ষিপ্ত আদেশের ভিত্তিতে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তৎকালীন সংসদ তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ পরিবর্তন করা হয়, যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।’

বিএনপি মহাসচিবের ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেওয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করে বিচার বিভাগীয় প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ফৌজদারি মামলা চলমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যমজ সন্তানের মতো, একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না।সুপ্রিমকোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা, যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।’

সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, আইনজীবী শিশির মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য বিশেষভাবে আইনজীবী শিশির মনিরকে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি।