ঋতুরাজ শরৎকে বিদায় জানিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। দিনের শুরুতেই দেখা মিলছে সবুজ প্রকৃতির মাঝে হেমন্তের শিশির বিন্দু। আর এই শিশির বিন্দুই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সারাদিন রোদের রাজত্ব শেষে সন্ধ্যা নামতেই বদলে যাচ্ছে তাপমাত্রা।ঋতু বৈচিত্রের কারণে রাতে কুয়াশা আর দিনে গরম থাকলে ও শেষ রাতে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।
শীতের আগমনী বার্তায় লেপ-তোষকের কদরও বেড়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় সাপাহার বাজারে বিভিন্ন স্থানে লেপ-তোষকের দোকানের কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দোকান মালিকরা। নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল সাপাহার উপজেলায় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। এলাকার রীতি অনুযায়ী শীতের সময় অধিকাংশ পরিবারের বাবা মায়েরা তাদের মেয়ে জামাই বাড়িতে শীতের লেপ-তোষক সহ শীত নিবারণের পোশাক ও দেওয়া হয়ে থাকে তাই শীতের আগমনী বার্তায় বেড়েছে এসব লেপ- তোষক ও শীতবস্তের চাহিদা ।
লেপ-তোষক ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জানান, বছরের মাঝে কিছুটা অর্ডারী ছাড়া আমাদের লেপ-তোশক তেমন কেনাবেচা হয়না, আর শীত এলেই শুরু হয় ভালো বেচাকেনা, তাছাড়া টিকে থাকতে পারতাম না। শীতের প্রকোপ বাড়বে, মানুষ আরো বেশি করে লেপ-তোশক বানাবে, ভালো করে শীতের প্রস্তুতি নিবে এটাই তাদের চাওয়া। এরই মধ্যে ছোট বড় অসংখ্য অর্ডার আস্তে শুরু হয়েছে এবং আমাদের কারিগরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ- তোষক বালিশ তৈরিতে। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে ইতোমধ্যে শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু হয়ে গেছে বলে অন্যান্য বিক্রেতারা জানান।
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য লেপ-তোষক মজুদ করে রেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই শীত নামতে পারে।তাই বাজারে বাজারে লেপ – তোশক ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এদিকে কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা বাতাস ও হালকা কুয়াশা হওয়ায় দিনে সূর্যের আলো থাকলেও সন্ধ্যার পর হালকা কুয়াশা দেখা যাচ্ছে । অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে উপজেলায় শীত নামতে শুরু করেছে ।
আগাম শীতের কারণে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি গরম কাপড় ব্যবসায়ীদের। লোকজন নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য লেপ-তোষক সংগ্রহ করেছেন। লেপ-তোষক তৈরির অগ্রিম বায়নাও নিচ্ছেন তারা। নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দর্জির দোকান গুলোতে ও ব্যস্ততা বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র তৈরির পাশাপাশি কোট-প্যান্ট তৈরির চাহিদাও বেড়ে গেছে। এ দিকে খোলাবাজারে লেপ তোশক তৈরির তুলার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি শিমুল তুলা ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা ,গার্মেন্টস তুলা ৩৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, , ফোম তুলা থেকে ১৬০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, সাদা হুল তুলা ১০০ টাকা কেজি, সাদা তুলা ৫৫ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলার মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা শীতের প্রস্তুতি হিসেবে পুরান কাঁথা, কম্বলগুলো জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করেছেন। একটি লেপ বানাতে প্রকারভেদে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ফজলুল করিম জানান, গত বার ১৫০০ টাকায় যে লেপ বানানো হয়েছিল এবার সেটা ২২০০ টাকা খরচ পড়ছে। লেপ-তোষক ব্যবসায়ী কিশোর কুমার ভগদ জানান, তার দোকানে ১৫০ টি ছোট বড় আকারের লেপ তোশক স্টকে আছে। তিনি প্রতিদিন ভাগ ভাগ করে রোদে এগুলাকে শুকিয়ে রাখেন। তিনি আরো জানান, ধীরে ধীরে আমাদের বেচাকেনা বাড়ছে, তীব্র শীত পড়লে বেচাকেনা আরো বেশি বাড়বে।