বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতে তারল্যের জোগান কমিয়ে দেওয়া হলো। আজ সোমবার ১ জুলাই থেকে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আর প্রতি কার্যদিবসে বিশেষ সহায়তার আওতায় তারল্যের জোগান পাবে না। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে দুদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের তারল্যের জোগান দেবে। আগে প্রতি কার্যদিবসেই ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী তারল্যের জোগান দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়বে। তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হতে হবে।
এ বিষয়ে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা সোমবার থেকেই কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনার একটি আগাম পূর্বাভাস তৈরির শর্ত দিয়েছে। এর আলোকে ব্যাংকগুলোকে তারল্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিন তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া যাবে না। সপ্তাহে এক দিন দিতে হবে। আইএমএফের এই শর্ত বাস্তবায়ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে সরকারি খাতের বিভিন্ন বিল ও বন্ড কেনে। এগুলো থেকে পাওয়া অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ হিসাবে জোগান দেয়। কোনো কারণে ব্যাংক ফাইন্যান্স কোম্পানির জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ওইসব ট্রেজারি বিল বা বন্ড পুনরায় বিক্রি বা বন্ধক রেখে ঋণ দিতে পারে। একে বলা হয় রেপো। এর সুদের হার এখন নীতিনির্ধারণী সুদ। এ হার এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। দুই বছর আগে ছিল ৪ শতাংশ।
রেপোর মাধ্যমে আগে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই ঋণ দিতে পারত। গড়ে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত এক দিনে ঋণ দেওয়ার নজির রয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি সপ্তাহে একাধিকবার রেপো সুবিধা নিয়েছে।
এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাত থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদ দিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিনই রেপোর নিলাম করে থাকে। তারল্য সংকট থাকায় ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট বা এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে বেশি ধার দিতে পারত না। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই রেপোর আওতায় বেশি ধার দিত।
এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর সুবিধা প্রতিদিন না দিয়ে সপ্তাহে দুদিন অর্থাৎ সোমবার ও বুধবার দেবে। ফলে ব্যাংকগুলোকে ওই দুদিনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিতে হবে। এর বাইরে অন্য সময় জরুরি অর্থের প্রয়োজন হলে কলমানি মার্কেট বা অন্য ব্যাংক থেকে ধার করতে হবে। এছাড়া সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট থেকেও ধার করতে পারবে। তবে সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট সক্রিয় নয়। অন্য ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় কলমানিতে লেনদেন কমে গেছে। স্বল্প ও মেয়াদি ধারও কমেছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে তারল্য ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তহবিল ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষ হতে হবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ছোট ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক বড় অঙ্কের টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক সংকটে পড়বে। ফলে গ্রাহকদের বড় অঙ্কের টাকা তুলতে হলে আগাম নোটিশ দিতে হবে। এ বিধান চালু থাকলেও কোনো গ্রাহকই দেন না। এখন থেকে দিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি ঋণ শোধের সময় আরও ৬ মাস বাড়ল : কিছু খাতের আমদানির বিপরীতে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ডলার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে নেওয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সময় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এসব খাতের ঋণ ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধের শর্ত ছিল।
এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, শিল্পের কাঁচামাল, ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা কৃষি উপকরণ ও সারের বিপরীতে নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল। এ সীমা আরও বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর আগে এসব ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ছয় মাস থেকে এক বছর বাড়ানো হয়েছিল।
সূত্র জানায়, স্বল্পমেয়াদি এসব ঋণ পরিশোধের সীমা ছয় মাস বাড়ানোর ফলে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। তবে এসব ঋণের বিপরীতে বর্তমানে সুদের হার বেশ চড়া।
গড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। চড়া সুদের কারণে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে স্বল্পমেয়াদি ঋণের দায় আরও বাড়বে। গত বছর ও চলতি বছরের গত ৫ মাসে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ করে এর স্থিতি কমানো হয়েছিল। এখন কিছু খাতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে সুদসহ ঋণের স্থিতি বেড়ে যাবে। এসব ঋণ যখন আগামী বছরের জানুয়ারিতে পরিশোধ করা হবে তখন রিজার্ভের ওপর আবার চাপ বাড়বে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, রিজার্ভ এখন বাড়তে শুরু করেছে। আগামী জানুয়ারিতে গ্রস রিজার্ভ আরও বেড়ে যাবে। তখন ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না।