সবাই জয়ীদের গল্প বলতে পছন্দ করে। বাহবা পায় জয়ীরাই। তাদের নিয়েই লেখা হয় যতসব গল্প। হেরে যাওয়াদেও মনেও রাখে না কেউ। স্বাভাবিকভাবেই আফগানদের চেয়ে তাই এখন দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিয়েই প্রশংসা হচ্ছে বেশি। তবে হারাদেরও একটা গল্প থাকে। হারের পেছনেও একটা কারণ থাকে। আফগানদেরও তাই। আফগানদের এই হারের পেছনে যত না কারণ তাদের ব্যাটিং বিপর্যয় তার চেয়ে কম দায়ী নয় ভারত ও আইসিসি। আফগানদের বিদায়ের পর তাই কেউ কেউ ভারতের দিকেই আঙুল তুলছেন।
ভারতের প্রতি আইসিসির এক অন্যরকম টান। প্রতিটি আসরেই ভারতকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয় সব পরিকল্পনা। আর সেই পরিকল্পনার বলি হয় বাকি দলগুলো। এবার যেমনটা হয়েছে আফগানিস্তান। কিভাবে? সেই হিসেবে মেলায় চলুন।
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ভারত জেনে গিয়েছিল কোথায় সেমিফাইনাল খেলবে তারা। অথচ, তখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট শুরুই হয়নি। ভারত ছাড়া বাকিরা কেউ জানেও না সেমিফাইনালে উঠলে কোথায় হবে তাদের ম্যাচ। তাহলে ভারত কিভাবে জানল? এখানটাতেই লুকিয়ে আছে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর।
আরেকটা হিসেব মেলায় চলুন। সাধারণত যেই দল সবার পরে সেমিফাইনালে উঠে তারাই খেলে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। সে হিসেবে সবার পরে সেমি নিশ্চিত করা আফগানদেরই খেলার কথা সেমিফাইনালে। তবে এখানে দেখা গেল ব্যতিক্রম। ভারতের সময়কে প্রাধান্য দিয়ে ম্যাচের সূচি ঠিক করা হলো। আর ভেন্যু তো আগে থেকেই চূড়ান্ত হয়ে আছে। অথচ, সবার দিকে আইসিসির সমান নজর থাকলে আফগানিস্তানের ম্যাচটি ত্রিনিদাদে না হয়ে হতে পারত গায়ানায়, যেখানটাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে ভারত।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে দ্রুতই ত্রিনিদাদের দিকে রওনা হতে হয়েছে আফগানিস্তানকে। তবে শেষ পর্যন্ত সে পথেও বাধা হয়েছে ফ্লাইট জটিলতা। ৪ ঘণ্টা দেরিতে ফ্লাইট হওয়ায় ক্রিকেটারদের অনুশীলন সারতে হয়েছে সেন্ট ভিনসেন্টেই। ত্রিনিদাদে ম্যাচের আগে অনুশীলন করার সুযোগ পায়নি আফগানরা। এমন কি নিতে পারেনি পর্যাপ্ত বিশ্রামও। এসব নিয়ে অবশ্য কথা বলারও কেউ নেই আফগানদের।
তবে আফগানদের হয়ে আইসিসি ও ভারতের দিকে আঙুল তুলতে ছাড়েননি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার মাইকেল ভন। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘নিশ্চিতভাবেই সেমিফাইনাল ম্যাচটি গায়ানাতে হওয়া উচিত ছিল। তবে পুরো আসরটিই ভারতকে সুবিধা দেওয়ার জন্য করায় বাকিদের ওপর অন্যায় হয়েছে।’
আরেকটি পোস্টে আফগানদের ফ্লাইট জটিলতা নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ আফগানিস্তান সোমবার রাতে সেন্ট ভিনসেন্টে বিশ্বকাপের সেমির যোগ্যতা অর্জন করেছে ..আর মঙ্গলবার ত্রিনিদাদের ফ্লাইট ৪ ঘণ্টা বিলম্বিত। তাই অনুশীলন করার বা নতুন ভেন্যুতে অভ্যস্ত হওয়ার সময় নেই। খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মানের অভাব দেখে আমি ভয় পাচ্ছি।’
ম্যাচের আগে টসের সময় আফগান অধিনায়ক রশিদ খানও বলছিলেন, ম্যাচের আগে পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি তাদের। তখন এটাকে প্রথমবার সেমিতে খেলার রোমাঞ্চ হিসেবে ভাবা হলেও এখন মিলছে বহু উত্তর। যেখানে পরিষ্কার, আসরজুড়ে এমন দাপুটে ক্রিকেট খেলে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারানো আফগানরা কেন সেমিতে উঠে এমন ৫৬ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচটা হেরে যায়।