ঢাকা ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আমন ধান কাটার পর আলু চাষে লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আত্রাইয়ের কৃষকেরা কুমিল্লায় যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত উচ্চ আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি বেজমেন্ট ব্যবসায়ীদের ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ সানাউল হকের বিদায় সংবর্ধনা যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক অপসারণ দাবি জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে সুখবর জেলা প্রশাসককে গাছের চারা উপহার দিলেন ইউএনও টঙ্গীতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের ফাঁসীর দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের নামে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মমিন মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে লেক ভিউ আবাসিক হোটেলের নামে চলছে নারী জুয়া ও মাদক ব্যবসা

আগে ছিলেন কুলি, এখন কোটিপতি

বিদেশি গিফট আর পার্সেল প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবি জানায়, এই চক্রের মূলহোতা বিপ্লব লস্কর। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি গাড়িতে ও তার সঙ্গে সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতেন। কয়েকবছর আগে কুলি থাকলেও বর্তমানে প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছেন বিপ্লব লস্কর। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে তাদের রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে ডিবি। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ

তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। সম্পর্কের একটি পর্যায়ে দামি উপহার স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হীরা, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলেন।

এরপর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠান। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা টেলিফোন করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানান, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেন প্রতারিতরা। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানান, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইন ও অন্যান্য আইনে মামলা হবে।

অভিযানে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ডসহ আরও অনেক কিছু জব্দ করা হয়

প্রতারিত ব্যক্তিরা মামলার ভয়ে প্রতারকদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক আ্যকাউন্টে টাকা পাঠালে আবারও ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরও বড় অংকের টাকা দাবি করেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।

প্রতারকরা তাদের দাবি করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিতেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর (৩৪), তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনিক (৩২)।

ডিবি বলছে এই চক্রের মূলহোতা বিপ্লব লস্কর

গ্রেপ্তার বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

অভিযানের সময় গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আমন ধান কাটার পর আলু চাষে লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আত্রাইয়ের কৃষকেরা

আগে ছিলেন কুলি, এখন কোটিপতি

আপডেট সময় ১০:২৭:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিদেশি গিফট আর পার্সেল প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবি জানায়, এই চক্রের মূলহোতা বিপ্লব লস্কর। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি গাড়িতে ও তার সঙ্গে সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতেন। কয়েকবছর আগে কুলি থাকলেও বর্তমানে প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছেন বিপ্লব লস্কর। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে তাদের রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে ডিবি। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ

তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। সম্পর্কের একটি পর্যায়ে দামি উপহার স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হীরা, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলেন।

এরপর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠান। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা টেলিফোন করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানান, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেন প্রতারিতরা। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানান, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইন ও অন্যান্য আইনে মামলা হবে।

অভিযানে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ডসহ আরও অনেক কিছু জব্দ করা হয়

প্রতারিত ব্যক্তিরা মামলার ভয়ে প্রতারকদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক আ্যকাউন্টে টাকা পাঠালে আবারও ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরও বড় অংকের টাকা দাবি করেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।

প্রতারকরা তাদের দাবি করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিতেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর (৩৪), তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনিক (৩২)।

ডিবি বলছে এই চক্রের মূলহোতা বিপ্লব লস্কর

গ্রেপ্তার বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

অভিযানের সময় গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।